তোর কালো রূপ দেখতে মা গো

তোর কালো রূপ দেখতে মা গো
কালো হল মোর আঁখি।
চোখের ফাঁকে যাস পালিয়ে
মা তুই কালো পাখি॥
আমার নয়ন-দুয়ার বন্ধ করে এই দেহ-পিঞ্জরে
চঞ্চলা-গো বুকের মাঝে রাখি তোরে ধরে,
চোখ চেয়ে তাই খুঁজি তোরে পাইনে ভুবন ভরে
সাধ যায় মা জন্ম জন্ম অন্ধ হয়ে থাকি॥
তোর কালো রূপের বিজলি-চমক কোটি লোকের জ্যোতি,
অনন্ত তোর কালোতে মা, সকল আলোর গতি!
তোর কালো রূপকে বলে মা ‘তমঃ’,
ওই রূপে তুই মহাকালী মা গো নমো নমঃ
তুই আলোর আড়ালে টেনে মা গো
দিসনে মোরে ফাঁকি॥

Categories

তোর কালো রূপ লুকাতে মা বৃথাই আয়োজন

তোর কালো রূপ লুকাতে মা বৃথাই আয়োজন।
ঢাকতে নারে ও রূপ কোটি চন্দ্র ও তপন॥
মাখিয়ে কালো আমার চোখে
লুকিয়ে রাখিস তোর কালোকে
(তোর)কালো রূপে মা গো অখিল বিশ্ব নিমগন॥
আঁধার নিশীথ সে যেন তোর কালো রূপের ধ্যান
(তোর)গহন কালোয় গাহন করে পুড়ায় ধরার প্রাণ॥
হেরি তোর কালোরূপ স্নিগ্ধ করা
শ্যামা হল বসুন্ধরা,
নিবল কোটি সূর্য তোরে খুঁজে অনুক্ষণ॥

Categories

ঘুমায়েছে ফুল পথের ধূলায়

ঘুমায়েছে ফুল পথের ধূলায় (ওগো)
জাগিয়ো না উহারে ঘুমাইতে দাও।
বনের পাখী ধীরে গাহ গান
দখিনা হাওয়া ধীরে ধীরে বয়ে যাও।।

এখনো শুকায়নি চোখে তারই জল
এখনো আঁধারে হাসি ছলছল
প্রভাত রবি শুকায়ো না তায়
ধীরে কিরণে তাহারি নয়নে চাও।।

সামলে পথিক ফেলিয়ো চরন
ঝরেছে হেথায় ফুলেরও জীবন।
ভুলিয়া দল না ঝরা পাতাগুলি
ফুল সমাধি থাকিতে পারে হেথাও।।

Categories

বাঁশির কিশোর লুকায়ে হেরিছে একেলা

বাঁশির কিশোর লুকায়ে হেরিছে একেলা।
পিয়াল বনের পথে নিরালা সাঁঝের বেলা।

হেলে দুলে চলে কে কাঁখে গাগরি,
কাহার ঝিয়ারি, ও কাহার পিয়ারি ওই নবীনা নাগরি।।
নূপুর মিনতি করে কাঁদিয়া কাঁদিয়া
আমারে রাখিও চরণে বাঁধিয়া,
পিয়া পিয়া ব’লে ডেকে ওঠে পাপিয়া।
অঙ্গ জড়ায়ে দোলে আনন্দে ঘাগরি।।
চাঁদের মুখে যেন চন্দন মাখিয়া
কাজল কালো চোখের কলঙ্ক আঁকিয়া
আকাশ সম ওরে রেখেছে ঢাকিয়া নীলাম্বরী।।

Categories

সকাল হ’ল শোন রে আজান

সকাল হ’ল শোন রে আজান ওঠ রে শয্যা ছাড়ি’ তুই মসজিদে চল দ্বীনের কাজে ভোল দুনিয়াদারি।। ওজু করে ফেল রে ধুয়ে নিশীথ রাতের গ্লানি সিজদা করে জায়নামাজে ফেল রে চোখের পানি; খোদার নামে সারাদিনের কাজ হবে না ভারী।। নামাজ প’ড়ে দু’হাত তুলে প্রার্থনা কর তুই – ফুল-ফসলে ভ’রে উঠুক সকল চাষির ভূঁই সকল লোকের মুখে হোক আল্লার নাম জারী।। ছেলে-মেয়ে সংসার-ভার সঁপে দে আল্লারে নবীজীর দোয়া ভিক্ষা কর কর রে বারে বারে; তোর হেসে নিশি প্রভাত হবে সুখে দিবি পাড়ি।।



