আসিলে এ ভাঙা ঘরে কে মোর রাঙা অতিথি

আসিলে এ ভাঙা ঘরে কে মোর রাঙা অতিথি।
হরষে বরিষে বারি শাওন-গগন তিতি’।।
বকুল-বনের সাকি নটীন পুবালি হাওয়া
বিলায় সুরভি-সুরা মাতায় কানন-বীথি।।
তিতির শিখীর সাথে নোটন-কপোতী নাচে;
ঝিঁঝির ঝিয়ারি গাহে ঝুমুর কাজরি-গীতি।
হিঙুল হিজল-তলে ডাহুক পিছল-আঁখি,
বধূর তমাল-চোখে ঘনায় নিশীথ-ভীতি।
তিমির-ময়ুর আজি তারার পেখম খোলে
জড়ায় গগন-গলে চাঁদের ষোড়শী তিথি।।

Categories

আমি যদি আরব হ’তাম – মদিনারই পথ

আমি যদি আরব হ’তাম – মদিনারই পথ।
এই পথে মোর চ’লে যেতেন নূর নবী হজরত।।
পয়জার তাঁর লাগত এসে আমার কঠিন বুকে,
আমি ঝর্না হয়ে গ’লে যেতাম অম্‌নি পরম সুখে;
সেই চিহ্ন বুকে পুরে পালিযে যেতাম কোহ্‌-ই-তুরে,
দিবা নিশি করতাম তাঁর কদম জিয়ারত।।
মা ফাতেমা খেলতো এসে আমার ধূলি ল’য়ে
আমি পড়তাম তাঁর পায়ে লুটিয়ে ফুলের রেণু হয়ে।
হাসান হোসেন হেসে হেসে নাচতো আমার
বক্ষে এসে চক্ষে আমার বইতো নদী পেয়ে সে নেয়ামত।।

Categories

আমি মূলতানী গাই

আমি মূলতানী গাই
শ্রোতারা বাছুর সম মুখপানে চেয়ে মম
ঘন ঘন তোলে হাই।।
জাপটে সুরের দাড়ি
শ্বশুরের দাড়ি, ভাসুরের দাড়ি
সাপটে তান মারি-আ-আ-আ
জাপটে সুরের দাড়ি
পমকে ধমক দেই, মীরে মাড় চটকাই।।
হায় হায় রে হায়-
বোলতানে আবোল-তাবোল তানে খেলি হা-ডু-ডু
কিত-কিত – হা-ডু-ডু- হা-ডু-ডু-কিত-কিত-কিত-কিত-কিত
মোড়-মোড়-মোড়
আমি বাটের চাট মেরে সুরে করি চিত
আমি তালের সিঙ দিয়ে বেদম গুতাই।।
মোর মুখের হা দেখে হিপোপটেমাস
আফ্রিকার জঙ্গলে ভয়ে করে বাস
আমি যত নাহি গাই তার অধিক রাগাই।।

Categories

আমি ময়নামতীর শাড়ি দেব

আমি ময়নামতীর শাড়ি দেব
চল আমার বাড়ি
ওগো বিন্‌গেরামের নারী
তোরে সোনাল ফুলের বাজু দেব
চুড়ি বেলোয়ারি।।
তোরে বৈঁচী ফুলের পৈঁচী দেব
কল্‌মিলতার বালা,
গলায় দেবো টাট্‌কা–তোলা ভাঁট্‌ ফুলেরই মালা।
রক্ত–শালুক দিব পায়ে,
পরবে আল্‌তা তা’রি।।
হলুদ–চাঁপার বরণ কন্যা এসো আমার নায়
সরষে ফুলের সোনার রেণু মাখাব ওই গায়!
ঠোঁটে দিব রাঙা পলাশ মহুয়া ফুলের মউ,
বকুল–ডালে ডাকবে পাখি,
‘বউ গো কথা কও!’
আমি সব দিব গো,
যা পারি আর যা দিতে না পারি।।

Categories

আমি প্রভাতী তারা পূর্বাচলে

আমি প্রভাতী তারা পূর্বাচলে
আশা-প্রদীপ আমি নিশির শীশ-মহলে।।
রাতের কপোলে আমি ছলছল অশ্রুর জল,
আমি ধরণীতে হিম-কণা টলমল, নব দুর্বাদলে।।
নব অরুণোদয়ের আমি ইঙ্গিত
বিহগ-কণ্ঠে আমি জাগাই শুভ-সঙ্গীত।
আমিকনক-কদম তিমির নীপ শাখায়
আমিমধ্যমণি মালিকায়, শ্যাম গগন-গলে।।

