ওঠ রে চাষি

চাষি রে! তোর মুখে হাসি কই?
তোর গো-রাখা রাখালের হাতে বাঁশের বাঁশি কই?
তোর খালের ঘাটে পাট পচে ভাই পাহাড়-প্রমাণ হয়ে,
তোর মাঠের ধানে সোনা রং-এর বান যেন যায় বয়ে,
সে পাট ওঠে কোন লাটে?
সে ধান ওঠে কোন হাটে?
উঠানে তোর শূন্য মরাই মরার মতন পড়ে–
স্বামীহারা কন্যা যেন কাঁদছে বাপের ঘরে।
তোর গাঁয়ের মাঠে রবি-ফসলছবির মতন লাগে,
তোর ছাওয়াল কেন খাওয়ার বেলা নুন লঙ্কা মাগে?
তোর
তরকারিতেও সরকারি কোন ট্যাক্স বুঝি বসে!
তোর ইক্ষু এত মিষ্টি কি হয় চক্ষুজলের রসে?
তোর গাইগুলোকে নিঙড়ে কারা দুধ খেয়েছে ভাই?
তোর দুধের ভাঁড়ে ভাতের মাড়ের ফেন – হায়, তাও নাই!

তোর ছোটো খোকার জুড়িয়েছে জ্বর ঘুমিয়ে গোরস্তানে,
সে দিদির আঁচল ধরে বুঝি গোরের পানে টানে।
বিকার-ঘোরে দিদি তাহার ডাকছে ছোটো ভায়ে,
দুধের বদল ঝিনুক দিয়ে আমানি দেয় মায়ে।
কবর দিয়ে সবর করে লাঙল নিয়ে কাঁধে,
মাঠের কাদাপথে যেতে আব্বা তাহার কাঁদে।
চারদিকে তার মাঠ-ভরা ধান আকাশ-ভরা খুশি,
লাল হয়েছে দিগন্ত আজ চাষার রক্ত শুষি!
মাঠে মাঠে ধান থই থই, পণ্যে ভরা হাট,
ঘাটে ঘাটে নৌকা-বোঝাই তারই মাঠের পাট।

কে খায় এই মাঠের ফসল, কোন সে পঙ্গপাল?
আনন্দের এই হাটে কেন তাহার হাড়ির হাল?
কেন তাহার ঘরের খোকা গোরের বুকে যায়?
গোঠে গোঠে চরে ধেনু, দুধ নাহি সে পায়!
ওরে চাষা! বাঁচার আশা গেছে অনেক আগে
গোরের পাশের ঘরে কাঁদা আজও ভালো লাগে?
জাগে না কি শুকনো হাড়ে বজ্র-জ্বালা তোর?
চোখ বুজে তুই দেখবি রে আর, করবে চুরি চোর?
বাঁশের লাঠি পাঁচনি তোর, তাও কি হাতে নাই?
না থাক তোর দেহে রক্ত, হাড় কটা তোর চাই।
তোর হাঁড়ির ভাতে দিনে রাতে যে দস্যু দেয় হাত,
তোর রক্ত শুষে হল বণিক, হল ধনীর জাত
তাদের হাড়ে ঘুণ ধরাবে তোদেরই এই হাড়
তোর পাঁজরার ওই হাড় হবে ভাই যুদ্ধের তলোয়ার।
তোরই মাঠে পানি দিতে আল্লাজি দেন মেঘ,
তোরই গাছে ফুল ফোটাতে দেন বাতাসের বেগ,
তোরই ফসল ফলাতে ভাই চন্দ্র সূর্য উঠে,
আল্লার সেই দান আজি কি দানব খাবে লুটে?
তেমনি আকাশ ফর্সা আছে, ভরসা শুধু নাই,
তেমনি খোদার রহম ঝরে, আমরা নাহি পাই।
হাত তুলে তুই চা দেখি ভাই, অমনি পাবি বল,
তোর ধানে তোর ভরবে খামার নড়বে খোদার কল!

কিশোর রবি

হে চিরকিশোর কবি রবীন্দ্র, কোন রসলোক হতে
আনন্দ-বেণু হাতে লয়ে এলে খেলিতে ধূলির পথে?
কোন সে রাখাল রাজার লক্ষ ধেনু তুমি চুরি করে
বিলাইয়া দিলে রস-তৃষাতুরা পৃথিবীর ঘরে ঘরে।
কত যে কথায় কাহিনিতে গানে সুরে কবিতায় তব
সেই আনন্দ-গোলোকের ধেনু রূপ নিল অভিনব।
ভুলাইলে জরা, ভুলালে মৃত্যু, অসুন্দরের ভয়
শিখালে পরম সুন্দর চিরকিশোর সে প্রেমময়।
নিত্য কিশোর আত্মার তুমি অন্ধ বিবর হতে
হে অভয়দাতা টানিয়া আনিলে দিব্য আলোর পথে।

তোমার এ রস পান করিবার অধিকার পেল যারা
তারাই কিশোর, তোমাতে দেখেছে নিত্য কিশোরে তারা
ওগো ও পরম কিশোরের সখা, জানি তুমি দিতে পার
নিত্য অভয়, অনন্ত শ্রী, দিব্য শক্তি আরও।
কোথা সে কৃপণ বিধাতার মধু-রসভাণ্ডার আছে
তুমি জান তাহা, তাহার গোপন চাবি আছে তব কাছে।
ওগো ও পরম শক্তিমানের জ্যোতির্দীপ্ত রবি
সেই বিধাতার ভাণ্ডার লুটে দিয়ে যাও হেথা সবই।
যারা জড়, যারা নুড়ির মতন নিত্য রসপ্রবাহে
ডুবিয়া থেকেও পাইল না রস, তারা তব কৃপা চাহে।
এই ক্ষুধাতুর, উপবাসী চির-নিপীড়িত জনগণে
ক্লৈব্য-ভীতির গুহা হতে আনো আনন্দ-নন্দনে।
ঊর্ধ্বের যারা তাহারা পাইল তোমার পরম দান
নিম্নের যারা, তাদের এবার করো গো পরিত্রাণ।
মরে আছে যারা তারা আজ তব অমৃত নাহি পায়
তোমার রুদ্র আঘাতে এদের ঘুম যেন টুটে যায়।
শুধু বেণু আর বীণা লয়ে তুমি আস নাই ধরা পরে
দেখেছি শঙ্খ চক্র বিষাণ বজ্র তোমার করে।

ওগো ও পরম রুদ্র কিশোর! তোমার যাবার আগে
নির্জিত নিদ্রিত এ ভারত যেন গো বহ্নিরাগে
রঞ্জিত হয়ে ওঠে! অসুরের ভীতি যেন চলে যায়।
ওগো সংহার-সুন্দর, পরো প্রলয়-নূপুর পায়!
তোমার যে মহাশক্তি কেবল জ্ঞান-বিলাসীর ঘরে
অনন্ত রূপে রসে আনন্দে নিত্য পড়িছে ঝরে,
গৃহহীন অগণন ভিক্ষুক ক্ষুধাতুর তব দ্বারে
ভিক্ষা চাহিছে, দয়া করো দয়া করো বলি বারে বারে।
বিলাসীর তরে দিয়াছ অনেক, হে কিশোর-সুন্দর,
এবার পঙ্গু-অঙ্গে পরশ করুক তোমার কর।
জানি জানি তব দক্ষিণ করে অনন্ত শ্রী আছে,
দক্ষিণা দাও বলে তাই ওরা এসেছে তোমার কাছে।