ওরে ও মদিনা বলতে পারিস কোন সে পথে তোর

ওরে ও মদিনা বলতে পারিস কোন সে পথে তোর
খেলত ধূলা-মাটি নিয়ে মা ফাতেমা মোর।।

হাসান হোসেন খেলত কোথায় কোন সে খেজুর বনে
পাথর-কুচি কাঁকর ল’য়ে দুম্বা শিশুর সনে
সেই মুখকে চাঁদ ভেবে রে উড়িত চকোর।।

মা আয়েশা মোর নবীজীর পা ধোয়াতেন যথা
দেখিয়ে দে সে বেহেশত আমায় রাখ রে আমার কথা;
তোর প্রথম কোথায় আজান-ধ্বনি ভাঙলো ঘুমের ঘোর।।

কোন পাহাড়ের ঝর্ণা-তীরে মেষ চরাতেন নবী
কোন পথ দিয়ে রে যেতেন হেরায় আমার আল-আরবি’
তুই কাঁদিস কোথায় বুকে ধরে সেই নবীজীর গোর।।

দূর আরবের স্বপন দেখি বাংলাদেশের কুটির হ’তে

দূর আরবের স্বপন দেখি বাংলাদেশের কুটির হ’তে।
বেহোশ হয়ে চলেছি যেন কেঁদে কেঁদে কা’বার পথে।।

হায় গো খোদা, কেন মোরে
পাঠাইলে হায় কাঙ্গাল ক’রে;
যেতে নারি প্রিয় নবীর মাজার শরীফ জিয়ারতে।।

স্বপ্নে শুনি নিতুই রাতে – যেন কা’বার মিনার থেকে
কাঁদছে বেলাল ঘুমন্ত সব মুসলিমেরে ডেকে ডেকে।
ইয়া এলাহি ! বল সে কবে
আমার স্বপন সফল হ’বে,
গরিব ব’লে হব কি নিরাশ, মদিনা দেখার নিয়ামতে।।

মম তনুর ময়ূর-সিংহাসনে

মম তনুর ময়ূর-সিংহাসনে এসো রূপকুমার ফর্‌হাদ্‌।
(মোর)ঘুম যবে ভাঙিল, প্রিয়, গগনে ঢলিয়া পড়িল চাঁদ।।
আমি শিঁরি – হেরেমের১ নন্দিনী গো
ছিনু অহঙ্কারের কারা-বন্দিনী গো,
ভেবেছিনু তুমি শুধু রূপের পাগল —
বুঝি নাই কা’রে বলে প্রেম-উন্মাদ।।
গিরি-পাষাণে আঁকিলে তুমি যে ছবি মম, দিলে যে মধু,
সেই মধু চেয়ে, সেই শিলা বুকে ল’য়ে কাঁদি,
ফিরে এসো, ফিরে এসো বঁধু।
ল’য়ে যাও সেই প্রেম-লোকে, বিরহী
কাঁদিছে যথায় ‘শিঁরি শিঁরি’ কহি’—
আজ ভরিয়াছে বিষাদের বিলাপে গোলাপের সাধ।।

Categories

অকাল সন্ধ্যা

[জয়জয়ন্তী কীর্তন]

খোলো মা দুয়ার খোলো
প্রভাতেই সন্ধ্যা হল
দুপুরেই ডুবল দিবাকর গো।
সমরে শয়ান ওই
সুত তোর বিশ্বজয়ী
কাঁদনের উঠছে তুফান ঝড় গো॥
সবারে বিলিয়ে সুধা,
সে নিল মৃত্যু-ক্ষুধা,
কুসুম ফেলে নিল খঞ্জর গো।
তাহারই অস্থি চিরে
দেবতা বজ্র গড়ে
নাশে ওই অসুর অসুন্দর গো।
ওই মা যায় সে হেসে।
দেবতার উপরে সে,
ধরা নয়, স্বর্গ তাহার ঘর গো॥
যাও বীর যাও গো চলে
চরণে মরণ দলে
করুক প্রণাম বিশ্ব-চরাচর গো।
তোমার ওই চিত্ত জ্বেলে
ভাঙ্গালে ঘুম ভাঙ্গালে
নিজে হায় নিবলে চিতার পর গো।
বেদনার শ্মশান-দহে
পুড়ালে আপন দেহে,
হেথা কি নাচবে না শংকর গো॥

অর্ঘ্য

হায় চির-ভোলা! হিমালয় হতে
অমৃত আনিতে গিয়া
ফিরিয়া এলে যে নীলকণ্ঠের
মৃত্যু-গরল পিয়া!
কেন এত ভালো বেসেছিলে তুমি
এই ধরণির ধূলি?
দেবতারা তাই দামামা বাজায়ে
স্বর্গে লইল তুলি!
হুগলি
৩রা আষাঢ়, ১৩৩২