মোরা এক বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান

মোরা এক বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান।
মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ।।
এক সে আকাশ মায়ের কোলে
যেন রবি শশী দোলে,
এক রক্ত বুকের তলে, এক সে নাড়ির টান।।
এক সে দেশের খাই গো হাওয়া, এক সে দেশের জল,
এক সে মায়ের বক্ষে ফলাই একই ফুল ও ফল।
এক সে দেশের মাটিতে পাই
কেউ গোরে কেউ শ্মাশানে ঠাঁই
এক ভাষাতে মা’কে ডাকি, এক সুরে গাই গান।।

নাটিকাঃ‘পুতুলের বিয়ে’

Categories

মুরলী শিখিব ব’লে এসেছি কদম্ব তলে

মুরলী শিখিব ব’লে এসেছি কদম্ব তলে
মুরলীধারী মুরলী শিখাও হে
কোন সুরে মধু-মাধবী ফোটে
কোন সুরে রাধা নাম ওঠে
মাধব হে! বাঁশির কোন সুরে
উদাসী করে প্রাণ দাসী করে, মাধব হে-
দেহ ময়ুর নাচে কোন সুর শুনিয়া
মন-পাপিয়া গেয়ে ওঠে পিয়া পিয়া
মোরে শিখাও সে সুর হে-
যে সুরে তুমি নাচিবে, পিয়া ব’লে ডাকিবে
মোরে শিখাও সে সুর হে বঁধু
যে সুরে কেবল তব সাথে ভাব হয় অভাব রয় না
আমি সেই সুর শিখিব
যে সুর কৃষ্ণ ছাড়া কোন কথা কয় না
কেন ছলছল চোখে চাও
মুরলী শিখাও কেন হাত কাপে রসময়।
যে সুর তোমার অধর পরশ লাগে
সেই বেনু যেন চিরদিন রাধারই রয় বেনু শিখাও হে
মোর দেহ মন ধায় যেন ধেনু সম তব পানে বেণু শিখাও হে।।

Categories

মুখে তোমার মধুর হাসি হাতে কুটিল ফাঁসি

মুখে তোমার মধুর হাসি হাতে কুটিল ফাঁসি।
সুন্দর চোর, চিনি তোমায় তবু ভালোবাসি।।
শত ব্রজে কেঁদে মরে
শত রাধা তোমার তরে,
কত গোকুল ডুবলো অকূল আঁখির নীরে ভাসি’।।
কত নারীর মন গেঁথে, নাথ, পরলে বন-মালা,
যমুনাতে ডুবালে শ্যাম কত কুলের বালা।
দেখাও আসল হাত দু’খানি-
করাল গদার চক্রপাণি,
তব এ দু’টি হাত ছলনা, নাথ, বাজাও যে হাতে বাঁশি।।

Categories

মুখে কেন নাহি বলো আঁখিতে যে কথা কহো

মুখে কেন নাহি বলো আঁখিতে যে কথা কহো
অন্তরে যদি চাহো মোরে তবে কেন দূরে দূরে রহো।।
প্রেম -দীপ শিখা অন্তরে যদি জ্বলে
কেন চাহো তারে লুকাইতে অঞ্চলে
পূজিবে না যদি সুন্দরে রূপ -অঞ্জলি কেন বহো।।
ফুটিলে কুসুম -কলি রহে না পাতার তলে,
কুণ্ঠা ভুলিয়া দখিনা-বায়ের কানে কানে কথা বলে।
যে অমৃত-ধারা উথলে হৃদয় মাঝে
রুধিয়া তাহারে রেখো না হৃদয় লাজে
প্রাণ কাঁদে যার লাগি, তারে কেন বিরহ দহনে দহো।।

Categories

মুক্তি আমায় দিলে হে নাথ মোর যে প্রিয় তারে নিয়ে

মুক্তি আমায় দিলে হে নাথ মোর যে প্রিয় তারে নিয়ে।
আমি কিছু রাখতে নারি দেখ্‌লে বারে বারে দিয়ে॥
যত্ন আদর পায়নি হেথা
স’য়ে গেল শত ব্যথা।
তোমার দান সইলো না মোর গেল বুঝি তাই হারিয়ে॥
তোমার প্রিয় এসেছিল অতীত হয়ে আমার দ্বারে,
ফিরে গেল অভিমানে বুঝি আমার অনাদরে।
যে ছিল নাথ মোর প্রাণাধিক
সে যে তোমার বুকের মানিক
(প্রভু) এবার সে আর হারাবে না বাঁচ্‌ল তোমার কাছে গিয়ে॥

Categories

মায়ের চেয়েও শান্তিময়ী মিষ্টি বেশি মেয়ের চেয়ে

মায়ের চেয়েও শান্তিময়ী মিষ্টি বেশি মেয়ের চেয়ে
চঞ্চলা এই লীলাময়ী মুক্তকেশী কালো মেয়ে।।
সে মিষ্টি যত দুষ্টু তত এই কালো মেয়ে
গিরিঝর্ণা সম এলো ধেয়ে এই পাবর্তী মেয়ে
করুণা অমৃত ধারায় ভুবন ছেয়ে এলো এই কালো মেয়ে।।
মাকে চোখে চোখে রাখি
যদি কভু দেয় সে ফাঁকি
আমি ভয়ে ভয়ে থাকি গো
এই মায়াময়ী মেয়ে নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকি গো।
আমি বহু সাধ্য-সাধনাতে পেয়েছি এই মা-কে রে
কোটি জনম তপস্যাতে পেয়েছি এই মা-কে রে
কোথায় রাখি, আমি কাঙালিনী
কোথায় রাখি স্বর্গের এই রত্ন পেয়ে
আমি কোথায় রাখি স্বর্গের এই রত্ন পেয়ে।।

