বাঁকা শ্যামল এলো বন-ভবনে

বাঁকা শ্যামল এলো বন-ভবনে
তার বাঁশির সুর শুনি পবনে॥
রাঙা সে চরণের নূপুর-রোলে রে
আকুল এ হৃদয় পুলকে দোলে রে
সে নূপুর শুনি’ নাচে ময়ূর কদম তমাল-বনে॥
বুঝি সেই শ্যামের পরশ লাগিল
আমার চরণে তাই নাচন জাগিল –
ঘিরি শ্যামে দখিন-বামে নেচে বেড়াই আপন মনে॥
এলো মাধবী চাঁদ গগন আঙিনায়
জোয়ার এসেছে তাই হৃদয় যমুনায়
খুলিয়া গলার মালা পরাব শ্যামেরি বরণে॥

Categories

বাঁকা চোখে চাহে ও কে

বাঁকা চোখে চাহে ও কে
ওকি ভয়ে, না লাজে, না ভালোবাসায়?
বটের ঝুরি ধ’রে হেসে তাকায়
দীঘির জলে কভু কল্‌সি ভাসায়॥
(আমার) পাখি শিকার দেখে তাহার আঁখি ছলছল
যেন দুটি ঝিনুক ভরা কাজলা দীঘির জল
তার আঁজলা ভরা শাপলা কাঁপে টলমল্ গো
সে বাঁকিয়ে জোড়া ভুরু মোরে শাসায়॥
কভু এলায়ে গা বাঁধে খোঁপা কোমরে জড়ায় আঁচল
মট্‌কায় আঙুল, কভু ঘসে সে পা গো
কভু জলে ডোবে কভু সাঁতার কাটে
নানান ছলে সে দেরি করে জলের ঘাটে
মোরে জানায় যেন ও সে আছে ব’সে
কাহার আসার আশায়॥

Categories

বহে বনে সমীরণ ফুল জাগানো

বহে বনে সমীরণ ফুল জাগানো
এসো গোপন সাথি মোর ঘুম ভাঙানো
এসো আঁধার রাতেরি চাঁদ পাতি মায়ারি ফাঁদ
এসো এসো মম স্বপন সাধ॥
হৃদয় তিমিরে এসো হৃদ-সায়র দোল লাগানো
সাথি মোর ঘুম ভাঙানো॥
বনে মোর ফুলগুলি আছে তব পথ চেয়ে
পরান পাপিয়া পিউ পিউ ওঠে গেয়ে
তরুণ অরুণ এসো আলোকেরি পথ বেয়ে
এসো আমার তনু মন প্রাণ হৃদয় রাঙানো
এসো ভুবন ভোলানো
কোথা গোপন সাথি মোর ঘুম ভাঙানো॥

Categories

বহু পথে বৃথা ফিরিয়াছি প্রভু হইব না আর পথহারা

বহু পথে বৃথা ফিরিয়াছি প্রভু হইব না আর পথহারা
বন্ধু স্বজন সব ছেড়ে যায় তুমি একা জাগো ধ্রুবতারা।।
মায়ারূপী হায় কত স্নেহ-নদী,
জড়াইয়া মোরে ছিল নিরবধি,
সব ছেড়ে গেল, হারাইনু যদি তুমি এসো প্রাণে প্রেমধারা।।
ভ্রান্ত পথের শ্রান্ত পথিক লুটায় তোমার মন্দিরে,
প্রভু আরো যদি কিছু আছে মোর প্রিয় লও বাঁচায়ে বন্দীরে।
ডাকি’ লও মোরে মুক্ত আলোকে
তব আনন্দ-নন্দন-লোকে,
শান্ত হোক এ ক্রন্দন, আর সহে না এ বন্ধন-কারা।।

Categories

বসিয়া নদী-কূলে,এলোচুলে কে উদাসিনী

বসিয়া নদী-কূলে,এলোচুলে কে উদাসিনী
কে এলে, পথ ভুলে, এ অকূলে বন-হরিণী।।
কলসে জল ভরিয়া চায় করুণায় কুল-বধূরা,
কেঁদে যায় ফুলে, ফুলে, পদমূলে, সাঁঝ-তটিনী।।
দলিয়া কত ভাঙা-মন, ও চরণ, করেছ রাঙা
কাঁদায়ে কত না দিল, এলে নিখিল মন-মোহিনী।।
হারালি গোধূলি-লগন কবি, কোন নদী কিনারে,
একি সেই স্বপন-চাঁদ, পেতেছে ফাঁদ প্রিয়ার সতিনী।।

