কোরবানী

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !
দুর্বল! ভীরু ! চুপ রহো, ওহো খামখা ক্ষুব্ধ মন !
ধ্বনি উঠে রণি’ দূর বাণীর, –
আজিকার এ খুন কোরবানীর !
দুম্বা-শির রুম্-বাসীর
শহীদের শির সেরা আজি !- রহমান কি রুদ্র নন ?
ব্যাস ! চুপ খামোশ রোদন !
আজ শোর ওঠে জোর “খুন দে, জান দে , শির দে বৎস” শোন !
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !
খন্জর মারো গদ্র্দানেই,
পন্জরে আজি দরদ নেই,
মর্দানী’ই পর্দা নেই,
ডরতা নেই আজ খুন্-খারাবীতে রক্ত-লুব্ধ-মন !
খুনে খেলবো খুন-মাতন !
দুনো উনমাদনাতে সত্য মুক্তি আনতে যুঝবো রণ ।
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !
চ’ড়েছে খুন আজ খুনিয়ারার
মুসলিমে সারা দুনিয়াটার !
‘জুলফেকার’ খুলবে তার
দু’ধারী ধার শেরে-খোদার , রক্তে-পূত-বদন !
খুনে আজকে রুধবো মন
ওরে শক্তি-হস্তে মুক্তি, শক্তি রক্তে সুপ্ত শোন্ ।
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !
আস্তানা সিধা রাস্তা নয়,
‘আজাদী মেলে না পস্তানো’য় !
দস্তা নয় সে সস্তা নয় !
হত্যা নয় কি মৃত্যুও ? তবে রক্তে লুব্ধ কোন্_
কাঁদে-শক্তি-দুস্থ শোন_
“এয়্ ইবরাহীম্ আজ কোরবানী কর শ্রেষ্ঠ পুত্র ধন !”
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !
এ তো নহে লহু তরবারের
ঘাতক জালিম জোরবারের
কোরবানের জোরজানের
খুন এ যে, এতে গোদ্র্দ ঢের রে, এ ত্যাগে ‘বুদ্ধ’ মন !
এতে মা রাখে পুত্র পণ !
তাই জননী হাজেরা বেটারে পরা’লো বলির পূত বসন !
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !
এই দিনই ‘মিনা’-ময়দানে
পুত্র-স্নেহের গর্দানে
ছুড়ি হেনে ‘খুন ক্ষরিয়ে নে’
রেখেছে আব্বা ইবরাহীম সে আপনা রুদ্র পণ !
ছি ছি ! কেঁপোনা ক্ষুদ্র মন !
আজ জল্লাদ নয় , প্রহ্লাদ-সম মোল্লা খুন-বদন !
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !
দ্যাখ্ কেঁপেছে ‘আরশ’ আসমানে
মন-খুনী কি রে রাশ মানে ?
ত্রাস প্রাণে ? তবে রাস্তা নে !
প্রলয় বিষাণ ‘কিয়ামতে’ তবে বাজবে কোন্ বোধন ?
সে কি সৃষ্টি-সংশোধন ?
ওরে তাথিয়া তাথিয়া নাচে ভৈরব বাজে ডম্বরু শোন্ !-
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !
মুসলিম-রণ-ডঙ্কা সে,
খুন দেখে করে শঙ্কা কে ?
টঙ্কারে অসি ঝঙ্কারে,
ওরে হুঙ্কারে , ভাঙি গড়া ভীম কারা, ল’ড়বো রণ-মরণ !
ঢালে বাজবে ঝন্-ঝনন্ !
ওরে সত্য মুক্তি স্বাধীনতা দেবে এই সে খুন-মোচন !
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !

ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !
জোর চাই, আর যাচনা নয়,
কোরবানী-দিন আজ না ওই ?
কাজ না আজিকে জান্ মাল দিয়ে মুক্তির উদ্র্ধরণ ?
বল্ – “যুঝবো জান ভি পণ !”
ঐ খুনের খুঁটিতে কল্যাণ-কেতু, লক্ষ্য ঐ তোরণ,
আজ আল্লার নামে জান্ কোরবানে ঈদের পূত বোধন ।
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যাগ্রহ’ শক্তির উদবোধন !

কে জানে মা তব মায়া

কে জানে মা তব মায়া
হরজায়া মনোমোহিনী
কখনো পুরুষ হও মা
কখনো যে কামিনী।
কে জানে মা তব মায়া।।
হরজায়া মনোমোহিনী
কখনো পুরুষ হও মা
কখনো যে কামিনী।
কে জানে মা তব মায়া
কে জানে ?