হে রবি, তোমারে নারায়ণরূপে এ ভারত পূজা করে,
যাইবার আগে, জাগাইয়া তুমি যাও সেই রূপ ধরে।
দৈত্য-মুক্ত ব্রজের রাখাল কিশোরেরা ভয়হীন,
খেলুক সর্ব-অভাবমুক্ত হয়ে ব্রজে নিশিদিন।
হউক শান্তিনিকেতন এই অশান্তিময় ধরা,
চিরতরে দূর হোক তব বরে নিরাশা-ক্লৈব্য-জরা।

কৃষকের ঈদ

বেলাল! বেলাল! হেলাল উঠেছে পশ্চিমে আশমানে,
লুকাইয়া আছ লজ্জায় কোন মরুর গোরস্তানে!
হেরো ঈদ্গাহে চলিছে কৃষক যেন প্রেত-কঙ্কাল
কশাইখানায় যাইতে দেখেছ শীর্ণ গোরুর পাল?
রোজা এফতার করেছে কৃষক অশ্রু-সলিলে হায়,
বেলাল! তোমার কন্ঠে বুঝি গো আজান থামিয়া যায়!
থালা ঘটি বাটি বাঁধা দিয়ে হেরো চলিয়াছে ঈদ্গাহে,
তির-খাওয়া বুক, ঋণে-বাঁধা-শির, লুটাতে খোদার রাহে।

জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নিদ
মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?
একটি বিন্দু দুধ নাহি পেয়ে যে খোকা মরিল তার
উঠেছে ঈদের চাঁদ হয়ে কি সে শিশু-পাঁজরের হাড়?
আশমান-জোড়া কাল কাফনের আবরণ যেন টুটে
এক ফালি চাঁদ ফুটে আছে, মৃত শিশুর অধর-পুটে।
কৃষকের ঈদ! ঈদ্গাহে চলে জানাজা পড়িতে তার,
যত তকবির শোনে, বুকে তার তত উঠে হাহাকার!
মরিয়াছে খোকা, কন্যা মরিছে, মৃত্যু-বন্যা আসে
এজিদের সেনা ঘুরিছে মক্কা-মসজিদে আশেপাশে।
কোথায় ইমাম? কোন সে খোৎবা পড়িবে আজিকে ঈদে?
চারিদিকে তব মুর্দার লাশ, তারই মাঝে চোখে বিঁধে
জরির পোশাকে শরীর ঢাকিয়া ধনীরা এসেছে সেথা,
এই ঈদ্গাহে তুমি কি ইমাম, তুমি কি এদেরই নেতা?
নিঙাড়ি কোরান হাদিস ও ফেকা, এই মৃতদের মুখে
অমৃত কখনও দিয়াছ কি তুমি? হাত দিয়ে বলো বুকে।
নামাজ পড়েছ, পড়েছ কোরান, রোজাও রেখেছ জানি,
হায় তোতাপাখি! শক্তি দিতে কি পেরেছ একটুখানি?
ফল বহিয়াছ, পাওনিকো রস, হায় রে ফলের ঝুড়ি,
লক্ষ বছর ঝরনায় ডুবে রস পায় নাকো নুড়ি!

আল্লা-তত্ত্ব জেনেছ কি, যিনি সর্বশক্তিমান?
শক্তি পেল না জীবনে যে জন, সে নহে মুসলমান!
ইমান! ইমান! বলো রাতদিন, ইমান কি এত সোজা?
ইমানদার হইয়া কি কেহ বহে শয়তানি বোঝা?
শোনো মিথ্যুক! এই দুনিয়ায় পূর্ণ যার ইমান,
শক্তিধর সে টলাইতে পারে ইঙ্গিতে আশমান!
আল্লার নাম লইয়াছ শুধু, বোঝোনিকো আল্লারে।
নিজ যে অন্ধ সে কি অন্যেরে আলোকে লইতে পারে?
নিজে যে স্বাধীন হইল না সে স্বাধীনতা দেবে কাকে?
মধু দেবে সে কি মানুষ, যাহার মধু নাই মৌচাকে?

কোথা সে শক্তি-সিদ্ধ ইমাম, প্রতি পদাঘাতে যার
আবে-জমজম শক্তি-উৎস বাহিরায় অনিবার?
আপনি শক্তি লভেনি যে জন, হায় সে শক্তিহীন
হয়েছে ইমাম, তাহারই খোৎবা শুনিতেছি নিশিদিন!
দীন কাঙালের ঘরে ঘরে আজ দেবে যে নব তাকিদ
কোথা সে মহান শক্তি-সাধক আনিবে যে পুন ঈদ?
ছিনিয়া আনিবে আশমান থেকে ঈদের চাঁদের হাসি
ফুরাবে না কভু যে হাসি জীবনে, কখনও হবে না বাসি!
সমাধির মাঝে গণিতেছি দিন, আসিবেন তিনি কবে?
রোজা এফতার করিব সকলে, সেই দিন ঈদ হবে।

কেন জাগাইলি তোরা

কেন ডাক দিলি আমারে অকালে কেন জাগাইলি তোরা?
এখনও অরুণ হয়নি উদয়, তিমিররাত্রি ঘোরা!
কেন জাগাইলি তোরা?
যে আশ্বাসের বাণী শুনাইয়া পড়েছিনু ঘুমাইয়া
বনস্পতি হইয়া সে বীজ পড়েনি কি ছড়াইয়া–
দিগদিগন্তে প্রসারিয়া শাখা? বাঁধেনি সেথায় নীড়,
প্রাণ-চঞ্চল বিহগের দল করেনি সেথায় ভিড়?
যেখানে ছিল রে যত বন্ধন যত বাধা ভয় ভীতি
সেখানে তোদেরে লইয়া যে আমি আঘাত হেনেছি নিতি।
ভাঙিতে পারিনি, খুলিতে পারিনি দুয়ার, তবুও জানি–
সেই জড়ত্ব-ভরা কারাগারে ভীষণ আঘাত হানি–
ভিত্তি তাহার টলায়ে দিয়েছি, – আশা ছিল মোর মনে
অনাগত তোরা ভাঙিবি তাহারে সে কোন শুভক্ষণে॥

মহা সমাধির দিকহারা লোকে জানি না কোথায় ছিনু
আমারে খুঁজিতে সহসা সে কোন শক্তিরে পরশিনু –
সেই সে পরম শক্তিরে লয়ে আসিবার ছিল সাধ –
যে শক্তি লভি এল দুনিয়ায় প্রথম ঈদের চাঁদ –
তারই মাঝে কেন ঢাক-ঢোল লয়ে এলি সমাধির পাশে
ভাঙাইলি ঘুম? চাঁদ যে এখনও ওঠেনি নীল আকাশে।
ওরে তোরা থাম! শক্তি কাহারও নহে রে ইচ্ছাধীন –
রাত না পোহাতে চিৎকার করি আনিবি কি তোরা দিন?
এতদিন মার খেয়েছিস তোরা – তবুও আছিস বেঁচে,
মারের যাতনা ভুলিবি কি তায় ঢাক-ঢোল নিয়ে নেচে?

