এলো ফুলের মরশুম শরাব ঢালো সাকি
বকুল শাখে কোকিল ওঠে ডাকি’।।
গেয়ে ওঠে বুলবুল আঙ্গুর-বাগে
নীল আঁখি লাল হলো রাঙ্-অনুরাগে
আজি ফুল-বাসরে শিরাজির জল্সা বরবাদ্ হবে না-কি।।
চাঁপার গেলাস ভরি’
ভোমরা মধু পিয়ে মহুয়া ফুলের বাসে আঁখি আসে ঝিমিয়ে।
পাপিয়া পিয়া পিয়া ডাকে বন-মাঝে গোলাপ-কপোল রাঙে
গোলাপী লাজে হৃদয়-ব্যথার সুধা আছে তব কাছে রেখো না তারে ঢাকি’।।
এ
এলোঐ বনান্তে পাগল বসন্ত
এলোঐ বনান্তে পাগল বসন্ত
বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রেচঞ্চল তরুণ দুরন্ত।।
বাঁশীতে বাজায় সে বিধুর
পরজ বসন্তের সুর
পান্ডু কপোলে জাগে রঙ নব অনুরাগে রাঙা হ’ল ধূসর দিগন্ত।।
কিশলয়ে পর্ণে অশান্ত
ওড়ে তার অঞ্চল প্রান্ত
পলাশ কলিতে তার ফুল ধনু লঘু ভার ফুলে ফুলে হাসি অফুরন্ত।।
এলোমেলো দখিনা মলয় রে
প্রলাপ বকিছে বনময় রে
অকারণ মন-মাঝে বিরহের বেণু বাজে জেগে ওঠে বেদনা ঘুমন্ত।।
এলো রমজানেরি চাঁদ এবার দুনিয়াদারি ভোল
এলো রমজানেরি চাঁদ এবার দুনিয়াদারি ভোল
সারা বরষ ছিলি গাফেল এবার আঁখি খোল।।
এই একমাস রোজা রেখে
পরহেজ থাক গুনাহ থেকে
কিয়ামতের নিয়ামত তোর ঝুলি ভরে তোল।।
বন্দী রহে এই মাসে শয়তান মালাউন
(তার) এই মাসে যা করবি সওয়াব দর্জা হাজার গুণ।
ভোগ বিলাসে মাখলি যে পাঁক
রমজানে তা হবে রে সাফ
এফতারে তোর কর রে সামান আল্লা রসুল বোল।।
এ কোন মায়ায়ফেলিলে আমায়
এ কোন মায়ায়ফেলিলে আমায়
চির জনমের স্বামী-
তোমার কারণে এ তিন ভুবনে
শান্তি না পাই আমি।।
অন্তরে যদি লুকাইতে চাই
এ আগুন আম কেমনে লুকাই, ওগো অন্তর্যামী।।
মুখ থাকিতেও বলিতে পার না বোবা স্বপনের কথা;
বলিতেও নারি লুকাতেও নারি; তেমনি আমার ব্যথা।
যে দেকেছে প্রিয় বারেক তোমায়
বর্ণিতে রূপ- ভাষা নাহি পায়
পাগলিনী-প্রায় কাদিঁয়া বেড়ায় অসহায়, দিবাযামী।।
এ কোন্ মধুর শরাব দিলে আল আরাবি সাকি
এ কোন্ মধুর শরাব দিলে আল আরাবি সাকি,
নেশায় হলাম দিওয়ানা যেরঙিন হল আঁখি।।
তৌহিদের শিরাজি নিয়ে ডাকলে সবায়যারে পিয়ে,
নিখিল জগৎ ছুটে এলোরইল না কেউ বাকি।।
বসলো তোমার মহ্ফিল দূর মক্কা মদিনাতে,
আল্-কোরানের গাইলে গজল শবে কদর রাতে।
নরনারী বাদশা ফকির তোমার রূপে হয়ে অধীর
যা ছিল নজ্রানা দিল রাঙা পায়ে রাখি’।
এ–কূল ভাঙে ও–কূল গড়ে এই তো নদীর খেলা
এ–কূল ভাঙে ও–কূল গড়ে এই তো নদীর খেলা।
সকাল বেলার আমির, রে ভাই (ও ভাই) ফকীর, সন্ধ্যাবেলা।।
সেই নদীর ধারে কোন্ ভরসায় বাঁধলি বাসা,
ওরে বেভুল, বাঁধলি বাসা কিসের আশায়?