প্রথমেতে মহাকালী
দ্বিতীয়াতে তারা।
তৃতীয়া ষোড়শী রূপ
তুমি ধরিলে ত্রিপুরা
ওমা চতুর্থে ভুবনেশ্বরী
অপরূপ রূপ-মাধুরী।
কেবা জানতে পারে মাগো
তুমি ত্রিগুণ ধারিণী।
কে জানে মা তব মায়া
কে জানে ?

পঞ্চমেতে ভৈরবী
ষষ্ঠে ছিন্নমস্তা
সপ্তমেতে ধূমাবতী
অষ্টমে বগলা
নবমে মাতঙ্গী রূপ
দশমে কমলা
অবরা প্রকাশ লীলা
ব্রহ্মময়ী তারিণী।
কে জানে মা তব মায়া।।
হরজায়া মনোমোহিনী
কখনো পুরুষ হও মা
কখনো যে কামিনী।
কে জানে মাগো
কে জানে ?
কে জানে মা তব মায়া।।
কে জানে ?

Categories

কেন প্রাণ ওঠে কাঁদিয়া

কেন প্রাণ ওঠে কাঁদিয়া
কাঁদিয়া কাঁদিয়া কাঁদিয়া গো।
আমি যত ভুলি ভুলি করি, তত আঁকড়িয়া ধরি
শ্যামের সে রূপ ভোলা কি যায়, নিখিল শ্যামল যার শোভায়
আকাশে সাগরে বনে কান্তারে লতায় পাতায় সে রূপ ভায়।
আমার বঁধুর রূপের ছায়া বুকে ধরি’ আকাশ-আরশি নীল গো
বহে ভুবন প্লাবিয়া কালারে ভাবিয়া কালো সাগর-সলিল গো। সখি গো —
যদি ফুল হয়ে ফুটি তরু-শাখে, সে যে পল্লব হয়ে ঘিরে থাকে। সখি গো —
আমি যেদিকে তাকাই হেরি ও-রূপ কেবল
সে যে আমারি মাঝারে রহে করি’ নানা ছল
সে যে বেণী হয়ে দোলে পিঠে চপল চতুর।
সে যে আঁখির তারায় হাসে কপট নিঠুর।
তারে কেমনে ভুলিব, সখি কেমনে ভুলিব।
থাকে কবরী-বন্ধে কালো ডোর হয়ে কাল্‌ফণী কালো কেশে গো
থাকে কপালের টিপে, চোখের কাজলে কপোলের তিলে মিশে’ গো!
আমার এ-কূল ও-কূল দু’কূল গেল।
কূলে সই পড়িল কালি সেও কালো রূপে এলো।
রাখি কি দিয়া মন বাঁধিয়া, বাঁধিয়া বাঁধিয়া বাঁধিয়া গো।।

Categories

কেন প্রেম-যমুনা আজি হলো অধীর

কেন প্রেম-যমুনা আজি হলো অধীর
দোলে টলমল রহে না স্থির।।
মানে না বারণ উথলে বারি
ভাসালো কুললাজ রুধিতে নারি
সখি ডাক শুনেছে সে কার মুরলীল।।

তালঃ কাহার্‌বা

নাটকঃ ‘সিরাজদ্দৌলা’

Categories

কারার ঐ লৌহ কপাট

কারার ঐ লৌহ–কপাট
ভেঙ্গে ফেল্‌ কর্‌ রে লোপাট রক্ত –জমাট
শিকল –পূজার পাষাণ –বেদী!
ওরে ও তরুণ ঈশান!
বাজা তোর প্রলয় –বিষাণ ! ধ্বংস –নিশান
উঠুক প্রাচী –র প্রাচীর ভেদি’।।

গাজনের বাজনা বাজা!
কে মালিক? কে সে রাজা? কে দেয় সাজা
মুক্ত –স্বাধীন সত্য কে রে?
হা হা হা পায় যে হাসি, ভগবান প’রবে ফাঁসি? সর্বনাশী —
শিখায় এ হীন্‌ তথ্য কে রে?