সূর্য-উদয় দেখেছিস কেউ – শান্ত প্রভাত বেলা?
উদার নীরব উদয় তাহার – নাই মাতামাতি খেলা;
তত শান্ত সে – যত সে তাহার বিপুল অভ্যুদয়,
তত সে পরম মৌনী যত সে পেয়েছে পরম অভয়!
দিকহারা ওই আকাশের পানে দেখ দেখ তোরা চেয়ে,
কেমন শান্ত ধ্রুব হয়ে আছে কোটি গ্রহ তারা পেয়ে।
ওই আকাশের প্রসাদে যে তোরা পাস বৃষ্টির জল
ওই আকাশেই ওঠে ধ্রুবতারা ভাস্কর নির্মল।
ওই আকাশেই ঝড় ওঠে – তবু শান্ত সে চিরদিন–
ওই আকাশের বুক চিরে আসে – বজ্র কুন্ঠাহীন!
ওই আকাশেই তকবির ওঠে – মহা আজানের ধ্বনি
ওই আকাশের পারে বাজে চির অভয়ের খঞ্জনি।
জানি ওরে মোর প্রিয়তম সখা বন্ধু তরুণ দল
তোদেরই ডাকে যে আসন আমার টলিতেছে টলমল!
তোদেরই ডাকে যে নামিছে পরম শক্তি, পরম জ্যোতি,
পরমামৃতে পূর্ণ হইবে মহাশূন্যের ক্ষতি।
‘মাহে রমজান’ এসেছে যখন, আসিবে ‘শবে কদর’,
নামিবে তাঁহার রহমত এই ধূলির ধরার পর।
এই উপবাসী আত্মা – এই যে উপবাসী জনগণ,
চিরকাল রোজা রাখিবে না – আসে শুভ ‘এফতার’ ক্ষণ!

আমি দেখিয়াছি – আসিছে তোদের উৎসব-ঈদ-চাঁদ, –
ওরে উপবাসী ডাক তাঁরে ডাক, তাঁর নাম লয়ে কাঁদ।
আমি নয় ওরে আমি নয় – ‘তিনি’ যদি চান ওরে তবে
সূর্য উঠিবে, আমার সহিত সবার প্রভাত হবে।

চাঁদিনি রাতে

কোদালে মেঘের মউজ উঠেছে গগনের নীল গাঙে,
হাবুডুবু খায় তারা-বুদ্‌বুদ, জোছনা সোনায় রাঙে।
তৃতীয়া চাঁদের ‘সাম্পানে’ চড়ি চলিছে আকাশ-প্রিয়া,
আকাশ-দরিয়া উতলা হল গো পুতলায় বুকে নিয়া।
নীলিম-প্রিয়ার নীলা গুল-রুখ নাজুক নেকাবে ঢাকা
দেখা যায় ওই নতুন চাঁদের কালোতে আবছা আঁকা।
সপ্তর্ষির তারা-পালঙ্কে ঘুমায় আকাশ-রানি,
‘লায়লা’-সেহেলি দিয়ে গেছে চুপে কুহেলি-মশারি টানি।
নীহার-নেটের ঝাপসা মশারি, যেন ‘বর্ডার’ তারই
দিক্‌-চক্রের ছায়া-ঘন ওই সবুজ তরুর সারি।

সাতাশ-তারার ফুল-তোড় হাতে আকাশে নিশুতি রাতে
গোপনে আসিয়া তারা-পালঙ্কে শুইল প্রিয়ার সাথে।
‘উঁহু উঁহু’ করি কাঁচা ঘুম হতে জেগে ওঠে নীলা হুরি,
লুকায়ে দেখে তা ‘চোখ গেল’ বলে হাসিছে পাপিয়া ছুঁড়ি।
‘মঙ্গল’ তারা মঙ্গল-দীপ জ্বালিয়া প্র্রহর জাগে,
ঝিকিমিকি করে মাঝে মাঝে, বুঝি বধূর নিশাস লাগে।

উল্কা-জ্বালার সন্ধানী আলো লইয়া আকাশ-দ্বারী
‘কাল-পুরুষ’ সে জাগি বিনিদ্র করে ফেরে পায়চারি।
সেহেলিরা রাতে পালায়ে এসেছে উপবনে কোন আশে,
‘হেথা হোথা ছোটে, পিকের কন্ঠে ফিক ফিক করে হাসে।
আবেগে সোহাগে আকাশ-প্রিয়ার চিবুক বাহিয়া ও কি
শিশিরের রূপে ঘর্মবিন্দু ঝরে ঝরে পড়ে, সখী!
নবমী চাঁদের ‘সংসারে’ ও কে গো চাঁদিনি-শিরাজি ঢালি
বধূর অধরে ধরিয়া কহিছে, ‘তহুরা পিয়ো লো আলি!’
কার কথা ভেবে তারা-মজলিসে দূরে একাকিনী সাকি
চাঁদের সংসারে কলঙ্ক-ফুল আনমনে যায় আঁকি!

মস্তানা শ্যামা দধিয়াল টানে বায়ু-বেয়ালায় মিড়,
ফর্‌হাদ-শিরী লায়লি-মজনু মগজে করেছে ভিড়!
ছুটিতেছে গাড়ি, ছায়াবাজি-সম কত কথা ওঠে মনে,
দিশাহারা-সম ছোটে খ্যাপা মন জলে থলে নভে বনে!
এলোকেশে মোর জড়ায়ে চরণ কোন বিরহিণী কাঁদে,
যত প্রিয়-হারা আমারে কেন গো বাহু-বন্ধনে বাঁধে!
নিখিল বিরহী ফরিয়াদ করে আমার বুকের মাঝে,
আকাশে-বাতাসে তাদেরই মিলন তাদেরই বিরহ বাজে।

আনমনা সাকি, শূন্য আমার হৃদয়-পেয়ালা কোণে
কলঙ্ক-ফুল আনমনে সখী লিখো মুছো ক্ষণে ক্ষণে।

চির-জনমের প্রিয়া

আরও কতদিন বাকি?
বক্ষে পাওয়ার আগে বুঝি, হায়, নিভে যায় মোর আঁখি!
অনন্তলোকে অনন্তরূপে কেঁদেছি তোমার লাগি
সেই আঁখিগুলি তারা হয়ে আজও আকাশে রয়েছে জাগি।
চির-জনমের প্রিয়া মোর! চেয়ে দেখো নীলাকাশে
ভ্রমরের মতো ঝাঁক বেঁধে কোটি গ্রহ-তারা ছুটে আসে
তোমার শ্রীমুখ-কমলের পানে! ওরা যে ভুলিতে নারে
আজিও খুঁজিয়া ফিরিছে তোমায় অসীম অন্ধকারে!
বারে বারে মোর জীবন-প্রদীপ নিভিয়া গিয়াছে, প্রিয়া।
নেভেনি আমার নয়ন, তোমারে দেখিবার আশা নিয়া।
আমি মরিয়াছি, মরেনি নয়ন ; দেখো প্রিয়তমা চাহি
তব নাম লয়ে ওরা কাঁদে আজও – ওদের নিদ্রা নাহি।
ওরা তারা নয়, অভিশপ্ত এ বিরহীর ওরা আঁখি,
মহাব্যোম জুড়ে উড়িয়া বেড়ায় আশ্রয়হারা পাখি!
আঁখির আমার ভাগ্য ভালো গো, পেয়েছিল আঁখি-জল,
তাই আজও তারা অমর হইয়া ভরে আছে নভোতল!
বাহু দিয়া মোর কন্ঠ যদি গো জড়াইতে কোনদিন,
আঁখির মতন এই দেহ মোর হইত মৃত্যুহীন!
তোমার অধর নিঙাড়িয়া মধু পান করিতাম যদি,
আমার কাব্যে, সংগীতে, সুরে বহিত অমৃত-নদী!

