বলেছিলে তুমি তীর্থে আসিবে আমার তনুর তীরে

বলেছিলে তুমি তীর্থে আসিবে আমার তনুর তীরে।
তুমি আসিলে না, (হায়!) আশার সূর্য ডুবিল সাগর-নীরে।।
চলে যাই যদি, চিরদিন মনে
তোমার সে-কথা রহিবে স্মরণে
শুধু সেই কথা শোনার লাগিয়া হয়তো আসিব ফিরে।।
শুধু সেই আশে হয়তো এ তনু মরণে হবে না লীন
পথ চেয়ে চেয়ে, তব নাম গেয়ে বাজাব বিরহ-বীণ।
হের গো, আমার যাবার সময় হলো
তোমার সে-কথা মিথ্যা হবে না বলো,
কোন শুভক্ষণে নিমেষের তরে জড়াবে কন্ঠ ঘিরে।।

Categories

বলি মাথা খাস্ রাধে ওলো কথা শোন্

আবৃত্তিঃ কুমারী রাধিকা ঘোষের প্রতি শ্রীমৎ ক্যাগ বিমাতার উক্তি:

বলি মাথা খাস্ রাধে ওলো কথা শোন্।
বলি কুল আর তুই খাস্‌নে (রাধে কুল আর তুই খাস্‌নে)
ওলো গোকুল ঘোষের কন্যা যে তুই কুল গাছ পানে চাস্‌নে
(পরের কুল গাছ পানে চাস্‌নে)
ও কুল গাছে বড় কাঁটা
গায়ে অথবা পায়ে বিঁধিলে দায় হবে পথ হাঁটা
(রাধে গায়ে অথবা পায়ে বিঁধিলে দায় হবে পথ হাঁটা)
কলঙ্ক দিলি (কলঙ্ক দিলি)
তুই যারি তারি কুল চুরি করে খেলি
গোকুলের কুলে কলঙ্ক দিলি (কুলে কলঙ্ক দিলি) রাধে গো।
ওলো ভাবিস এখনও বয়েস হয়নি কারণ বেড়াস ফ্রক পরে।
ওই কুল গাছ আগলায় ভীমরুল চাক
(ওই কুল গাছ আগলায় ভীমরুল চাক)
তোর কুল খাওয়া বের হবে ফুলে হবি ঢাক
(ফুল হবি জয় ঢাক)।
বলি পড়তে নাকি কুল খেতে যাস রোজ রোজ ইস্কুলে
(রাধে পড়তে নাকি কুল খেতে যাস রোজ রোজ ইস্কুলে)
ওই কুলেরি কাঁটায় দুকুল ছিঁড়িস বেণী আঁটিস খুলে
(রাধে বেণী আঁটিস খুলে)
খাস তুই টোপা কুল খাস নারকুলে কুল
(খাস তুই টোপা কুল খাস নারকুলে কুল)
অত কুল খেয়ে রাতে পেট ডাকে কুল কুল কুল কুল।
ওলো কুলোতে নারি (কুলোতে নারি)
ওলো তোর কুল দিয়ে আর কুলোতে নারি (দিয়ে কুলোতে নারি)
ছিল কুলুঙ্গীতে কুলের আচার তাও খেয়েছিল কুল খোয়ারী
(কুলুঙ্গীর ও কুলের আচার তাও খেয়েছিস কুল খোয়ারী)।
ওই কুল গাছ ধরে (সখি গো রাধে গো)
(বহুত আচ্ছা দাদা বহুত আচ্ছা বহুত আচ্ছা)
ওই কুল গাছ ধরি কোলাকুলি করি ফ্যাসাদ বাধাবি শেষে
আর কুল ত্যাগিনী হবে কি নাশিনী কুল গাছ ভালোবেসে
(আর কুল ত্যাগিনী হবে কি নাশিনী কুল গাছ ভালোবেসে)॥

Categories

বন-বিহারিণী চঞ্চল হরিণী

বন-বিহারিণী চঞ্চল হরিণী
চিনি আঁখিতে চিনি কানন নটিনী রে।।
ছুটে চলে যেন বাঁধ ভাঙ্গা তটিনী রে।।
নেচে নেচে চলে ঝর্ণার তীরে তীরে
ছায়াবীথি তলে কভু ধীরে চলে
চকিতে পালায় ছুটি ছায়া হেরি গিরি-শিরে।।

নাটকঃ‘সাবিত্রী’

Categories

বন-বিহঙ্গ যাও রে উড়ে মেঘ্‌না নদীর পাড়ে

বন-বিহঙ্গ যাও রে উড়ে মেঘ্‌না নদীর পাড়ে
দেখা হলে আমার কথা কইয়ো গিয়া তারে।
কোকিল ডাকে বকুল-ডালে, যে-মালঞ্চে সাঁঝ-সকালে রে,
আমার বন্ধু কাঁদে সেথায় গাঙেরি কিনারে।।
গিয়া তারে দিয়া আইস আমার শাপ্‌লা-মালা
আমার তরে লইয়া আইস তাহার বুকের জ্বালা।
সে যেন রে বিয়া করে, সোনার কন্যা আনে ঘরে রে,
আমার পাটের জোড় পাঠাইয়া দিব সে-কন্যারে।।