ওরে ও পাগ্‌লা ভোলা, দেরে দে প্রলয় –দোলা গারদগুলা
জোরসে ধ’রে হ্যাঁচকা টানে।
মার্‌ হাঁক হায়দরী হাঁক্‌ কাঁধে নে দুন্দুভি ঢাক ডাক ওরে ডাক
মৃত্যুকে ডাক জীবন –পানে।।

নাচে ঐ কাল –বোশেখী, কাটাবি কাল ব’সে কি?
দে রে দেখি ভীম কারার ঐ ভিত্তি নাড়ি’।
লাথি মার, ভাঙ্‌রে তালা! যত সব বন্দী–শালায়–
আগুন জ্বালা, আগুন জ্বালা, ফেল্‌ উপাড়ি।।

কি হবে জানিয়া বল

কি হবে জানিয়া বল
কেন জল নয়নে।
তুমি ত ঘুমায়ে আছ
সুখে ফুল-শয়নে।।
তুমি কি বুঝিবা বালা
কুসুমে কীটের জ্বালা,
কারো গলে দোলে মালা
কেহ ঝরে পবনে।।
আকাশে আখি ভরি
কে জানে কেমন করি
শিশির পরে গো ঝরি
ঝরে বারি শাওনে।।
নিশীথে পাপিয়া পাখি
এমনি ত ওঠে ডাকি,
তেমনি ঝুরিছে আঁখি
বুঝি বা অকারণে।।
কে শুধায়, আঁধার চরে
চখা কেন কেঁদে মরে,
এমনি চাতক-তরে
মেঘ ঝুরে গগনে।।

Categories

কে বিদেশী বন উদাসী

কে বিদেশী বন উদাসী
বাঁশের বাঁশী বাজাও বনে।
সুর-সোহাগে তন্দ্রা লাগে
কুসুম-বাগের গুল-বদনে।।

ঝিমিয়ে আসে ভোমরা-পাখা
যুঁথীর চোখে আবেশ মাখা
কাতর ঘুমে চাঁদিমা রাকা
ভোর গগনের দর্‌-দালানে।।

লজ্জাবতীর ললিত লতায়
শিহর লাগে পুলক-ব্যথায়
মালিকা সম বঁধুরে জড়ায়
বালিকা বঁধু সুখ-স্বপনে।।

সহসা জাগি আধেক রাতে
শুনি সে বাঁশী বাজে হিয়াতে
বাহু শিথানে কেন কে জানে
কাঁদে গো প্রিয়া বাঁশীর সনে।।

Categories

কে এলে মোর ব্যথার গানে গোপনে-লোকের বন্ধু গোপন

কে এলে মোর ব্যথার গানে গোপনে-লোকের বন্ধু গোপন
নাইতে আমার গানের ধারায় এলে সুরের মানসী কোন।।
গান গেয়ে যাই আপন মনে
সুরের পাখি গহন-বনে
সে সুর বেঁধে কার নয়নে জানে শুধু তারি নয়ন।।
সুরের গোপন বাসর-ঘরে
গানের মালা বদল ক’রে
সকল আঁখির অগোচরে না দেখাতেই মোদের মিলন।।

Categories

কৃষ্ণ কৃষ্ণ বোল রে মন, কৃষ্ণ কৃষ্ণ বোল

কৃষ্ণ কৃষ্ণ বোল রে মন, কৃষ্ণ কৃষ্ণ বোল
কৃষ্ণ কৃষ্ণ বোল রে মন, প্রেমের লহর তোল
রে মন মায়ার বন্ধন খোল।।
নিরালা হৃদয়-যমুনাতে কে বাজায় বাঁশি আধেক রাতে
তুই কুল ভুলে চল তাহারি সাথে প্রেম-আনন্দে দোল।
ও তুই প্রেম-আনন্দে দোল।।
সে গোলক হাতে ভালবাসে গোকুল বৃন্দাবন
মধুর প্রেমের-ভিখারি সে মদন মোহন।
প্রেম দিয়ে যে বাঁধতে পারে, সাধ কবে তার কাছে হারে
মুনি-ঋষি পায় না তারে গোপীরা পায় কোল।
ও তার গোপীরা পায় কোল।।

Categories

কুহু কুহু কুহু কহু কোয়েলিয়া

কুহু কুহু কুহু কহু কোয়েলিয়া
কুহরিল মহুয়া –বনে
চমকি জাগিনু নিশীথ শয়নে।।
শূন্য ভবনে মৃদুল সমীরে
প্রদীপের শিখা কাঁপে ধীরে ধীরে
চরণ –চিহ্ন রাখি দলিত কুসুমে
চলিয়া গেছ তুমি দূর –বিজনে।।
বাহিরে ঝরে ফুল আমি ঝুরি ঘরে
বেণু–বনে সমীরণ হাহাকার করে
ব’লে যাও কেন গেলে এমন ক’রে
কিছু নাহি ব’লে সহসা গোপনে।।

Categories