* * *
ফুল কেন এত ভালো লাগে তব, কারণ জান কি তার?
ওরা যে আমার কোটি জনমের ছিন্ন অশ্রুহার!
যত লোকে আমি তোমার বিরহে ফেলেছি অশ্রুজল,
ফুল হয়ে সেই অশ্রু – ছুঁইতে চাহে তব পদতল!
অশ্রুতে মোর গভীর গোপন অভিমান ছিল হায়,
তাই অভিমানে তোমারে ছুঁইয়া ফুল শুকাইয়া যায়!
ঝরা ফুল লয়ে বক্ষে জড়ায়ে ধরেছ কি কোনোদিন?
এত সুন্দর, তবু কেন ফুল এমন ব্যথা-মলিন?
তব মুখ পানে চেয়ে থাকে ফুল মোর অশ্রুর মতো;
তোমারে হেরিয়া উহাদের গত জনমের স্মৃতি যত
জেগে ওঠে প্রাণে! তাই অভিমানে ঝরে সে সন্ধ্যাবেলা,
ভুলিতে পারে না, যুগে যুগে তুমি হানিয়াছ যত হেলা!

* * *
পূর্ণিমা চাঁদ দেখেছ? দেখেছ তার বুকে কালো দাগ!
ওর বুকে ক্ষত-চিহ্ন এঁকেছে, জান, কার অনুরাগ?
কোটি জনমের অপূর্ণ মোর সাধ-আশা জমে জমে
চাঁদ হয়ে হায় ভাসিয়া বেড়ায় নিরাশার মহাব্যোমে!
কলঙ্ক হয়ে বুকে দোলে তার তোমার স্মৃতির ছায়া,
এত জ্যোৎস্নায় ঢাকিতে পারেনি তোমার মধু মায়া!
কোন সে অতীতে মহাসিন্ধুর মন্থন শেষে, প্রিয়া,
বেদনা-সাগরে চাঁদ হয়ে উঠে তোমারে বক্ষে নিয়া!
পালাইতে ছিনু সুদূর শূন্যে! নিঠুর বিধাতা পথে
তোমারে ছিনিয়া লয়ে গেল হায় আমার বক্ষ হতে!
তুমি চলে গেলে, বুকে রয়ে গেল তব অঙ্গের ছাপ,
শূন্য বক্ষে শূন্যে ঘুরি গো, চাঁদ নয় অভিশাপ!

* * *
প্রাণহীন দেহ আকাশে ফেলিয়া ধরণিতে আসি ফিরে,
তোমারে খুঁজিয়া বেড়াই গোমতী পদ্মা যমুনা তীরে!
চিনি যবে হায় গোধূলিবেলায় শুভ লগ্নের ক্ষণে,
বাঁশি না বাজিতে লগ্ন ফুরায়, আঁধার ঘনায় বনে!
তুমি চলো যাও ভবনের বধূ, আমি যাই বনপথে,
মোর জীবনের মরা ফুল তুলে দিই মরণের রথে!

* * *
শ্রাবণ-নিশীথে ঝড়ের কাঁদন শুনেছ কি কোনোদিন?
কার অশান্ত অসহ রোদন আজও শ্রান্তহীন
দিগ্‌দিগন্তে দস্যুর মতো হানা দিয়ে ফেরে হায়!
ভবনে ভবনে কার বুক থেকে কাহারে ছিনিতে চায়? –
এমনই সেদিন উঠেছিল ঝড় মহাপ্রলয়ের বেশে
যেদিন আমারে পথে ফেলে গেলে চলিয়া নিরুদ্দেশে!
প্রবল হস্তে নাড়া দিয়া আমি অসীম শূন্য নভে
কৃষ্ণ মেঘের ঢেউ তুলেছিনু ; গর্জিয়া ভীম রবে
বিশ্বের ঘুম ভেঙে দিয়েছিনু! যেখানে যে ছিল সুখে
যেখানে প্রিয় ও প্রিয়া ছিল – সেথা বজ্র হেনেছি বুকে!
ঝড়ের বাতাসে আমার নিশাসে নড়িল না মহাকাল,
মোর ধূমায়িত অশ্রু-বাষ্প রচিল জলদ-জাল।
অঝোর ধারায় ঝরিনু ধরায় খুঁজিলাম বনভূমি
ফুরাইল আয়ু, থির হল বায়ু, সাড়া দিলে নাকো তুমি!
আমার ক্ষুধিত সেই প্রেম আজও বিজলি-প্রদীপ জ্বেলে
অন্ধ আকাশ হাতড়িয়া ফেরে ঝঞ্ঝার পাখা মেলে!
তুমি বেঁচে গেছ, অতীতের স্মৃতি ভুলিয়াছ একেবারে,
নইলে ভুলিয়া ভয় – ছুটে যেতে মরণের অভিসারে!

* * *
শান্ত হইনু প্রলয়ের ঝড়, মলয়-সমীর রূপে
যেখানে দেখেছি ফুল সেইখানে ছুটে গেছি চুপে চুপে।
পৃথিবীতে যত ফুটিয়াছে ফুল সকল ফুলের মুখে
তব মুখখানি খুঁজিয়া ফিরেছি – না পেয়ে উগ্র দুখে
ঝরায়েছি ফুল ধরার ধুলায়! জরা ফুল-রেণু মেখে
উদাসীন হাওয়া ফিরিয়াছি পথে তব প্রিয় নাম ডেকে!
সদ্য-স্নাতা এল কুন্তল শুকাইতে যবে তুমি
সেই এলোকেশ বক্ষে জড়ায়ে গোপনে যেতাম চুমি!
তোমার কেশের সুরভি লইয়া দিয়াছি ফুলের বুকে
আঁচল ছুঁইয়া মূর্ছিত হয়ে পড়েছি পরম সুখে!
তোমার মুখের মদির সুরভি পিইয়া নেশায় মাতি
মহুয়া বকুল বনে কাটায়েছি চৈতি চাঁদিনি রাতি।
তব হাত দুটি লতায়ে রহিত পুষ্পিতা লতা সম
কত সাধ যেত যদি গো জড়াত ও লতা কন্ঠে মম!
তব কঙ্কণ চুড়ি লয়ে আমি খেলেছি, দেখনি তুমি,
চলিতে মাথার কাঁটা পড়ে যেত, আমি তুলিতাম চুমি!
চোরের মতন চুরি করিয়াছি তব কবরীর ফুল!–
সে সব অতীত জনমের কথা – আজ মনে হয় ভুল!

