গরজে গম্ভীর গগনে কম্বু।
নাচিছে সুন্দর নাচে স্বয়ম্ভূ।
সে নাচ হিল্লোলে জটা আবর্তনে
সাগর ছুটে আসে গগন প্রাঙ্গনে
আকাশে শূল হানি, শোনাও নব বাণী
তরাসে কাঁপে প্রাণী প্রসীদ শম্ভু।।
ললাট শশী টলি জটায় পড়ে ঢলি,
সে শশী চমকেগো বিজুলি ওঠে ঝলি।
ঝাঁপে নীলাঞ্চলে মুখ দিগঙ্গনা
মুরছে ভয় ভীতা নিশি নিরঞ্জনা
আঁধারে পথ হারা চাতকী কেঁদে সারা
যাচিছে বারিধারা ধরা নিরম্বু।।
গ
গানের সাথি আছে আমার সুরের সেতু-পারে
গানের সাথি আছে আমার সুরের সেতু-পারে।
তা’রি আশায় গানের ভেলা ভাসাই পারাবারে।।
জানি জানি আমার এ সুর
পাবেই পাবে চরণ বঁধুর
ঐ ভেলাতে আসবে বঁধু গভীর অন্ধকারে।।
ঘুমে যখন মগ্ন সবাই বন্ধু আমার আসে
ফুলের মতন সুরগুলি তার মুখ চেয়ে’হাসে।
উদ্দেশে তার গানগুলি মোর
যায় ভেসে যায় নেশায় বিভোর
যেমন ক’রে ছায় গো তপন চাঁদের অধিকারে।।
গানগুলি মোর আহত পাখির সম
গানগুলি মোর আহত পাখির সম
লুটাইয়া পড়ে তব পায়ে প্রিয়তম।।
বাণ–বেঁধা মোর গানের পাখিরে
তু’লে নিও প্রিয় তব বুকে ধীরে,
লভিবে মরণ চরণে তোমার সুন্দর অনুপম।।
তারা সুখের পাখায় উড়িতেছিল গো নভে –
তব নয়ন–শায়কে বিঁধিলে তাহাদের কবে।
মৃত্যু আহত কন্ঠে তাহার
একি এ গানের জাগিল জোয়ার –
মরণ বিষাদে অমৃতের স্বাদ আনিলে নিষাদ মম।।
গহীন রাতে ঘুম কে এলে ভাঙাতে
গহীন রাতে ঘুম কে এলে ভাঙাতে
ফুল-হার পরায়ে গলে দিলে জল নয়ন-পাতে।।
যে জ্বালা পেনু জীবনে
ভুলেছি রাতে স্বপনে
কে তুমি এসে গোপনে ছুঁইলে সে বেদনাতে।।
যবে কেঁদেছি একাকী
কেন মুছালে না আঁখি
নিশি আর নাহি বাকি, বাসি ফুল ঝরিবে প্রাতে।।
গহন বনে শ্রীহরি নামের মোহন বাঁশি কে বাজায়
গহন বনে শ্রীহরি নামের মোহন বাঁশি কে বাজায়।
ভুবন ভরি’ সেই সুরেরি সুরধুনি বয়ে যায়।।
সেই নামেরি বাঁশির সুরে, বনে পূজার কুসুম ঝুরে
সেই নামেরি নামাবলি, গ্রহ তারা আকাশ জুড়ে
অন্ত বিহীন সেই নামেরি সুর-স্রোতে কে ভাসবি আয়।।
চলচ্চিত্রঃ ধ্রুব (কাহিনীকার: গিরিশ ঘোষ)
গলে টগর মালা কাদের ডাগর মেয়ে
গলে টগর মালা কাদের ডাগর মেয়ে
যেন রূপের সাগর চলে উজান বেয়ে॥
তার সুডোল তনু নিটোল বাহুর পরে
চাঁদের আলো যেন পিছ্লে পড়ে
ও কি বিজলি পরী এলো মেঘ পাসরি’