Categories

বসিয়া বিজনে কেন একা মনে

বসিয়া বিজনে কেন একা মনে
পানিয়া ভরনে চল লো গোরী।
চলো জলে চলো কাঁদে বনতল
ডাকে ছলছল জল–লহরি।।
দিবা চ’লে যায় বলাকা–পাখায়
বিহগের বুকে বিহগী লুকায়।
কেঁদে চখা–চখি মাগিছে বিদায়
বারোয়াঁর সুরে ঝুরে বাঁশরি।।
ওগো বে–দরদী ও রাঙ্গা পায়ে
মালা হয়ে কে গো গেল জড়ায়ে
তব সাথে কবি পড়িল দায়ে
পায়ে রাখি তারে না গলে পরি।।

Categories

বসন্ত মুখর আজি

বসন্ত মুখর আজি।
দক্ষিণ সমীরণে মর্মর গুঞ্জনে
বনে বনে বিহ্বল বাণী ওঠে বাজি’।।

অকারণ ভাষা তার ঝর ঝর ঝরে
মুহু মুহু কুহু কুহু পিয়া পিয়া স্বরে,
পলাশ বকুলে অশোক শিমুলে –

সাজানো তাহার কল–কথার সাজি।।

দোয়েল মধুপ বন–কপোত কূজনে,
ঘুম ভেঙে দেয় ভোরে বাসর শয়নে।

মৌনী আকাশ সেই বাণী–বিলাসে

অস্ত চাঁদের মুখে মৃদু মৃদু হাসে,
বিরহ–শীর্ণা গিরি–ঝর্ণার তীরে –

পাহাড়ি বেণু হাতে ফেরে সুর ভাঁজি’।।

Categories

বসন্ত এলো এলো এলো রে

বসন্ত এলো এলো এলো রে
পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহরে
মুহু মুহু কুহু কুহু তানে।
মাধবী নিকুঞ্জে পুঞ্জে পুঞ্জে
ভ্রমর গুঞ্জে গুনগুন গানে।।
পিয়া পিয়া ডেকে ওঠে পাপিয়া
মহুল, পলাশ বন-ব্যাপিয়া
সুরভিত সমীরণ চঞ্চল উন্মন
আনে নব-যৌবন প্রাণে।।
বেণুকার বনে বাঁশি বাজে
বনমালী এলো বন-মাঝে
নাচে তরু-লতিকা যেন গোপ-গোপিকা
রাঙা হয়ে রঙের বানে।।

Categories

বল্ মা শ্যামা বল্ তোর বিগ্রহ কি মায়া জানে

বল্ মা শ্যামা বল্ তোর বিগ্রহ কি মায়া জানে।
আমি যত দেখি তত কাঁদি ঐ রূপ দেখি মা সকলখানে॥
মাতৃহারা শিশু যেমন মায়ের ছবি দেখে,
চোখ ফিরাতে নারে মাগো, কাঁদে বুকে রেখে।
তোর মূর্তি মোরে তেমনি ক’রে টানে মাগো মরণ টানে॥
ও-মা, রাত্রে নিতুই ঘুমের ঘোরে দেখি বুকের কাছে,
যেন, প্রতিমা তোর মায়ের মত জড়িয়ে মোরে আছে।
জেগে উঠে আঁধার ঘরে
কাঁদি যবে মা তোরই তরে
দেখি প্রতিমা তোর কাঁদছে যেন চেয়ে চেয়ে আমার পানে॥

Categories

বল্ নাহি ভয় নাহি ভয়

বল্ নাহি ভয় নাহি ভয়!
বল্ মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!
তুই নির্ভর কর্‌ আপনার ‘পর আপন পতাকা কাঁধে তুলে ধর্‌
ওরে যে যায় যাক্ সে, তুই শুধু বল্ ‘আমার হয়নি লয়’!
বল্ ‘আমি আছি’, আমি পুরুষোত্তম, আমি চির-দুর্জয়!
বল্ মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!!
যে গেল সে নিজেরে নিঃশেষ করি’ তোদের পাত্র দিয়ে গেল ভরি’!
ঐ বন্ধ মৃত্যু পারেনি ক’ তাঁরে পারেনি করিতে লয়!
তাই আমাদের মাঝে নিজেরে বিলায়ে সে আজি শান্তিময়
বল্ মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!!
ওরে রুদ্র তখনি ক্ষুদ্রেরে গ্রাসে আগেই যবে সে ম’রে থাকে ত্রাসে
ওরে আপনার মাঝে বিধাতা জাগিলে বিশ্বে সে নির্ভয়
এই ক্ষুদ্র কারায় কভু কি ভয়াল ভৈরব বাঁধা রয়?
বল্ মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!!
ওরে আত্ম-অবিশ্বাসী, ভয়ে-ভীত! কেন হেন ঘন অবসাদ চিত
বল্ পর-বিশ্বাসে পর-মুখপানে চেয়ে কি স্বাধীন হয়?
তুই আত্মাকে চিন্, বল আমি আছি,’ ‘সত্য আমার জয়’!
বল্ মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!!

Categories