* * *
আজ মুখপানে চেয়ে দেখি, তব মুখে সেই মধু আছে,
আজও বিরহের ছায়া দোলে তব চোখের কোলের কাছে!
ডাগর নয়নে আজও পড়ে সেই সাগর জলের ছায়া,
তনুর অণুতে অণুতে আজিও সেই অপরূপ মায়া!
আজও মোর পানে চাহ যবে, বুকে ঘন শিহরন জাগে,
আমার হৃদয়ে কোটি শতদল ফুটে ওঠে অনুরাগে
আজও যবে চাও, আমার ভুবনে ওঠে রোদনের বাণী,
কানাকানি করে চাঁদে ও তারাতে –‘জানি গো তোমারে জানি!’
রুধিরে আমার নূপুর বাজে গো, কহে – ‘প্রিয়া, চিনি, চিনি’!
একদিন ছিলে প্রেমের গোলোকে মোর প্রেম-গরবিনি।
ছিল একদিন – আমার সোহাগে গলিয়া যমুনা হতে
নিবেদিত নীল পদ্মের মতো ভাসিতে প্রেমের স্রোতে!
ভাসিতে ভাসিতে আসিয়াছ আজ এই পৃথিবীর ঘাটে,
আমি পুষ্প-বিহীন শূন্যবৃন্ত কাঁটা লয়ে দিন কাটে!

* * *
মনে করো, যেন সে কোন জনমে বিদায় সন্ধ্যাবেলা।
তুমি রয়ে গেলে এপারে, ভাসিল ওপারে আমার ভেলা!
সেই নদীজলে পড়ে গেলে তুমি ফুলের মতন ঝরে,
কেঁদে বলেছিলে যাবার বেলায় – ‘মনে কি পড়িবে মোরে,
জনমিবে যবে আর কি আঁকিবে হৃদয়ে আমার ছবি।’
আমি বলেছিনু, ‘উত্তর দেবে আর জনমের কবি!’
সেই বিরহীর প্রতিশ্রুতি গো আসিয়াছি কবি হয়ে,
ছবি আঁকি তব আমার বুকের রক্ত ও আয়ু লয়ে!
ঝাঁকে ঝাঁকে মোর কথার কপোত দিকে দিকে যায় ছুটে
হংস-দূতীর মতো মোর লিপি ধরিয়া চঞ্চুপুটে!
হারায়ে গিয়াছে শূন্যে তাহারা ফিরিয়া আসেনি আর,
তাই সুরে সুরে বিধূনিত করি অসীম অন্ধকার!
ভবনে ভবনে সেই সুর প্রতি কন্ঠ জড়ায়ে কহে–
‘যাহারে খুঁজিয়া কাঁদি নিশিদিন, জান সে কোথায় রহে?’
তারা মরে, ফুল ঝরে সেই সুরে, তুমি শুধু কাঁদিলে না
আমার সুরের পালক কুড়ায়ে কবরীতে বাঁধিলে না!
আমার সুরের ইন্দ্রাণী ওগো! ব্যথার সাগর-তলে–
দেখেছি কি কত না-বলা কথার মুক্তা মানিক জ্বলে?
তোমার কন্ঠে মালা হয়ে তারা মুক্তি লভিতে চায়
গত জনমের অস্থি আমার নিদারুণ বেদনায়
মুক্তা হয়েছে; অঞ্জলি দিতে তাই গাঁথি গানে গানে
চরণে দলিয়া ফেলে দিয়ো পথে যদি তা বেদনা হানে।
মনে করো, দুঃস্বপ্নের মতো আমি এসেছিনু রাতে
বহুবার গেছ ভুলিয়া এবারও ভুলিয়া যাইয়ো প্রাতে
কহিলাম যত কথা প্রিয়তমা মনে কোরো সব মায়া,
সাহারা মরুর বুকে পড়ে না গো শীতল মেঘের ছায়া!
মরুভূর তৃষা মিটাইবে তুমি কোথা পাবে এত জল?
বাঁচিয়া থাকুক আমার রৌদ্রদগ্ধ আকাশতল!

দুর্বার যৌবন

ওরে অশান্ত দুর্বার যৌবন!
পরাল কে তোরে জ্ঞানের মুখোশ সংযম-আবরণ?
ভিতরের ভীতি ঢাকিতে রে যত নীতি-বিলাসীরা ছলে
উদ্ধত যৌবন-শক্তিরে সংযত হতে বলে।
ভাবে, ভাঙনের গদা লয়ে যদি যৌবন মাতে রণে,
গুড়ুক টানিতে পারিবে না বসে সোনার সিংহাসনে!
ওরে দুরন্ত! উড়ন্ত তোর পাখা কে বাঁধিল বল?
দীপ্ত জ্যোতির্শিখায় ঢাকিল শীর্ণ জরাঞ্চল?
ওরে নির্ভীক! ভিখ-মাগা যত পঙ্গুর দলে ভিড়ে –
আঁধার নিঙাড়ি আলো আনিত যে – সে রহিল বাঁধা নীড়ে!
যাহাদের মেরুদণ্ডে লেগেছে মেরুর হিমেল হাওয়া,
যাহাদের প্রাণ শক্তিবিহীন কঠিন তুহিনে ছাওয়া
তাদের হুকুমে প্রাণের বিপুল বন্যা রাখিলি রুখে?
মরুর সিংহ মার খায় সার্কাসি পিঞ্জরে ঢুকে।

সৃষ্টির কথা ভাবে যারা আগে সংহারে করে ভয়,
যুগে যুগে সংহারের আঘাতে তাদের হয়েছে লয়।
কাঠ না পুড়ায়ে আগুন জ্বালাবে বলে কোন অজ্ঞান?
বনস্পতির ছায়া পাবে বীজ নাহি দিলে তার প্রাণ!
তলোয়ার রেখে খাপে এরা, ঘোড়া রাখিয়া আস্তাবলে
রণজয়ী হবে দম্ভবিহীন বৈদান্তিকী ছলে!
প্রাণ-প্রবাহের প্রবল-বন্যা বেগে খরস্রোতা নদী
ভেঙেছে দু-কূল, সাথে সাথে ফুল ফুটায়েছে নিরবধি।
জলধির মহা-তৃষ্ণা জাগিছে যে বিপুল নদীস্রোতে,
সে কি দেখে, তার স্রোতে কি ডুবিল, কে মরিল তার পথে?
মানে না বারণ, ভরা যৌবন-শক্তিপ্রবাহ ধায়
আনন্দ তার মরণ-ছন্দে কূলে কূলে উথলায়।
জানে না সে ঘর আত্মীয় পর, চলাই ধর্ম তার
দেখে না তাহার প্রাণতরঙ্গে ডুবিল তরণি কার।
বণিকের দুটো জাহাজ ডুবিবে, তা বলে সিন্ধু-ঢেউ
শান্ত হইয়া ঘুমায়ে রহিবে – শুনিয়াছ কভু কেউ।
ঐরাবত কি চলিবে না, পথে পিপীলিকা মরে বলে?
ঘর পোড়ে বলে প্রবল বহ্নিশিখা উঠিবে না জ্বলে?

