আমার সকল আকাশ ভ’রলো তোমার তনুর কমল-গন্ধে
আমার বন-ভবন ঘিরল মধুর কৃষ্ণ-মকরন্দে।।
এলামেলো মলয় বহে
বন্ধু এলো, এলো কহে
উজ্জ্বল হ’ল আমার ভুবন তোমার মুখ-চন্ধে।।
আমার দেহ-বীণায় বাজে তোমার চরণ-নূপুর-ছন্দ
সকল কাজে জাগে শুধু অধীর আনন্দ।
আমার বুকের সুখের মাঝে
তোমার উদাস বেণু বাজে
তোমার ছোওয়ায় আবেশ জাগে ব্যাকুল বেণীর বন্ধে।।
kazinazrulislam
আমায় নহে গো – ভালবাস শুধু ভালবাস মোর গান
আমায় নহে গো – ভালবাস শুধু ভালবাস মোর গান।
বনের পাখিরে কে চিনে রাখে গান হ’লে অবসান।।
চাঁদেরে কে চায় – জোছনা সবাই যাচে,
গীত শেষে বীণা প’ড়ে থাকে ধূলি মাঝে;
তুমি বুঝিবে না বুঝিবে না –
আলো দিতে পোড়ে কত প্রদীপের প্রাণ।।
যে কাঁটা-লতার আঁখি-জল, হায়, ফুল হ’য়ে ওঠে ফুটে –
ফুল নিয়ে তায় দিয়েছ কি কিছু শূন্য পত্র-পুটে!
সবাই তৃষ্ণা মিটায় নদীর জলে,
কী তৃষা জাগে সে নদীর হিয়া-তলে –
বেদনার মহাসাগরের কাছে কর সন্ধান।।
আমাদের ভাল কর, হে ভগবান
আমাদের ভাল কর, হে ভগবান,
সকলের ভাল কর, হে ভগবান।।
আমাদের সব লোকে বাসিবে ভালো
আমরাও সকলেরে বাসিব ভালো,
রবে না হিংসা-দ্বেষ, দেহ ও মনের ক্লেশ
মাটির পৃথিবী হবে স্বর্গ সমান – হে ভগভান।।
জ্ঞানের আলোক দাও, হে ভগবান!
বিপুল শক্তি দাও, হে ভগবান।
তোমারি দেওয়া জ্ঞানে চিনিব তোমায়
তোমার শক্তি হবে কর্মে সহায়,
ধর্ম যদি সাথি হয়, রবেনাক দুঃখ-ভয়
বিপদে পড়িলে তুমি করো যেন ত্রাণ – হে ভগবান।।
আবার শ্রাবণ এলো ফিরে তেমনি ময়ুর ডাকে
দ্বৈত: আবার শ্রাবণ এলো ফিরে তেমনি ময়ুর ডাকে,
দোলনা কেন বাঁধলে না গো এবার কদম-শাখে।।
স্ত্রী: সঙ্গে ল’য়ে গোপ-গোপীরে
পুরুষ: ব্রজের কিশোর যাবে ফিরে
দ্বৈত: লীলা-কিশোর শ্যাম যে লীলা-সাথীর সাথে থাকে।।
দ্বৈত: দোলনা বেঁধে রইবো চেয়ে আমরা মেঘের পানে
আয় ওরে আয়, নির্জন বনকে জাগাই সেই কাজরি গানে গানে।
স্ত্রী: বৃষ্টি ধারায় টাপুর টুপুর
পুরুষ: শুনব তাহার পায়ের নূপুর
দ্বৈত: বিজলিতে তার চপল চাওয়া দেখব মেঘের ফাঁকে।।
আবার ভালোবাসার সাধ জাগে
আবার ভালোবাসার সাধ জাগে।
সেই পুরাতন চাঁদ আমার চোখে আজ নূতন লাগে।।
যে ফুল দলিয়াছি নিঠুর পায়ে
সাধ যায় ধরি তারে বক্ষে জড়ায়ে,
উদাসীন হিয়া হায় রেঙে ওঠে অবেলায় সোনার গোধূলি-রাগে।।
আবার ফাগুন-সমীর কেন বহে,
আমার ভুবন ভরি’ কেঁদে ওঠে বাঁশরি অসীম বিরহে।
তপোবনের বুকে ঝর্নার সম
কে এলে সহসা হে প্রিয়তম,
মাথুরের গোকুল সহসা রাঙাইলে রাসের কুঙ্কুম-ফাগে।।
আবার কেন বাতায়নে দীপ জ্বালিলে
মজনুঃ আবার কেন বাতায়নে দীপ জ্বালিলে, হায়!
