স
সেই রবিয়ল আউয়ালেরই চাঁদ এসেছে ফিরে
সেই রবিয়ল আউয়ালেরই চাঁদ এসেছে ফিরে
ভেসে আকুল অশ্রুনীরে।
আজ মদিনার গোলাপ বাগে বাতাস বহে ধীরে
ভেসে আকুল অশ্রুনীরে।।
তপ্ত বুকে আজ সাহারার
উঠেছে রে ঘোর হাহাকার
মরুর দেশে এলো আঁধার শোকের বাদল ঘিরে।।
চবুতরায় বিলাপ করে কবুতরগুলি খোঁজে নবীজীরে।
কাঁদিছে মেষশাবক, কাঁদে বনের বুলবুলি গোরস্থান ঘিরে।
মা ফাতেমা লুটিয়ে প’ড়ে
কাঁদে নবীর বুকের পরে
আজ দুনিয়া জাহান কাঁদে কর হানি শিরে।।
[তিরোভাব] সেই রবিয়ল আউয়ালেরই চাঁদ
তাল : বৈতালিক
আদি রেকর্ডিং : ১৯৩৭
কথা ও সুর : কাজী নজরুল ইসলাম
শিল্পী : আব্বাসউদ্দীন আহমদ ও মহম্মদ কাশেম (কে মল্লিক)
সন্ধ্যা হলো ঘরকে চলো, ও ভাই মাঠের চাষি
সন্ধ্যা হলো ঘরকে চলো, ও ভাই মাঠের চাষি
ভাটিয়ালি সুরে বাজে রাখাল ছেলের বাঁশি।।
পিদিম নিয়ে একলা জাগে একলা ঘরের বধূ
হৃদয়-পাতে লুকিয়ে রেখে সারা দিনের মধু;
পথ চেয়ে সে বসে আছে কাজ হয়েছে বাসি রে তার
কাজ হয়েছে বাসি।
(যে) মন সারাদিন ছিল পড়ে হালের গরুর পানে,
দিনের শেষে ঘরের জরু সেই মনকে টানে
সেথা মেটে ঘরের দাওয়ায় লুটায় রে
মেটে ঘরের দাওয়ায় লুটায় কালো চোখের হাসি রে ভাই
কালো চোখের হাসি।
পুবান হাওয়া ঢেউ দিয়ে যায় আউশ ধানের ক্ষেতে,
এই ফসলের দেখব স্বপন শুয়ে শুয়ে রেতে;
ও ভাই শুয়ে শুয়ে রেতে
সকাল বেলা আবার যেন মাঠে ফিরে আসি রে
এই মাঠে ফিরে আসি।।
সাহারাতে ফুটলরে ফুল রঙ্গীন গুলে- লালা
সাহারাতে ফুটলরে ফুল রঙ্গীন গুলে- লালা
সেই ফুলেরই খোশবুতে আজ দুনিয়া মাতোয়ালা।।
সে ফুল নিয়ে কাড়াকাড়ি চাঁদ- সুরুয, গ্রহ- তারায়
ঝুঁকে পড়ে চুমে সে ফুল নীল গগন নিরালা।।
সেই ফুলেরই রওশনীতে আরশ কুর্শী রওশন,
সেই ফুলেরই রং লেগে আজ ত্রিভুবন উজালা।।
সেই ফুলেরই গুলিস্তানে আসে লাখো পাখী,
সে ফুলেরে ধরতে বুকে দোলে রে ডাল- পালা।।
চাহে সে ফুন জীন ও ইনসান হুর পরী ফেরেশতায়,
ফকীর দরবেশ বাদশাহ চাহে করতে গলে মালা।।
চেনে রসিক ভোমরা বুলবুল সেই ফুলের ঠিকানা,
কেউ বলে হযরত মোহাম্মদ কেউ বা কমলীওয়ালা।।
সৈয়দে মক্কী মাদানী আমার নবী মোহাম্মদ
সৈয়দে মক্কী মদনী আমার নবী মোহাম্মদ
করুণা-সিন্ধু খোদার বন্ধু নিখিল মানব-প্রেমাস্পদ।।
আদম নূহ, ইব্রাহিম দাউদ সোলেয়মান মুসা আর ঈসা,
সাক্ষ্য দিল আমার নবীর, সবার কালাম হ’ল রদ।
যাঁহার মাঝে দেখল জগৎ ইশারা খোদার নূরের,
পাপ-দুনিয়ায় আনলো যে রে, পুণ্য বেহেশতী সনদ।।
হায় সিকান্দর খুঁজল বৃথাই আব-হায়াত এই দুনিয়ায়
বিলিয়ে দিল আমার নবী, সে সুধা মানব সবায়।