অঙ্ক কষে না, হিসাব করে না, বেহিসাবি যৌবন,
ভাঙা চাল দেখে নামিবে না কি রে শ্রাবণের বর্ষণ?
যৌবন কেনা-বেচা হবে কি রে বানিয়ার নিক্তিতে?
মুক্ত-আত্মা আজাদে ভোলাবে প্যাক্টের চুক্তিতে?
তরু ভেঙে পড়ে তাই বলে ঝড় আসবে না বৈশাখী!
ভীরু মেষ-শিশু ভয় পায় বলে রবে না ঈগল পাখি?

জ্ঞান ও শান্তি সংযম – বহু ঊর্ধ্বের কথা দাদা,
কহে নির্মল শান্তির কথা যার সারা গায়ে কাদা!
যে মহাশান্তি উদার-মুক্ত আকাশের তলে রহে,
কাম-ক্রোধ-লোভ-মত্ত জীবেরা আজ তারই কথা কহে।
অনন্ত দিক আকাশ যাহার সীমা খুঁজে নাহি পায়
এমন মুক্ত মানব দেখিলে শান্ত কহিয়ো তায়;
ওঠে তরঙ্গ অতি প্রবল যে বিরাট সাগরজলে
সেই উদ্‌বেল শক্তিরে তার অসংযমী কে বলে?
ডোবায় খানায় কূপে ঢেউ নাই, শান্ত তারাই বুঝি?
সংযমী বলে প্রতারক মোরা শুধু জড়তারে পূজি।

জাগো দুর্মদ যৌবন! এসো, তুফান যেমন আসে,
সুমুখে যা পাবে দলে চলে যাবে অকারণ উল্লাসে।
আনো অনন্ত-বিস্তৃত প্রাণ, বিপুল প্রবাহ, গতি,
কূলের আবর্জনা ভেসে গেলে হবে না কাহারও ক্ষতি।
বুক ফুলাইয়া দুখেরে জড়াও, হাসো প্রাণখোলা হাসি,
স্বাধীনতা পরে হবে – আগে গাও ‘তাজা ব-তাজা’র বাঁশি।
বসিয়াছে যৌবন-রাজপাটে শ্রীহীন অকাল জরা,
মৃত্যুর বহু পূর্বে এ-জাতি হয়ে আছে যেন মরা!
খোলো অর্গল পাষাণের, খুশি বহুক অনর্গল,
ঝাঁক বেঁধে নীল আকাশে যেমন ওড়ে পারাবত দল।
সাগরে ঝাঁপায়ে পড়ো অকারণে, ওঠো দূর গিরিচূড়ে
বন্ধু বলিয়া কন্ঠে জড়াও পথে পেলে মৃত্যুরে!
ভোলো বাহিরের ভিতরের যত বদ্ধ সংস্কার
মরিচা ধরিয়া পড়ে আছ সব আলির জুলফিকার!
জাগো উন্মদ আনন্দে দুর্মদ তরুণেরা সবে,
নাই-বা স্বাধীন হল দেশ, মানবাত্মা মুক্ত হবে।

নতুন চাঁদ

দেখেছি তৃতীয় আশমানে চিদাকাশে
চির-পথ-চাওয়া মোর নতুন চাঁদ হাসে।
দেহ ও মনের রোজা আমার
‘এফতার’ করে গেরেফতার
করিব, তৃষিত বক্ষে মোর ওই চাঁদে,
সহিতে পারি না বিরহ ওর, মন কাঁদে!
জুড়াব এবার জুড়াব গো,
খুশির পায়রা উড়াব গো
নামিবে ও চাঁদ মোর হৃদয়-আশমানে,
মত্ত হইব আনন্দের রসপানে।
বদলাবে তকদির আমার,
ঘুচিবে সর্ব অন্ধকার,
পরিব ললাটে, চুমু দেব, বাঁধব তায়
আল্লাহ্ নামের রজ্জুতে দিল্‌-কোঠায়।
সাম্যের রাহে আল্লাহের
মুয়াজ্জিনেরা ডাকিবে ফের,
পরমোৎসব হবে সেদিন ময়দানে
সাত আশমান দোল খাবে জয়-গানে
এক আল্লার জয়-গানে,
মহামিলনের জয়-গানে
‘শান্তি’ ‘শান্তি’ জয়-গানে!
একঘরে হেথা দশ প্রাচীর,
হিংসা-ক্লৈব্য-বদ্ধ নীড়
ভেঙে যাবে, মন রেঙে যাবে এক রঙে।
এক আকাশের তলে রব এক সঙে।
চাঁদ আসিছে রে, নতুন চাঁদ!
অপরূপ প্রেম-রসের ফাঁদ
বাঁধিবে সকলে এক সাথে গলে গলে
মিলিয়া চলিব তাঁর পথে দলে দলে।
রবে না ধর্ম জাতির ভেদ
রবে না আত্ম-কলহ-ক্লেদ,
রবে না লোভ, রবে না ক্ষোভ অহংকার,
প্রলয়-পয়োধি এক নায়ে হইব পার।
একের লীলা এ, দু-জন নাই
তাঁহারই সৃষ্টি সবাই ভাই,
কত নামে ডাকি – সর্বনাম এক তিনি,
তাঁরে চিনি নাকো, নিজেরে তাই নাহি চিনি।
আলো ও বৃষ্টি তাঁহার দান
সব ঘরে ঝরে এক সমান
সকলের মাঠে শস্য দেয় ফুল ফোটায়,
সকল মানুষ তাঁর ক্ষমা করুণা পায়।
প্রলয়ের রূপ ধরে যবে
তাঁর ক্রোধ নেমে আসে ভবে,
সব ধর্মের সব মানব মরে তখন,
থাকে না হিন্দু-মুসলমানের আস্ফালন!
এককে মানিলে রহে না দুই,
এসো সবে সেই এককে ছুঁই,
এক সে স্রষ্টা সব কিছুর সব জাতির।
আসিছে তাহারই চন্দ্রালোক এক বাতির!
মরিছে যাহারা – তাহারা নয়,
আসিছে – যাহারা বাঁচিয়া রয়,
নিত্য অভেদ উদার-প্রাণ নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!
আশমানে চাঁদ দেয় আজান নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!
মৃত্যুকে তারা করে না ভয় নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!
তাহারা বুদ্ধি-বদ্ধ নয় নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!
কাপুরুষ তার্কিক যারা
কেবল বিচার করে তারা,
অগ্রে চলে না ক্লীব ভীরু, ভয় দেখায়,
যারা আগে চলে, পিছে তাদের টানিতে চায়!
প্রাণ-প্রবাহের শত্রু সব,
ধূর্ত যুক্তি-শৃগাল-রব
দুই কূলে করে, তবু চলে নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!
মহাবন্যার তরঙ্গসম সম্মুখে দলে দলে
তবু চলে নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!
জাগাবে জোয়ার নতুন চাঁদ
এদেরই বক্ষে ; ভাঙিবে বাঁধ
জরায় জীর্ণ মড়া ঘাটের বিলাসীদের
মানিবে না এরা হট্টগোল মণ্ডূকের
সত্য বলিতে নিত্য ভয়
যুক্তি-গর্তে লুকায়ে রয়
ইহারা তাদের দলের নয় – নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!
এরা জীবন্ত মুক্ত-ভয় নৌজোয়ান!
ভীরু ইঁদুরের কিচি-মিচি
শোনে নাকো এরা মিছামিছি,
এরা শুধু বলে, ‘চল্‌ আগে নৌজোয়ান!’
অসম্ভবের অভিযানে এরা চলে,
না চলেই ভীরু ভয়ে লুকায় অঞ্চলে!
এরা অকারণ দুর্নিবার প্রাণের ঢেউ,
তবু ছুটে চলে যদিও দেখেনি সাগর কেউ।

