কেন ডাক দিলি আমারে অকালে কেন জাগাইলি তোরা?
এখনও অরুণ হয়নি উদয়, তিমিররাত্রি ঘোরা!
কেন জাগাইলি তোরা?
যে আশ্বাসের বাণী শুনাইয়া পড়েছিনু ঘুমাইয়া
বনস্পতি হইয়া সে বীজ পড়েনি কি ছড়াইয়া–
দিগদিগন্তে প্রসারিয়া শাখা? বাঁধেনি সেথায় নীড়,
প্রাণ-চঞ্চল বিহগের দল করেনি সেথায় ভিড়?
যেখানে ছিল রে যত বন্ধন যত বাধা ভয় ভীতি
সেখানে তোদেরে লইয়া যে আমি আঘাত হেনেছি নিতি।
ভাঙিতে পারিনি, খুলিতে পারিনি দুয়ার, তবুও জানি–
সেই জড়ত্ব-ভরা কারাগারে ভীষণ আঘাত হানি–
ভিত্তি তাহার টলায়ে দিয়েছি, – আশা ছিল মোর মনে
অনাগত তোরা ভাঙিবি তাহারে সে কোন শুভক্ষণে॥
মহা সমাধির দিকহারা লোকে জানি না কোথায় ছিনু
আমারে খুঁজিতে সহসা সে কোন শক্তিরে পরশিনু –
সেই সে পরম শক্তিরে লয়ে আসিবার ছিল সাধ –
যে শক্তি লভি এল দুনিয়ায় প্রথম ঈদের চাঁদ –
তারই মাঝে কেন ঢাক-ঢোল লয়ে এলি সমাধির পাশে
ভাঙাইলি ঘুম? চাঁদ যে এখনও ওঠেনি নীল আকাশে।
ওরে তোরা থাম! শক্তি কাহারও নহে রে ইচ্ছাধীন –
রাত না পোহাতে চিৎকার করি আনিবি কি তোরা দিন?
এতদিন মার খেয়েছিস তোরা – তবুও আছিস বেঁচে,
মারের যাতনা ভুলিবি কি তায় ঢাক-ঢোল নিয়ে নেচে?
সূর্য-উদয় দেখেছিস কেউ – শান্ত প্রভাত বেলা?
উদার নীরব উদয় তাহার – নাই মাতামাতি খেলা;
তত শান্ত সে – যত সে তাহার বিপুল অভ্যুদয়,
তত সে পরম মৌনী যত সে পেয়েছে পরম অভয়!
দিকহারা ওই আকাশের পানে দেখ দেখ তোরা চেয়ে,
কেমন শান্ত ধ্রুব হয়ে আছে কোটি গ্রহ তারা পেয়ে।
ওই আকাশের প্রসাদে যে তোরা পাস বৃষ্টির জল
ওই আকাশেই ওঠে ধ্রুবতারা ভাস্কর নির্মল।
ওই আকাশেই ঝড় ওঠে – তবু শান্ত সে চিরদিন–
ওই আকাশের বুক চিরে আসে – বজ্র কুন্ঠাহীন!
ওই আকাশেই তকবির ওঠে – মহা আজানের ধ্বনি
ওই আকাশের পারে বাজে চির অভয়ের খঞ্জনি।
জানি ওরে মোর প্রিয়তম সখা বন্ধু তরুণ দল
তোদেরই ডাকে যে আসন আমার টলিতেছে টলমল!
তোদেরই ডাকে যে নামিছে পরম শক্তি, পরম জ্যোতি,
পরমামৃতে পূর্ণ হইবে মহাশূন্যের ক্ষতি।
‘মাহে রমজান’ এসেছে যখন, আসিবে ‘শবে কদর’,
নামিবে তাঁহার রহমত এই ধূলির ধরার পর।
এই উপবাসী আত্মা – এই যে উপবাসী জনগণ,
চিরকাল রোজা রাখিবে না – আসে শুভ ‘এফতার’ ক্ষণ!
আমি দেখিয়াছি – আসিছে তোদের উৎসব-ঈদ-চাঁদ, –
ওরে উপবাসী ডাক তাঁরে ডাক, তাঁর নাম লয়ে কাঁদ।
আমি নয় ওরে আমি নয় – ‘তিনি’ যদি চান ওরে তবে
সূর্য উঠিবে, আমার সহিত সবার প্রভাত হবে।