তুমি সারাজীবন দুঃখ দিলে, তব দুঃখ দেওয়া কি ফুরাবে না!
যে ভালোবাসায় দুঃখে ভাসায় সে কি আশা পূরাবে না॥
মোর জনম গেল ঝুরে ঝুরে – লোকে লোকে ঘুরে ঘুরে,
তব স্নিগ্ধ পরশ দিয়ে কি, নাথ, দগ্ধ হিয়া জুড়াবে না॥
তুমি অশ্রুতে যে-বুক ভাসালে –
সেই বক্ষে এসো দিন ফুরালে
তুমি আঘাত দিয়ে ফুল ঝরালে, হাত দিয়ে কি কুড়াবে না॥
ত
তুমি শুনিতে চেয়ো না আমার মনের কথা
তুমি শুনিতে চেয়ো না আমার মনের কথা
দখিনা বাতাস ইঙ্গিতে বোঝে
কহে যাহা বনলতা।।
চুপ ক’রে চাঁদ সুদুর গগনে
মহা-সাগরের ক্রন্দন শোনে,
ভ্রমর কাদিঁয়া ভাঙিতে পারে না
কুসুমের নীরবতা।।
মনের কথা কি মুখে সব বলা যায়?
রাতের আঁধার যত তারা ফোটে
আখিঁ কি দেখিতে পায়?
পাখায় পাখায় বাঁধা যবে রয়
বিহদ-মিথুন কথা নাহি কয়,
মধুকর যবে ফুলে মধু পায়
রহে না চঞ্চলতা।।
গীতিচিত্রঃ অতনুর দেশ
তুমি লহ প্রভু আমার সংসারেরি ভার লহ সংসারেরি ভার
তুমি লহ প্রভু আমার সংসারেরি ভার লহ সংসারেরি ভার
আজকে অতি ক্লান্তআমি বইতে নারি আর
এ ভার বইতে নারি আর।।
সংসারেরি তরে খেটে
জনম আমার গেল কেটে
(ওরে) তবু অভাব ঘুচল না (আমার) হায় খাটাই হল সার।।
বিফল যখন হলাম পেতে সবার কাছে হাত
তখন তোমায় পড়ল মনে হে অনাথের নাথ।
অভাবকে আর করি না ভয়
তোমার ভাবে মগ্ন হৃদয়
তোমায় ফিরিয়ে দিলাম হে মায়াময় তোমারি সংসার।।
তুই জগত-জননী শ্যামা আমি কি মা জগত ছাড়া
তুই জগত-জননী শ্যামা আমি কি মা জগত ছাড়া,
কোন দোষে মা তুই থাকিতে আমি চির মাতৃহারা।।
পুত্র অপরাধী ব’লে মা কি তারে নেয় না কোলে,
মা শাসন করে মারে-ধরে তবু কাছ ছাড়া করে না তারা।
কোন দোষে মা তুই থঅকিতে আমি চির মাতৃহারা।।
ছেলের চোখে ঠুলি দিয়ে কি মা নিজেরে লুকিয়ে রাখে
ছেলের দুঃখে মা উদাসীন দেখিনি তো এমন মাকে।
মাতৃস্নেহ পেলে শ্যামা এমন মন্দমতি হতেম না মা
তুই যাহারে হানিস হেলা তার কে মোছাবে নয়ন-ধারা
কোন দোষে মা তুই থাকিতে আমি চির মাতৃহারা।।
তুই কে ছিলি তাই বল
তুই কে ছিলি তাই বল?
কোন কাননের পুষ্পরানী কোন সরসীর জল।।
তুই কি ছিলি কবিতা আর আমি চরণ তা’রি
তুই কি ছিলি পিয়াসি শুক আমি আতুর সারী
তুই কি দুঃখী দুয়োরানী আমি চোখের জল।।
কোন বরষার সিক্ত প্রাতে
কোন শরতের জোছনা রাতে
কোন জগতের অরুণ ঊষার প্রথম দেখা বল।।
নতুন মোদের নতুন ক’রে পরিচয়ের পালা
কন্ঠে মোদের মিলন-বাণী হাতে মিলন-মালা
মোরা এক বিরহীর দু’টি চোখের ঝরা দু’টি মুক্তাফল।।
তিলক দিলে কি শ্যাম ত্রিলোক ভুলাতে
তিলক দিলে কি শ্যাম ত্রিলোক ভুলাতে?
