পরান-প্রিয়! কেন এলে অবেলায়
শীতল হিমেল বায়ে ফুল ঝ’রে যায়।।
সেদিনও সকাল বেলা
খেলেছি কুসুম–খেলা,
আজি যে কাঁদি একেলা ভাঙ্গা এ মেলায়।।
প
পরমাত্মা নহ তুমি মোর (তুমি) পরমাত্মীয় মোর
পরমাত্মা নহ তুমি মোর (তুমি) পরমাত্মীয় মোর।
হে বিপুল বিরাট! মোর কাছে তুমি, প্রিয়তম চিতচোর॥
তোমারে যে ভয় করে হে বিশ্বত্রাতা
তার কাছে তুমি রুদ্র দন্ডদাতা,
প্রেমময় বলে তোমারে যে বাসে ভালো
তার কাছে তুমি মধুর লীলা কিশোর॥
দ্যাখে ভীরু চোখ আষাঢ়ের মেঘে বজ্র তব বিপুল,
মোর মালঞ্চে সেই মেঘে হেরি, ফোটায় নবমুকুল।
আকাশের নীল অসীম পদ্ম পরে
চরণ রেখেছ, হে মহান লীলা ভরে
সেই অনন্ত জানি না কেমন ক’রে
আমার হৃদয়ে খেল দিবানিশি ভোর॥
পরদেশী বঁধু! ঘুম ভাঙায়ো চুমি’ আঁখি
পরদেশী বঁধু! ঘুম ভাঙায়ো চুমি’ আঁখি
যদি গো নিশীথে গো ঘুমাইয়া থাকি।
আমি ঘুমাইয়া থাকি
ঘুম ভাঙায়ো চুমি’ আঁখি।।
যদি দীপ নেভে গো কুটিরে
বাতায়ন-পানে চাহি’ যেয়ো না গো ফিরে’,
নিভেছে আঁখি শিখা প্রাণ আছে বাকি
আজো প্রাণ আছে বাকি
ঘুম ভাঙায়ো চুমি’ আঁখি।।
পরদেশি মেঘ যাও রে ফিরে
পরদেশি মেঘ যাও রে ফিরে।
বলিও আমার পরদেশি রে।।
সে দেশে যবে বাদল ঝরে
কাঁদে না কি প্রাণ একেলা ঘরে,
বিরহ ব্যথা নাহি কি সেথা বাজে না বাঁশি নদীর তীরে।।
বাদল রাতে ডাকিলে পিয়া ‘পিয়া পিয়া পাপিয়া’,
বেদনায় ভ’রে ওঠে না কি রে কাহারো হিয়া।
ফোটে যবে ফুল, ওঠে যবে চাঁদ
জাগে না সেথা কি প্রাণে কোন সাধ,
দেয় না কেহ গুরুগঞ্জনা সে দেশে বুঝি কুলবতী রে।।
পরদেশি বঁধুয়া, এলে কি এতদিনে
পরদেশি বঁধুয়া, এলে কি এতদিনে
আসিলে এতদিন কেমনে পথ চিনে।।
তোমারে খুঁজিয়া কত রবি-শশী
অন্ধ হইল প্রিয় নিভিল তিমিরে
তব আশে আকাশ-তারা দ্বীপ জ্বালি’
জাগিয়াছে নিশি ঝুরিয়া শিশিরে।
শুকায়েছে স্বরগ দেবতা তোমা বিনে।।
কত জনম ধরি’ ছিলে বল পাসরি’
এতদিনে বাঁশরি বাজিল কি বিপিনে।।
পরজনমে যদি আসি এ ধরায়
পরজনমে যদি আসি এ ধরায়।
ক্ষণিক বসন্ত যেন না ফুরায়।।
মিলনে নাহি যেন রহে অবসাদ১
ক্ষয় নাহি হয় যেন চৈতালি-চাঁদ,
কণ্ঠ-লগ্ন মোর প্রিয়ার বাহু