যখন ধরল ভাঙন পেলি নে তুই পারে যাবার ভেলা।
এই তো বিধির খেলা রে ভাই এই তো বিধির খেলা।।
এই দেহ ভেঙ্গে হয় রে মাটি,
মাটিতে হয় দেহ যে কুমোর গড়ে সেই দেহ,
তার খোঁজ নিল না কেহ (রে ভাই)।
রাতে রাজা সাজে নাচমহলে
দিনে ভিক্ষা মেগে বটের তলে
শেষে শ্মশান ঘাটে
গিয়ে দেখে সবাই মাটির ঢেলা
এই তো বিধির খেলা রে ভাই ভব নদীর খেলা।।
এ কি এ মধু শ্যাম-বিরহে
এ কি এ মধু শ্যাম-বিরহে।
হৃদি-বৃন্দাবনে নিতি রসধারা বহে।।
গভীর বেদনা মাঝে
শ্যাম-নাম-বীনা বাজে
প্রেমে মন মোহে যত ব্যথায় প্রাণ দহে।।
এ কি অপরূপ রূপের কুমার হেরিলাম সখি যমুনা কূলে
এ কি অপরূপ রূপের কুমার হেরিলাম সখি যমুনা কূলে,
তার এ সুনীল লাবনি গলিয়া গলিয়া ঢলিয়া পড়িছে গগন-মূলে ॥
যেন কমল ফুটেছে সখি, সহস্র-দল রূপে-কমল ফুটেছে,
রূপের সাগর মন্থন করি’ সখি চাঁদ যেন উঠছে। সখি গো –
কালো সে রূপের মাঝে হয়ে যায় হারা
কোটি আলো-রাধিকা-রবি, শশী, তারা,
প্রেম-যমুনার তীরে সই আমি রিবধি দেখি তারে,
দেখি আর চেয়ে রই।
আমি এই রূপ চেয়ে থাকি
সখি জনমে জনমে জীবনে মরণে এই রূপ চেয়ে থাকি।
ঐ মোহন কালোর গহন কাননে হারাইয়া যাক আঁখি ॥
এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী–জননী
এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী–জননী।
ফুলে ও ফসলে কাদা মাটি জলে ঝলমল করে লাবনি।
রৌদ্রতপ্ত বৈশাখে তুমি চাতকের সাথে চাহ জল,
আম কাঁঠালের মধুর গন্ধে জৈষ্ঠে মাতাও তরুতল।
ঝঞ্ঝার সাথে প্রান্তরে মাঠে কভু খেল ল’য়ে অশনি।।
এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী–জননী।
ফুলে ও ফসলে কাদা মাটি জলে ঝলমল করে লাবনি।
রৌদ্রতপ্ত বৈশাখে তুমি চাতকের সাথে চাহ জল,
আম কাঁঠালের মধুর গন্ধে জৈষ্ঠে মাতাও তরুতল।
ঝঞ্ঝার সাথে প্রান্তরে মাঠে কভু খেল ল’য়ে অশনি।।
এ কি অপরূপ যুগল-মিলন হেরিনু নদীয়া ধামে
এ কি অপরূপ যুগল-মিলন হেরিনু নদীয়া ধামে
বিষ্ণুপ্রিয়া লক্ষী যেন রে গোলক-পতির বামে।।
এ কি অতুলন যুগল-মূরতি
যেন শিব-সতী হর-পার্বতী,
জনক-দুহিতা সীতাদেবী যেন বেড়িয়া রয়েছে রামে।।
গৌরের বামে গৌর-মোহিণী
(যেন) রতি ও মদন চন্দ্র-রোহিণী
(তোরা) দেখে যা রে আজ মিলন-রাসে যুগল রাধা-শ্যামে।।
নাটক: ‘বিষ্ণুপ্রিয়া’