চাঁদ ভুলে যায় লোকে তার নয়নে চেয়ে॥
যেন রূপকথার দেশের সে রাজকুমারী
রামধনুর রঙ ঝরে অঙ্গে তারি
মদন রতি করে তার আরতি
তার রূপের মায়া দুলে ভুবন ছেয়ে॥
গভীর রাতে জাগি’ খুঁজি তোমারে
গভীর রাতে জাগি’ খুঁজি তোমারে।
দূর গগনে প্রিয় তিমির–‘পারে।।
জেগে যবে দেখি বঁধু তুমি নাই কাছে
আঙিনায় ফুটে’ ফুল ঝ’রে পড়ে আছে,
বাণ–বেঁধা পাখি সম আহত এ প্রাণ মম –
লুটায়ে লুটায়ে কাঁদে অন্ধকারে।।
মৌনা নিঝুম ধরা, ঘুমায়েছে সবে,
এসো প্রিয়, এই বেলা বক্ষে নীরবে।
কত কথা কাঁটা হ’য়ে বুকে আছে বিঁধে
কত আভিমান কত জ্বালা এই হৃদে,
দেখে যাও এসো প্রিয়১ কত সাধ ঝ’রে গেল –
কত আশা ম’রে গেল হাহাকারে।।
গভীর নিশীথে ঘুম ভেঙ্গে যায়
গভীর নিশীথে ঘুম ভেঙ্গে যায়, কে যেন আমারে ডাকে –
সে কি তুমি, সে কি তুমি?
কার স্মৃতি বুকে পাষাণের মত ভার হয়ে যেন থাকে –
সে কি তুমি, সে কি তুমি?
কাহার ক্ষুধিত প্রেম যেন, হায়, ভিক্ষা চাহিয়া কাঁদিয়া বেড়ায়;
কার সকরুণ আঁখি দু’টি যেন রাতের তারার মত
মুখপানে চেয়ে থাকে – সে কি তুমি, সে কি তুমি?
নিশির বাতাস কাহার হুতাশ দীরঘ নিশাস সম
ঝড় তোলে এসে অন্তরে মোর, ওগো দুরন্ত মম।
সে কি তুমি, সে কি তুমি?
মহাসাগরের ঢেউ–এর মতন, বুকে এসে বাজে কাহার রোদন,
‘পিয়া পিয়া’ নাম জপে অবিরাম বনের পাপিয়া পাখি
আমার চম্পা শাখে – সে কি তুমি, সে কি তুমি?
গঙ্গা সিন্ধু নর্মদা কাবেরী যমুনা ঐ
গঙ্গা সিন্ধু নর্মদা কাবেরী যমুনা ঐ
বহিয়া চলেছে আগের মতন, কই রে আগের মানুষ কই।।
মৌনী স্তব্ধ সে হিমালয়
তেমনই অটল মহিমাময়
নাহি তার সাথে সেই ধ্যানী ঋষি, আমরাও আর সে জাতি নই।।
আছে আকাশ সে ইন্দ্র নাই
কৈলাসে সে যোগীন্দ্র নাই
অন্নদা–সুত ভিক্ষা চাই কি কহিব এরে কপাল বৈ।।
সেই আগ্রা সে দিল্লী ভাই
আছে প’ড়ে সেই বাদশা নাই
নাই কোহিনূর ময়ূর–তখত নাই সে বাহিনী বিশ্বজয়ী।
আমারা জানি না, জানে না কেউ
কুলে ব’সে কত গণিব ঢেউ
দেখিয়াছি কত দেখিব এও নিঠুর বিধির লীলা কতই।।
গগনে সঘন চমকিছে দামিনী
গগনে সঘন চমকিছে দামিনী
মেঘ-ঘন-রস রিমঝিম বরষে।
একেলা ভবনে বসি’ বাতায়নে
পথ চাহে বিরহিণী কামিনী।।
পূবালি পবন বহে দাদুরি ডাকে,
অভিসারে চলে খুঁজে’ কাহাকে।
বৈরাগিনী সাজে উন্মনা যামিনী।।