হায় জুলেখা মজল ঐ ইউসুফেরই রূপ দেখে,
দেখলে মোদের নবীর সুরত, যোগীন হত ভসম মেখে’।
শুনলে নবীর শিঁরিন জবান, দাউদ মাগিত মদদ।।
ছিল নবীর নূর পেশানিতে, তাই ডুবল না কিস্তি নূহের
পুড়ল না আগুনে হযরত ইব্রাহিম সে নমরুদের
হায়, দোজখ আমার হারাম হ’ল পিয়ে কোরআনের শিঁরিন শ্যহদ।।
রাগ : মিশ্র খাম্বাজ, তাল : কাহার্বা
সুদূর মক্কা মদিনার পথে আমি
সুদূর মক্কা মদিনার পথে আমি রাহি মুসাফির,
বিরাজে রওজা মোবারক যথা মোর প্রিয় নবীজীর।।
বাতাসে যেখানে বাজে অবিরাম
তৌহিদ বাণী খোদার কালাম,
জিয়ারতে যথা আসে ফেরেশতা শত আউলিয়া পীর।।
মা ফাতেমা আর হাসান হোসেন খেলেছে পথে যার
কদমের ধূলি পড়েছে যেথায় হাজার আম্বিয়ার,
সুরমা করিয়া কবে সে ধূলি
মাখিব নয়নে দুই হাতে তুলি,
কবে এ দুনিয়া হ’তে যাবার আগে রে কাবাতে লুটাব শির।।
স্বরণ-পারের ওগো প্রিয়, তোমায় আমি চিনি যেন
স্বরণ-পারের ওগো প্রিয়, তোমায় আমি চিনি যেন
তোমায় চাঁদে চিনি আমি, তুমি আমায় তারায় চেন॥
নূতন পরিচয়ের লাগি’
তারায় তারায় থাকি জাগি’
বারে বারে মিলন মাগি, বারে বারে হারাই হেন॥
নূতন চোখের প্রদীপ জ্বালি’ চেয়ে আছি নিরিবিলি,
খোলো প্রিয় তোমার ধরার বাতায়নের ঝিলি-মিলি।
নিবাও নিবু-নিবু বাতি,
ডাকে নূতন তারার ভাতি,
ওগো আমার দিবস রাতি কাঁদে বিদায়-কাঁদন কেন॥
স্বপ্নে দেখি একটি নতুন ঘর
স্বপ্নে দেখি একটি নতুন ঘর
তুমি আমি দু’জন প্রিয় তুমি আমি দু’জন।
বাহিরে বকুল-বনে কুহু পাপিয়া করে কুজন।।
আবেশে ঢুলে’ ফুল-শয্যায় শুই
মুখ টিপে হাসে মল্লিকা যুঁই
কানে কানে গানে গানে কহে ‘চিনেছি উতল সমীরণ’।।
পূর্ণিমা চাঁদ কয়, গান আর সুর, চঞ্চল ওরা দু’জন
প্রেম-জ্যোতি আনন্দ-আঁখিজল, ছল ছল ওরা দু’জন।
মৌমাছি কয়, গুন্ গুন্ গান গাই
মুখোমুখি দু’জনে সেইখানে যাই
শারদীয়া শেফালি গায়ে পড়ে কয় –
‘ব্রজের মধুবন – এই তো ব্রজের মধুবন’।।
স্বপনেএসেছিল মৃদু-ভাষিণী
স্বপনেএসেছিল মৃদু-ভাষিণী
মৃদু-ভাষিণী মধু-হাসিনী।
রূপের তৃষা মোর রূপ ধ’রে এসেছিল
কল্পনা মনোবন-বাসিনী।।
যে পরম সুন্দর আছে মোর অন্তরে
তারি অভিসারে আসে উদাসিনী।।
স্বপন যখন ভাঙবে তোমার দেখবে আমি নাই
স্বপন যখন ভাঙবে তোমার দেখবে আমি নাই।
মোরে শূন্য তোমার বুকেরি কাছে খুজবে গো বৃথাই।।
দেখবে জেগে বাহুর পরে
আছে নীরব অশ্রু ঝ’রে
কাছ থেকেও ছিলাম দূরে যাই গো চলে যাই।।
কাঁটার মতো ছিলাম বিধে আমি তোমার বুকে,
বিদায় নিলাম চিরতরে ঘুমাও তুমি সুখে (ওগো)।
একলা ঘরে জেগে ভোরে
হয়তো মনে পড়বে মোরে,
দূরে স’রে হয়তো পাব অন্তরেতে ঠাঁই।।