আমার যে প্রাণ-পতঙ্গ ওই প্রদীপ পানেই ধায়॥
লায়লীঃ আমার প্রেম যে অনল শিখা জ্বলে তিমির রাতে
পতঙ্গরে পোড়াই আমি নিজেও পুড়ি সাথে।
মজনুঃ একি ব্যথা একি নেশা
এই কি গো প্রেম গরল-মেশা!
লায়লীঃ তত আলো দান করে সে যত সে জ্বালায়॥
রেকর্ড-নাটিকাঃ ‘লায়লী মজনু’
আজ সকালে সূর্য ওঠা সফল হলো মম
আজ সকালে সূর্য ওঠা সফল হলো মম
ঘরে এলে ফিরে পরবাসী প্রিয়তম।।
আজ প্রভাতের কুসুমগুলি
সফলে হলো ডালায় তুলি’
সাজির ফুলে আজের মালা হবে অনুপম।।
এতদিনে সুখের হলো প্রভাতী শুকতারা
ললাটে মোর সিঁদুর দিলো ঊষার রঙের ধারা।
আজকে সকল কাজের মাঝে
আনন্দেরই বীনা বাজে
দেবতার বর পেয়েছি আজ তপস্বিনীর সম।।
আজ ভারতের নব আগমনী জাগিয়া উঠেছে মহাশ্মশান
আজ ভারতের নব আগমনী জাগিয়া উঠেছে মহাশ্মশান
জাগরণী গায় প্রভাতের পাখি ফুলে ফুলে হাসে গোরস্থান॥
ট’লেছে অটল হিমালয় আজি
সাগরে শঙ্খ উঠিয়াছে বাজি’
হলাহল শেষে উঠেছে অমৃত বাঁচাইতে মৃত মানব-প্রাণ॥
আঁধারে ক’রেছে হানাহানি যারা
আলোকে চিনেছে আত্মীয় তা’রা
এক হয়ে গেছে খ্রিস্টান, শিখ, হিন্দু, পারসি, মুসলমান।
এই তাপসীর চরণের তলে
লভিয়াছে জ্ঞান শিক্ষা সকলে
আবার আসিবে তারা দলে দলে করিতে পুণ্য-তীর্থ-স্নান॥
আজ নিশীথে অভিসার তোমারি পথে প্রিয়তম
আজ নিশীথে অভিসার তোমারি পথে প্রিয়তম।
বনের পারে নিরালায় দিও হে দেখা নিরুপম।।
সুদূর নদীর ধারে নিরালাতে বালুচরে
চখার তরে যথা একা চখি কেঁদে মরে
সেথা সহসা আসিও গোপন প্রিয় স্বপন সম।।
তোমারি আশায় ঘুরি শত গ্রহে শত লোকে,
(ওগো) আমারি বিরহ জাগে বিরহী চাঁদের চোখে,
আকুল পাথার নিরাশার পারায়ে এসো প্রাণে মম।।
আজ শ্রাবনের লঘু মেঘের সাথে মন চলে মোর ভেসে
আজ শ্রাবনের লঘু মেঘের সাথে মন চলে মোর ভেসে’,
রেবা নদীর বিজন তীরে মালবিকার দেশে।।
মন ভেসে যায় অলস হাওয়ায়
হালকা-পাখা মরালী-প্রায়
বিরহিনী কাদেঁ যথা একলা এলাকেশে।।
কভু মেঘের পানে কভু নদীর পানে চেয়ে,’
লুকিয়ে যথা নয়ন মোছে গায়েঁর কালো মেয়ে,
একলা বধূ বসে থাকে যথায় বাতায়নে
বাদল দিনের শেষে।।