Categories

মালা যদি মোর ধূলায় মলিন হয়

মালা যদি মোর ধূলায় মলিন হয়
ব’সে আছি তাই অঞ্চলে নিয়ে কুসুমেরি সঞ্চয়।।
ফুলহার যদি কর অবহেলা
তাই ভাবি আর ব’য়ে যায় বেলা
হৃদয়ে থাকুক লুকানো আমার হৃদয়ের পরিচয়।।
বিফল যদি গো হয় পূজা নিবেদন
মন্দির-দ্বারে দাঁড়াইয়া তাই পাষাণেরই নারায়ণ।।
কেন কাছে আসি, এসে ফিরে যাই
যদি ফেল জেনে ভয় মানি তাই
সকলি সহিব, সহিতে নারিব হৃদয়ের পরাজয়।।

Categories

মাধব গোবিন্দ শ্রীকৃষ্ণ মুরারি

মাধব গোবিন্দ শ্রীকৃষ্ণ মুরারি॥
কহ নাম মুখে গাহ সুখে দুখে
মণিহারই করে গেঁথে রাখ বুকে
গোলকে হরি তার সখা সাথী প্যারী॥
পেল না ব্রহ্মা শিব ধেয়ানে যাহারে
বাঁধিল গোকুলে গোয়ালিনী তারে
যুগে যুগে সে যে প্রেমের ভিখারি॥
লীলা রসে তাহার ডুবে রও অবিরাম
এ সংসার হবে রে সুমধুর ব্রজধাম
ধরিবেন হৃদয়ে তোরে গিরিধারী॥

Categories

মাগো চিন্ময়ী রূপ ধ’রে আয়

মাগো চিন্ময়ী রূপ ধ’রে আয়।
মৃন্ময়ী রূপ তোর পূজি শ্রী দুর্গা তাই গুর্গতি কাটিল না হায়॥
যে মহা-শক্তির হয় না বিসর্জন
অন্তরে বাহিরে প্রকাশ যার অনুখন
মন্দিরে দুর্গে রহে না যে বন্দী সেই দুর্গারে দেশ চায়॥
আমাদের দ্বিভুজে দশভুজা-শক্তি দে পরম ব্রহ্মময়ী।
শক্তিপূজার ফল ভক্তি কি পাব শুধু হব না কি বিশ্বজয়ী ?
এই পূজা-বিলাস সংহার র্ক যদি, পুত্র শক্তি নাহি পায়॥

Categories

মা-মা-মা-মা-মা-মাগো

মা-মা-মা-মা-মা-মাগো
এবারের পূজা মাগো দশভূজা বড় দুর্গতিময়।
পড়েছিস এ.বি.সি.ডি? বুঝিস ব্ল্যাক আউট কারে কয়?
ব্ল্যাক আউট মানে যত কালো ছিল বাহির হয়েছে মাগো
যত আলো ছিল যত ভালো ছিল, সকলেরে বলে ভাগো।
ডাইনে বাঁ ধারে ভীষণ আঁধারে হাঁটু কাঁপে আর হাঁটি
আমড়ার মত হয়ে আছি মাগো চামড়া এবং আঁটি।
নন্দী ভৃঙ্গী সিঙ্গি যাইলে তাহারাও ভয় পাবে
তাদের দিব্য দৃষ্টি লয়েও মাগো আঁধারে হোঁচট খাবে।
বলি বিগ্রহ তোর কে দেখিতে যাবে মা কুগ্রহের ফেরে
বিড়ি খেয়ে ফেরে গুন্ডারা যদি দেয় মাগো ভুঁড়ি ফেড়ে।
মা তুই বর দেওয়ার আগেই বর্বরেরা এসে
ঠেসে ধরে নিয়ে যাবে চিত্রগুপ্তের দেশে।
চোঁয়া ঢেকুর ওঠে মা মেকুর ডাকিলে কেঁদে উঠি ওঙা ওঙা;
ঢেঁকির আওয়াজ শুনলে মাগো ভয়ে খাড়া হয়ে ওঠে রোঁয়া।
সত্য পথে মা চলিতে পারি না পথে কাদা রাখে ফেলে
উচিত কথা মাগো বলিতে পারি না চিৎ করে দেয় ফেলে।
এ চিতে শক্তি দে মা চিৎ করবো ভয়কে
বলবো এবার তোরে খাব দে মা মাগো মা॥

নাট্য-গ্রন্থঃ ‘ব্লাক আউট’
ব্ল্যাক আউট নাট্রগ্রন্থের এই পাঠকে, আদি রেকর্ডের (এন. ২৭২০৬) পাঠের তুলনায়, স্বতন্ত্র গান হিসাবে বিবেচনা করা যায়।
[অগ্রন্থিত নজরুল, সংকলন ও সম্পাদনাঃ ব্রহ্মমোহন ঠাকুর, ডি.এম. লাইব্রেরি, কলকাতা, ২০০৩]

Categories