Categories

বন-ফুলে তুমি মঞ্জরি গো

বন-ফুলে তুমি মঞ্জরি গো
তোমার নেশায় পথিক-ভ্রমর ব্যাকুল হ’ল গুঞ্জরি’ গো।।
তুমি মায়ালোকের নন্দিনী ন্দনের আনন্দিনী
তুমি ধূলির ধরার বন্দিনী, যাও গহন কাননে সঞ্চরি গো।।
মৃদু পরশ-কুঞ্চিতা তুমি বালিকা
বল্লভ-ভীতা পল্লব অবগণি্ঠিতা মুকুলিকা।
তুমি প্রভাত বেলায় মঞ্জরি লাজে সন্ধ্যায় যাও ঝরি’
অরণ্যা-বল্লরি শোভা, পুণ্য পল্লী-সুন্দরী।।

Categories

বন-কুন্তল এলায়ে বন শবরী ঝুরে সকরুণ সুরে

বন-কুন্তল এলায়ে বন শবরী ঝুরে সকরুণ সুরে।
বিষাদিত ছায়া তার চৈতালী সন্ধ্যার চাঁদের মুকুরে।।
চপলতা বিসরি যেন বন-যৌবন
বিরহ-ক্ষীণ আজি উদাস উন্মন,
তোলে না ঝঙ্কার আর ঝরা পাতার মর্মর নূপুরে।।
যে কুহু কুহরিত মধুর পঞ্চমে বিভোর ভাবে,
ভগ্ন কণ্ঠে তার থেমে যায় সুর করুণ রেখাবে।
কোন বন-শিকারীর অকরুণ তীর
আলো হ’রে নিল ওই উজল আঁখির –
ফেলে যাওয়া বাঁশি তা’র অঞ্চলে লুকায়ে –
গিরি–দরি–প্রান্তরে খোঁজে সে নিঠুরে।।

Categories

বন তমালের শ্যামল ডালে দোলে ঝুলন দোলায় যুগল রাধা শ্যাম

বন তমালের শ্যামল ডালে দোলে ঝুলন দোলায় যুগল রাধা শ্যাম।
কিশোরী পাশে কিশোর হাসে ভাসে আনন্দ সাগরে আজ ব্রজধাম।।
তড়িত লতায় যেন জড়িত জলধরে
ওগো যুগল রূপ হেরি মুনির মনোহরে
পুলকে গগন ছাপিয়া বারি করে বাজে যমুনা তরঙ্গে শ্যাম শ্যাম নাম।।
বন ময়ুর নাচে ঘন দেয়ার তালে
দোলা লাগে কেতকী কদম ডালে।
আকাশে অনুরাগে ইন্দ্রধনু জাগে হেরে ত্রিলোক থির হয়ে রূপ অভিরাম।।

Categories

বকুল বনের পাখি ডাকিয়া আর ভেঙ্গো না ঘুম

বকুল বনের পাখি ডাকিয়া আর ভেঙ্গো না ঘুম
বকুল বাগানে মম, ফুরায়েছে ফুলের মরশুম॥
ওগো, প্রিয় মোর দূর বিদেশে কারে আর ডাকিছ পাখি
খুলিয়া পড়িছে হাতের, মলিন মালতী রাখি।
নিভিয়া গিয়াছে প্রদীপ রেখে গেছে স্মৃতির ধূম॥
ষোড়শী বাসন্তিকার রঙ দেহে মোর হয়েছে ম্লান।
খেলার সাথী পরদেশে, কারে দিই এ প্রীতির কুম্‌কুম্‌॥

Categories

বকুল তলে ব্যাকুল বাঁশি কে বাজায়

বকুল তলে ব্যাকুল বাঁশি কে বাজায়
যে বাঁশরি শুনে কিশোরী সহসা যেন গো যৌবন পায়॥
রয় না মন ঘরে সেই বাঁশির সুরে
দূরে ভেসে যেতে চায়
পরান ঘুরে মরে তাহার রাঙা পায়॥
তারি নূপুর শুনি নিশিদিনই প্রাণে মোর
নিশীথ রাতে আসে পাশে বসে মনোচোর।
তারে কি মালা দিব অশ্রু-মুক্তা গাঁথা
বিছাবো পথে কি তার মরা ফুল ঝরা পাতা
প্রাণের দীপালি জ্বালি তারি আশায়॥

Categories

বকুল চাঁপার বনে কে মোর চাঁদের স্বপন জাগালে

বকুল চাঁপার বনে কে মোর চাঁদের স্বপন জাগালে –
অনুরাগের সোনার রঙে হৃদয়-গগন রাঙালে।।
ঘুমিয়ে ছিলাম কুমুদ-কুঁড়ি বিজন ঝিলের নীল জলে
পূর্ণ শশী তুমি আসি’ আমার সে ঘুম ভাঙালে।।
হে মায়াবী তোমার ছোঁয়ায় সুন্দর আজ আমার তনু
তোমার মায়া রচিল মোর বাদল মেঘে ইন্দ্র ধনু।
তোমার টানে হে দরদি
দোল খেয়ে যায় কাঁদন-নদী
কূল হারা মোর ভালোবাসা আজকে কূলে লাগালে।।

Categories