Categories

আমি পূরব দেশের পুরনারী

আমি পূরব দেশের পুরনারী (গো)।
গাগরি ভরিয়া এনেছি গো অমৃত-বারি।।
পদ্মকুলের আমি পদ্মিনী-বধূ
এনেছি শাপলা-পদ্মের মধু
ঘন বন ছায়ায় শ্যামলী মায়ায়
শান্তি আনিয়াছি ভরি’ হেমঝারি।।
আমি শঙ্খ-নগর হতে আনিয়াছি শাখা, অভয়শঙ্খ,
ঝিল্‌ ছেনে এনেছি সুনীল কাজল গো-
বিল্‌ ছেনে অনাবিল চন্দন-পঙ্ক (এনেছি)।
এনেছি, শত ব্রত-পার্বণ-উৎসব
এনেছি, সারস হংসের কলরব
এনেছি, নব আশা-ঊষার সিন্দুর
মেঘ-ডম্বরু সাথে মেঘ-ডুমুর শাড়ি।।

Categories

আমি পথ–মঞ্জরী ফুটেছি আঁধার রাতে

আমি পথ–মঞ্জরী ফুটেছি আঁধার রাতে।
গোপন অশ্রু–সম রাতের নয়ন–পাতে।।
দেবতা চাহে না মোরে গাঁথে না মালার ডোরে,
অভিমানে তাই ভোরে শুকাই শিশির–সাথে।।
মধুর সুরভি ছিল আমার পরাণ ভরা,
আমার কামনা ছিল মালা হয়ে ঝ’রে পড়া।
ভালোবাসা পেয়ে যদি আমি কাঁদিতাম নিরবধি,
সে–বেদনা ছিল ভালো, সুখ ছিল সে–কাঁদাতে।।

Categories

আমি পথ-ভোলা ভিনদেশি গানের পাখি

আমি পথ-ভোলা ভিনদেশি গানের পাখি
তোমাদের সুরের সভায় এই অজানায় লহ গো ডাকি’।।
তোমরা বেঁধেছে বাসা যে তরু-শাখায়
আমারে বসিতে দিও তাহারি ছায়ায়
গাহিবার আছে আশা, জানি না গানের ভাষা
তবু ভালোবাসা দিয়ে বাঁধ গো রাখি।।
মায়াময় তোমাদের তরুলতা, ফুল
তোমাদের গান শুনে’ পথ হ’ল ভুল।
যেন শতবার এসে’ জন্মেছি এই দেশে-
বন্ধু হে বন্ধু, অতিথিরে চিনিবে না-কি।।

Categories

আমি নামের নেশায় শিশুর মতো ডাকি গো মা ব’লে

আমি নামের নেশায় শিশুর মতো ডাকি গো মা ব’লে
নাই দিলি তুই সাড়া মা গো নাই নিলি তুই কোলে।।
শুনলে ‘মা’ নাম জেগে উঠি
ব্যাকুল হয়ে বাইরে ছুটি
মাগো ঐ নামে মোর নয়ন দু’টি ভ’রে ওঠে জলে।।
ও নাম আমার মুখের বুলি ও নাম খেলার সাথি
ও নাম বুকে জড়িয়ে ধ’রে পোহাই দুখের রাতি।
মা হারানো শিশুর মতো
যপি ও নাম অবিরত
মা ঐ নামের মন্ত্র আমার বুকে কবচ হয়ে দোলে।।

Categories

আমারশ্যামা মায়ের কোলে চ’ড়ে জপি আমি

আমারশ্যামা মায়ের কোলে চ’ড়ে জপি আমি
শ্যামের নাম মা হলেন মোর মন্ত্র-গুরু ঠাকুর হলেন রাধা-শ্যাম।।
ডুবে শ্যামা-যমুনাতে মাখেলবো খেলা শ্যামের সাথে
শ্যাম যবে মোরে হানবে হেলা মা ফুরাবেন মনস্কাম।।
আমার মনের দোতারাতে শ্যাম ও শ্যামা দুটি তার,
সেই দোতারায় ঝঙ্কার দেয় ওঙ্কার রব অনিবার।
মহামায়া মায়ার ডোরে আনবে বেঁধে শ্যাম-কিশোরে
আমিকৈলাসে তাই মাকে ডাকি দেখবো সেথা ব্রজধাম।।

Categories