কে দিল বনমালী বনমালা গলাতে?
আঁখি যেন ঢলঢল আধফোটা শতদল
কে শিখাল ও চাহনি গোপিনী ছলিতে?
তিমির বিদারী অলখ-বিহারী কৃষ্ণ মুরারি আগত ঐ
তিমির বিদারী অলখ-বিহারী কৃষ্ণ মুরারি আগত ঐ
টুটিল আগল নিখিল পাগল সর্বসহা আজি সর্বজয়ী।।
বহিছে উজান অশ্রু-যমুনায়
বসুধা যশোদার স্নেহধার উথলায়
(ওগো) কাল-রাখাল নাচে থৈ-তা-থৈ।।
বিশ্ব ভরি’ ওঠে স্তব নমো নমঃ
অরির পুরী-মাঝে এলো অরিন্দম।
ঘিরিয়া দ্বার বৃথা জাগে প্রহরী জন
বন্ধ কারায় এলো বন্ধ-বিমোচন,
ধরি’ অজানা পথ আসিল অনাগত
জাগিয়া ব্যথাহত ডাকে, মাভৈঃ।।
তরুণ প্রেমিক প্রণয় বেদন জানাও জানাও বেদিল প্রিয়ায়
তরুণ প্রেমিক প্রণয় বেদন জানাও জানাও বেদিল প্রিয়ায়।
ওগো বিজয়ী নিখিল হৃদয় কর কর জয় মোহন মায়ায়।।
নহে ঐ এক হিয়ার সমান হাজার কাবা হাজার মস্জিদ;
কি হবে তোর কাবার খোঁজে, আশয় খোঁজ তোর হৃদয় ছায়ায়।।
প্রেমের আলোয় যে দিল্ রোশন, যেথায় থাকুক সমান তাহার –
খোদার মস্জিদ মুরত–মন্দির ঈসাই–দেউল ইহুদ–খানায়।।
অমর তার নাম প্রেমের খাতায় জ্যোতির্লেখায় রবে লেখা,
দোজখের ভয় করে না সে, থাকে না সে বেহেশ্ত্ আশায়।।
তব মুখখানি খুঁজিয়া ফিরি গো সকল ফুলের মুখে
তব মুখখানি খুঁজিয়া ফিরি গো সকল ফুলের মুখে
ফুল ঝ’রে যায় তব স্মৃতি জাগে কাঁটার মতন বুকে।।
তব প্রিয় নাম ধ’রে ডাকি
ফুল সাড়া দেয় মেলি’ আঁখি
তোমার নয়ন ফুটিল না হায় ফুলের মতন সুখে।।
তোমার বিরহে আমার ভুবনে ওঠে রোদনের বাণী,
কানাকানি করে চাঁদ ও তারায় জানি গো তোমারে জানি।
খুঁজি বিজলি প্রদীপ জ্বেলে’
কাঁদি ঝঞ্ঝার পাখা মেলে’
অন্ধ-গগনে আঁধার মেঘের ঢেউ ওঠে মোর দুখে।।
তব চঞ্চল আঁখি কেন ছলছল হে
তব চঞ্চল আঁখি কেন ছলছল হে।
হেরি মোরা অবিরল জলে ভাসে কমল
হেরি আজি কমলে উথলে জল হে।।
চিরদিন কাঁদায়েছে যে জল নিঠুর
আজি অশ্রু করেছে তারে একি সুমধুর
বঁধু সাধ যায় ধরি তব সমুখে মুকুর
যেন বরষিছে চাঁদ মুকুতাদল হে।
কোন অকরুণা ভাঙিল হে পাষাণের বাঁধ
তব কলঙ্ক লেখা গেল ধুয়ে যে হে চাঁদ।
কাঁদ কাঁদ হে বঁধু তবে বুঝিবে মনে
কত বেদনা পেলে জল ঝরে নয়নে
আজি কাঁদিয়া শ্যামল হ’লে নির্মল হে।।