খুলিয়া২ না পড়ে যেন, নিশি না পোহায়।।
বাসি নাহি হয় যেন রাতের মালা,
ভরা থাকে যৌবন-রস-পেয়ালা।
জীবনে না রহে যেন মরণ-স্মৃতি
পুরাতন নাহি হয় প্রেম-প্রীতি,
রবে অভিমান রহিবে না বিরহ,
ফিরে যেন আসে প্রিয়া মাগিয়া বিদায়।।
পদ্মার ঢেউ রে
পদ্মার ঢেউ রে –
মোর শূণ্য হৃদয়–পদ্ম নিয়ে যা, যা রে।
এই পদ্মে ছিল রে যার রাঙ্গা পা
আমি হারায়েছি তারে।।
মোর পরান–বঁধু নাই, পদ্মে তাই মধু নাই (নাই রে)
বাতাস কাঁদে বাইরে, সে সুগন্ধ নাই রে
মোর রূপের সরসীতে আনন্দ–মৌমাছি নাহি ঝঙ্কারে রে।।
ও পদ্মারে –
ঢেউয়ে তোর ঢেউ ওঠায় যেমন চাঁদের আলো
মোর বঁধুয়ার রূপ তেমনি ঝিল্মিল করে কৃষ্ণ–কালো।
সে প্রেমের ঘাটে ঘাটে বাঁশি বাজায়
যদি দেখিস্ তারে, দিস্ এই পদ্ম তার পায়
বলিস্, কেন বুকে আশার দেয়ালি জ্বালিয়ে
ফেলে গেল চির–অন্ধকারে।
পথিক বন্ধু এসো এসো পাপড়ি ছাওয়া পথ বেয়ে
পথিক বন্ধু এসো এসো পাপড়ি ছাওয়া পথ বেয়ে।
মন হয়েছে উতলা গো তোমার আসার পথ চেয়ে।।
আকাশ জুড়ে আলোর খেলা
বসুন্ধরায় ফুলের মেলা
রঙিন মেঘের ভাসলো ভেলা তোমারই আসার আভাস পেয়ে।।
সাধ জাগে ঐ পথে তোমার পেতে রাখি মন প্রাণ
চলতে গিয়ে দলবে তা’রে চরণ ছোঁয়া করিবে দান।
তোমার ধ্যানে, হে রাজাধিরাজ
সাজ ভুলেছি ভুলেছি কাজ
আসবে তুমি সেই খুশিতে আছে আমার মন ছেয়ে।।
পথহারা পাখি কেঁদে ফিরি একা
পথহারা পাখি কেঁদে ফিরি একা
আমার জীবনে শুধু আঁধারের লেখা।।
বাহিরে অন্তরে ঝড় উঠিয়াছে
আশ্রয় যাচি হায় কাহার কাছে!
বুঝি দুখ–নিশি মোর
হবে না হবে না ভোর
ফুটিবে না আশার আলোক রেখা।।
পথ চলিতে যদি চকিতে কভু দেখা হয়, পরান-প্রিয়
পথ চলিতে যদি চকিতে কভু দেখা হয়, পরান-প্রিয়!
চাহিতে যেমন আগের দিনে তেমনি মদির চোখে চাহিও।।
যদি গো সেদিন চোখে আসে জল,
লুকাতে সে জল করিও না ছল,
যে-প্রিয় নামে ডাকিতে মোরে সে-নাম ধরে বারেক ডাকিও।।
তোমার বঁধু পাশে (হায়) যদি রয়,
মোরও প্রিয় সে, করিও না ভয়,
কহিব তা’রে, ‘আমার প্রিয়ারে আমারো অধিক ভালোবাসিও।।’
বিরহ-বিধুর মোরে হেরিয়া,
ব্যথা যদি পাও যাব সরিয়া,
রব না হ’য়ে পথের কাঁটা, মাগিব এ বর মোরে ভুলিও।।