[কীর্তন]
(আমি) চাইনে হতে ভ্যাবাগঙ্গারাম
ও দাদা শ্যাম!
তাই গান গাই আর যাই নেচে যাই
ঝম্ঝমা্ঝম্ অবিশ্রাম ॥
আমি সাইক্লোন আর তুফান
আমি দামোদরের বান
খোশখেয়ালে উড়াই ঢাকা, ডুবাই বর্ধমান।
আর শিবঠাকুরকে কাঠি করে বাজাই ব্রহ্মা-বিষ্ণু-ড্রাম॥
Kazi Nazrul Islam | কাজী নজরুল ইসলাম
National Poet of Bangladesh
[কীর্তন]
(আমি) চাইনে হতে ভ্যাবাগঙ্গারাম
ও দাদা শ্যাম!
তাই গান গাই আর যাই নেচে যাই
ঝম্ঝমা্ঝম্ অবিশ্রাম ॥
আমি সাইক্লোন আর তুফান
আমি দামোদরের বান
খোশখেয়ালে উড়াই ঢাকা, ডুবাই বর্ধমান।
আর শিবঠাকুরকে কাঠি করে বাজাই ব্রহ্মা-বিষ্ণু-ড্রাম॥
অঝোর ধারায় বর্ষা ঝরে সঘন তিমির রাতে।
নিদ্রা নাহি তোমায় চাহি’ আমার নয়ন-পাতে।।
ভেজা মাটির গন্ধ সনে
তোমার স্মৃতি আনে মনে,
বাদলী হাওয়া লুটিয়ে কাঁদেয়াঁধার আঙ্গিনাতে।।
হঠাত বনে আস্ল ফুলের বন্যা
পল্লবেরই কূলে
নাগকেশরের সাথে কদম কেয়া
ফুটল দুলে দুলে।
নবীন আমন ধানের ক্ষেতে
হতাশ বায়ু ওঠে মেতে,
মন উ’ড়ে যায় তোমার দেশে পূর্ব-হাওয়ারই সাথে।।
অয়ি চঞ্চল-লীলায়িত-দেহা, চির-চেনা
ফোটাও মনের বনে তুমি বকুল হেনা। চির-চেনা।।
যৌবন-মদ গর্বিতা তন্বী
আননে জ্যোৎস্না, নয়নে বহ্নি,
তব চরণের পরশ বিনা
অশোক তরু মুঞ্জরে না, চির-চেনা।।
নন্দন-নন্দিনী তুমি দয়িতা চির-আনন্দিতা,
প্রথম কবির প্রথম লেখা তুমি কবিতা।
নৃত্য শেষের তব নূপুরগুলি হায়
রয়েছে ছড়ানো আকাশের তারকায়
সুর-লোক-ঊর্বশী হে বসন্ত-সেনা! চির-চেনা।।
অরুন-রাঙা গোলাপ-কলি
কে নিবি সহেলি আয়।
গালে যার গোলাপী আভা
এ ফুল-কলি তারে চায়।।
ডালির ফুল যে শুকায়ে যায়
কোথায় লায়লী, শিরী কোথায়
কোথায় প্রেমিক বিরহী মজনু
এ ফুল দেব কাহার পায়।।
পূর্ণ চাঁদের এমন তিথি
ফুল-বিলাসী কই অতিথি
বুলবুলি বিনে এ গুল্ যে
অভিমানে মুরছায়।।
অরুণ-কান্তি কে গো যোগী ভিখারি।
নীরবে হেসে দাঁড়াইলে এসে
প্রখর তেজ তব নেহারিতে নারি।।
রাস-বিলাসিনী আমি আহিরিণী
শ্যামল কিশোর রূপ শুধু চিনি,
অম্বরে হেরি আজ একি জ্যোতিঃপূঞ্জ
হে গিরিজাপ তি! কোথা গিরিধারী।।
সম্বর সম্বর মহিমা তব, হে ব্রজেশ ভৈরব,
আমি ব্রজবালা।
হে শিব সুন্দর, বাঘছাল পরিহর, ধর নটবর–বেশ
পর নীপ–মালা।
নব মেঘ–চন্দনে ঢাকি’ অঙ্গজ্যোতি