জানে পারাবার, জানে অসীম,
এরাই শক্তি মহামহিম,
এরা উদ্দাম যৌবন-বেগ দুরন্ত
মুক্তপক্ষ নির্ভয় এরা উড়ন্ত।
নাই ইহাদের অবিশ্বাস
যা আনে জগতে সর্বনাশ।
প্রতি নিশ্বাসে এরা কহে – ‘মোরা অমর!’
তনুমনে নাই সন্দেহের বিসর্গ অনুস্বর।
হাতের লাট্টু এদের প্রাণ
গুলতির গুলি এদের প্রাণ
বেপরোয়া ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারে দিকে দিকে,
এদের বুদ্ধি চিকমিকায় না ঘেরা চিকে!
তিন্তিড়ি গাছে জোনাকি-দল
চাঁদের নিন্দা করে কেবল,
পুচ্ছের আলো উচ্ছের ঝোপে জ্বালায়ে কয় –
‘মোরা আলো দেব, চন্দ্রের দেশে ভীষণ ভয়!’
পাহাড়ে চড়িয়া নীচে পড়ে – নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!
অজগর খোঁজে গহ্বরে – নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!
চড়িয়া সিংহে ধরে কেশর – নৌজোয়ান!
বাহন তাহার তুফান ঝড় – নৌজোয়ান!
শির পেতে বলে – ‘বজ্র আয়!’
দৈত্য-চর্ম-পাদুকা পায়,
অগ্নি-গিরিরে ধরে নাড়ায় – নৌজোয়ান!
দলে দলে তারা খুঁজে বেড়ায়
ভূকম্পের ঘর কোথায় –
নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!
বিলাস এদের দারিদ্র্য,
গতি ইহাদের বিচিত্র,
দেখেনিকো জ্ঞান-বিলাসীরা এদের পথ,
শুনিলেও কাঁপে বলি-যূপের ছাগের বৎ!
এরাই দেখিবে নতুন চাঁদ জ্যোতিষ্মান,
ইহাদের নাই দেহ ও মন, কেবল প্রাণ!
নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!

এদেরেই পথ দেখাতে ওই
নতুন চাঁদের জ্যোৎস্না-খই
আকাশ-খোলায় ফুটিছে! ভীরুরা যাসনে কেউ,
যাদের পিছনে লেগেছে বুদ্ধি ভয়ের ফেউ!
মৃত্যুর ভয় প্রতি পদে ওই পথে
লঙ্ঘিতে হবে কত সমুদ্র পর্বতে।
বিলাসীরা থাকো চুপ করে
রূপ দেখে খেয়ো টুপ করে
যাত্রী অরুণ-তীর্থের পথে নৌজোয়ান!
পথ দেখায় যে, সে শুধু কয় – ‘জীবন দান
জীবন দান, নৌজোয়ান!’
জীবনে না করে নিষ্ঠীবন,
মৃত্যুর বুকে সঞ্চরণ
করে যারা, তারা নবযুগের নৌজোয়ান!
তাহাদের পথে এসো না কেউ ভীরু, আল্লার না-ফরমান।
ওরা দুর্জয় ভয়-হারা
ওদের ভ্রান্ত কয় কারা?
এই মর্ত্যের ভোগের গর্তে যারা মরে?
অমৃত আনিতে যায় – তারে অনাদর করে?
এক আল্লার সৃষ্টিতে
এক আল্লার দৃষ্টিতে
দেখিবে সবারে দুনিয়াতে নৌজোয়ান!
তলোয়ার তার বক্ষে লুকানো
নববধূ সম শয্যাতে –
নৌজোয়ান!
নৌজোয়ান!