প্রিয় হয়ে দেখা দাও ত্রিভুবন–পতি
পার্বতি নহি আমি, আমি শ্রীমতী
বিষাণ ফেলিয়া হও বাঁশরি–ধারী।।
অম্বরে মেঘ-মৃদঙ বাজে জলদ-তালে
লাগিল মাতন ঝড়ের নাচন ডালে ডালে।।
দিগন্তের ঐ দুর্গ-মূলে
ধূলি-গৈরিক কেতন দুলে
কে দুরন্ত আগল খুলে ঘুম ভাঙালে।।
থির সাগরের নীল তরঙ্গে আনন্দেরি
সেই নাচনের তালে তালে বাজিল ভেরি।
মাভৈঃ মাভৈঃ ডাক শুনি যার
পথ ছেড়ে দে রথ এল তাঁর।
দুর্দিনে সে বজ্র-শিখার আগুন জ্বালে।।
অন্তরে তুমি আছ চিরদিন ওগো অন্তর্যামী
বাহিরে বৃথাই যত খুঁজি তা-ই পাই না তোমারে আমি।।
প্রাণের মতন, আত্মার সম
আমাতে আছ হে অন্তরতম
মিন্দর রচি’ বিগ্রহ পূজি দেখে হাস তুমি স্বামী।।
সমীরণ সম, আলোর মতন বিশ্বে রয়েছ ছড়ায়ে
গন্ধ-কুসুমে সৌরভ সম প্রাণে-প্রাণে আছ জড়ায়ে।
তুমি বহুরূপী তুমি রূপহীন-
তব লীলা হেরি অন্তবিহিন।
তব লুকোচুরি খেলা সহচরী আমি যে দিবসযামী।।
অনেক ছিল বলার, যদি সেদিন ভালোবাস্তে গো।
পথ ছিল গো চলার, যদি দু’দিন আগে আস্তে গো।।
আজিকে মহাসাগর–স্রোতে, চলেছি দূর পারের পথে
ঝরা–পাতা হারায় যথা, সেই আঁধারে ভাস্তে গো।।
গহন রাতি ডাকে আমায় এলে তুমি আজ্কে
কাঁদিয়ে গেলে হায় গো আমার বিদায়–বেলার সাঁঝ্কে।
আস্তে যদি হে অতিথি
ছিল যখন শুক্লা তিথি
ফুটত চাঁপা, সেদিন যদি চৈতালী–চাঁদ হাস্তে।।
অনেক কথা বলার মাঝে লুকিয়ে আছে একটি কথা।
বলতে নারি সেই কথাটি তাই এ মুখর ব্যাকুলতা।।
সেই কথাটি ঢাকার ছলে
অনেক কথা যাই গো ব’লে
ভাসি আমি নয়ন-জলে বলতে গিয়ে সেই বারতা।।
অবকাশ দেবে কবে কবে সাহস পাবে প্রাণে
লজ্জা ভুলে সেই কথাটি বলব তোমায় কানে কানে।
মনের বনে অনুরাগে
কত কথার মুকুল লাগে
সেই মুকুলের বুকে জাগাও ফুটে ওঠার ব্যাকুলতা।।
অনাদি কাল হতে অনন্তলোক গাহে তোমারি জয়।
আকাশ–বাতাস রবি–গ্রহ তারা চাঁদ, হে প্রেমময়।।
সমুদ্র–কল্লোল নির্ঝর–কলতান –
হে বিরাট, তোমার উদার জয়গান;
ধ্যান গম্ভীর কত শত হিমালয় গাহে তোমারি জয়।।
তব নামের বাজায় বীণা বনের পল্লব
জনহীন প্রান্তর স্তব করে, নীরব।
সকল জাতির কোটি উপাসনালয় গাহে তোমারি জয়।।
আলোকের উল্লাসে, আঁধারের তন্দ্রায়
তব জয়গান বাজে অপরুপ মহিমায়,
কোটি যুগ–যুগান্ত সৃষ্টি প্রলয় গাহে তোমারি জয়।।