নিরুক্ত

আর কতদিন রবে নিরুক্ত তোমার মনের কথা?
কথা কও প্রিয়া, সহিতে নারি এ নিদারুণ নীরবতা।
কেবলই আড়াল টানিতে চাহ গো তোমার আমার মাঝে
সে কি লজ্জায়? তবে কেন তাহা অবহেলা সম বাজে?
হেরো গো আমার তৃষিত আকাশ তব অধরের কাছে
যে কথা শোনার তরে শত যুগ আনত হইয়া আছে,
বলো বলো প্রিয়া, সে কথা বলিবে কবে?
সে কথা শুনিয়া মাতিয়া উঠিবে আকাশ মহোৎসবে!
যে কথা কারেও বলনি জীবনে আমারেও নাহি বল,
যে কথার ভারে অসহ ব্যথায় টলিতেছে টলমল,
তোমার অধর-পল্লব ফাঁকে সেই নিরুক্ত বাণী –
ফুলের মতন ফুটিয়া উঠিবে কোন শুভক্ষণে, রানি?
না-বলা তোমার সে কথা শোনার লাগি
শত সে জনম কত গ্রহ তারা আড়ি পেতে আছে জাগি!
সে কথা না শুনে তিথি গুনে গুনে চাঁদ হয়ে যায় ক্ষয়,
শুনিবে আশায় লয় হয়ে চাঁদ আবার জনম লয়!
আমার মনের আঁধার বনের মৌনা শকুন্তলা,
কোন লজ্জায় কোন শঙ্কায়, যায় না সে কথা বলা?
তুমি না কহিলে কথা
মনে হয়, তুমি পুষ্পবিহীন কুন্ঠিতা বনলতা!
সে কথা কহিতে পার না বলিয়া বেদনায় অনুরাগে
তব অঙ্গের প্রতি পল্লবে ঘন শিহরন জাগে।
তোমার তনুর শিরায় শিরায় সে কথা কাঁদিয়ে ফিরে,
না-বলা সে কথা ঝরে ঝরে পড়ে তোমার অশ্রু-নীরে!
হে আমার চির-লজ্জিত বধূ, হেরো গো বাসরঘরে
প্রতীক্ষারত নিশি জেগে আছি সে কথা শোনার তরে।
হাত ধরে মোর রাত কেটে যায়, চরণ ধরিয়া সাধি,
অভিমানে কভু চলে যাই দূরে, কভু কাছে এসে কাঁদি।
তোমার বুকের পিঞ্জরে কাঁদে যে কথার কুহু-কেকা,
অধর-দুয়ার খুলিয়া কি তারা বাহিরে দেবে না দেখা?
আমার ভুবনে যত ফুল ফোটে রেখে তব রাঙা পায়
ফাগুনের হাওয়া উত্তর নাহি পেয়ে কেঁদে চলে যায়।
হে প্রিয় মোর নয়নের জ্যোতি নিষ্প্রভ হয়ে আসে,
ঘুম আসে না গো, বসে থাকি রাতে নিরুদ্ধ নিশ্বাসে।
বুঝি বলিতে পার না লাজে
মোর ভালোবাসা ভালো লাগে নাকো বেদনার মতো বাজে!
কহো সেই কথা কহো,
কেন বেদনার বোঝা বহ তুমি কেন আপনারে দহ?
আমি জানি মোর নিয়তির লেখা, – তবু সেই কথা বলো
‘ভিখারি, ভিক্ষা পেয়েছ, তোমার যাবার সময় হল!’
মুষ্টি-ভিক্ষা চাহিয়া ভিখারি দৃষ্টি-প্রসাদ পায়,
উৎপাত-সম তবু আসে, তারে ক্ষমা করো করুণায়!
কেন অপমান সহি নেমে আসি বিরহ যমুনাতীরে।
– রাগ করিয়ো না, হয়তো চিনিতে পারনি এ ভিখারিরে!
কী চেয়েছিনু, হয়তো বুঝিতে পারনিকো তুমি হায়,
তোমারে চাহিতে আসিনি, আমারে দিতে এসেছিনু পায়!
আমি বলেছিনু, ‘আমারে ভিক্ষা লইয়া বাঁচাও মোরে,
তুমি তা জান না, কত কাল আছি ভিক্ষা-পাত্র ধরে।’
আমি বলেছিনু, ‘ধরায় যখন চলিবে যে পথ দিয়া,
চরণ রেখো গো, সেই পথে আমি বুক পেতে দেব প্রিয়া!
তোমার চরণে দেখেছি যে বেদ-গানের নূপুর-পরা,
কত কাঁটা কত ধূলি ও পঙ্কে পৃথিবীর পথ ভরা
তাই শিবসম, হে শক্তি মম, তব পথে পড়ে থাকি,
তাই সাধ যায় গঙ্গার মতো জটায় লুকায়ে রাখি!’
চির-পবিত্রা অমৃতময়ী, বলো কোন অভিমানে
তোমার পরম-সুন্দরে ফেলি যাও শ্মশানের পানে?
আপন মায়ায় পরম শ্রীমতী চেন নাকো আপনারে,
কহিলে না কথা, নামায়ে আমার প্রেম-যমুনার পারে।
আমি যা জানি না, তুমি তাহা জান ভালো,
তুমি না কহিলে কথা, নিভে যায় বৃন্দাবনের আলো!
বক্ষ হইতে চরণ টানিয়া লইলে, ভিক্ষু শিব
মহারুদ্রের রূপে সংহার করিবে এ ত্রিদিব।
রহিবে না আর প্রিয়-ঘন মোর নওলকিশোর রূপ,
মহাভারতের কুরুক্ষত্রে দেখিবে শ্মশান-স্তূপ!
হে নিরুক্তা, সেদিন হয়তো শূন্য পরম ব্যোমে
শুনাতে চাহিবে তোমার না-বলা কথা তব প্রিয়তমে।
আসিবে কি তুমি বেণুকা হইয়া সেদিন অধরে মম?
এই বিরহের প্রলয়ের পারে
কোন অনাগত আরেক দ্বাপরে
লজ্জা ভুলিয়া কন্ঠ জড়ায়ে কহিবে কি – ‘প্রিয়তম!’

মোবারকবাদ

মোরা ফোটা ফুল, তোমরা মুকুল এসো গুল-মজলিশে
ঝরিবার আগে হেসে চলে যাব – তোমাদের সাথে মিশে।
মোরা কীটে-খাওয়া ফুলদল, তবু সাধ ছিল মনে কত–
সাজাইতে ওই মাটির দুনিয়া ফিরদৌসের মতো।
আমাদের সেই অপূর্ণ সাধ কিশোর-কিশোরী মিলে
পূর্ণ করিয়ো, বেহেশ্‌ত এনো দুনিয়ার মহফিলে।
মুসলিম হয়ে আল্লারে মোরা করিনিকো বিশ্বাস,
ইমান মোদের নষ্ট করেছে শয়তানি নিশ্বাস!
ভায়ে ভায়ে হানাহানি করিয়াছি, করিনি কিছুই ত্যাগ,
জীবনে মোদের জাগেনি কখনও বৃহতের অনুরাগ!

শহিদি-দর্জা চাহিনি আমরা, চাহিনি বীরের অসি,
চেয়েছি গোলামি, জাবর কেটেছি গোলামখানায় বসি।
তোমরা মুকুল, এই প্রার্থনা করো ফুটিবার আগে,
তোমাদের গায়ে যেন গোলামের ছোঁয়া জীবনে না লাগে।
গোলামের চেয়ে শহিদি-দর্জা অনেক ঊর্ধ্বে জেনো;
চাপরাশির ওই তকমার চেয়ে তলোয়ারে বড়ো মেনো!
আল্লার কাছে কখনও চেয়ো না ক্ষুদ্র জিনিস কিছু,
আল্লাহ্ ছাড়া কারও কাছে কভু শির করিয়ো না নিচু!
এক আল্লাহ্ ছাড়া কাহারও বান্দা হবে না, বলো,
দেখিবে তোমার প্রতাপে পৃথিবী করিতেছে টলমল!
আল্লারে বলো, ‘দুনিয়ায় যারা বড়ো, তার মতো করো,
কাহাকেও হাত ধরিতে দিয়ো না, তুমি শুধু হাত ধরো।’
এক আল্লারে ছাড়া পৃথিবীতে কোরো না কারেও ভয়
দেখিবে – অমনি প্রেমময় খোদা, ভয়ংকর সে নয়!
আল্লারে ভালোবাসিলে তিনিও ভালোবাসিবেন, দেখো!
দেখিবে সবাই তোমারে চাহিছে আল্লারে ধরে থেকো!

খোদার বাগিচা এই দুনিয়াতে তোমরা নব মুকুল,
একমাত্র সে আল্লাহ্ এই বাগিচার বুলবুল!
গোলামের ফুলদানিতে যদি এ মুকুলের ঠাঁই হয়,
আল্লার কৃপা-বঞ্চিত হব, পাব মোরা পরাজয়!
যে ছেলেমেয়ে এই দুনিয়ায় আজাদমুক্ত রহে,
তাহাদেরই শুধু এক আল্লার বান্দা ও বাঁদি কহে!
তারাই আনিবে জগতে আবার নতুন ঈদের চাঁদ,
তারাই ঘুচাবে দুনিয়ার যত দ্বন্দ্ব ও অবসাদ!
শুধু আরশের আতরদানিতে যাহাদের হয় ঠাঁই,
তোমাদের এই মহফিলে আমি সেই মুকুলেরে চাই!

সেই মুকুলেরা এসো মহফিলে, বসাও ফুলের হাট,
এই বাংলায় তোমরা আনিয়ো মুক্তির আরফাত।