মম তনুর ময়ূর-সিংহাসনে এসো রূপকুমার ফর্হাদ্।
(মোর)ঘুম যবে ভাঙিল, প্রিয়, গগনে ঢলিয়া পড়িল চাঁদ।।
আমি শিঁরি – হেরেমের১ নন্দিনী গো
ছিনু অহঙ্কারের কারা-বন্দিনী গো,
ভেবেছিনু তুমি শুধু রূপের পাগল —
বুঝি নাই কা’রে বলে প্রেম-উন্মাদ।।
গিরি-পাষাণে আঁকিলে তুমি যে ছবি মম, দিলে যে মধু,
সেই মধু চেয়ে, সেই শিলা বুকে ল’য়ে কাঁদি,
ফিরে এসো, ফিরে এসো বঁধু।
ল’য়ে যাও সেই প্রেম-লোকে, বিরহী
কাঁদিছে যথায় ‘শিঁরি শিঁরি’ কহি’—
আজ ভরিয়াছে বিষাদের বিলাপে গোলাপের সাধ।।
ম
মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই
মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই
যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুন্তে পাই।।
আমার গোরের পাশ দিয়ে ভাই নামাজীরা যাবে,
পবিত্র সেই পায়ের ধ্বনি এ বান্দা শুনতে পাবে।
গোর আজাব থেকে এ গুণাহ্গার পাইবে রেহাই।।
কত পরহেজগার খোদার ভক্ত নবীজীর উম্মত,
ঐ মস্জিদে করে রে ভাই কোরান তেলাওয়াৎ।
সেই কোরান শুনে যেন আমি পরান জুড়াই।।
কত দরবেশ ফকির রে ভাই মস্জিদের আঙিনাতে
আল্লার নাম জিকির করে লুকিয়ে গভীর রাতে।
আমি তাদের সাথে কেঁদে কেঁদে নাম জপ্তে চাই
আল্লার নাম জপ্তে চাই।।
মোহাম্মদ নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে
মোহাম্মদ নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে।
তাই কি রে তোর কন্ঠের গান এমন মধুর লাগে।।
ওরে গোলাব নিরিবিলি
(বুঝি) নবীর কদম ছুঁইয়েছিলি
(তাই) তাঁর কদমের খোশবু আজ ও তোর আতরে জাগে।।
মোর নবীরে লুকিয়ে দেখে
তাঁর পেশানীর জ্যোতি মেখে
ওরে ও চাঁদ, রাঙ্গলী কি তুই গভীর অনুরাগে।।
ওরে ভ্রমর, তুই কি প্রথম
চুমেছিলি নবীর কদম,
আজও গুনগুনিয়ে সেই খুশী কি জানাস রে গুলবাগে।।
মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লেআলা
মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লেআলা
তুমি বাদশারও বাদশাহ কামলিওয়ালা।।
পাপে-তাপে পূর্ণ আঁধার দুনিয়া
হ’ল পূন্য বেহেশতী নূরে উজালা।।
গুনাহগার উম্মত লাগি’ তব
আজো চয়ন নাহি, কাঁদিছ নিরালা।।
কিয়ামতে পিয়াসী উম্মত লাগি,
দাড়ায়ে র’বে লয়ে তহুরার পিয়ালা।।
জ্বলিবে হাশর দিনে দ্বাদশ রবি,
নফসি নফসি কবে সকল নবী
ইয়া উম্মতি ইয়া উম্মতি একেলা তুমি,
কাঁদিবে খোদার পার আর্শ চুমি’-
পাপী উম্মত ত্রান তব জপমালা।।
করে আউলিয়া আম্বিয়া তোমারি ধ্যান,
তব গুণ গাহিল খোদ আল্লাহতায়ালা।।
মেঘ-বিহীন খর-বৈশাখে
মেঘ-বিহীন খর-বৈশাখে
তৃষায় কাতর চাতকী ডাকে।।
সমাধি-মগ্না উমা তপতী –
রৌদ্র যেন তার তেজঃ জ্যোতি,
ছায়া মাগে ভীতা ক্লান্তা কপোতী –
কপোত-পাখায় শুষ্ক শাখে।।
শীর্ণা তপিনী বালুচর জড়ায়ে
তীর্থে চলে যেন শ্রান্ত পায়ে।
দগ্ধ-ধরণী যুক্ত-পাণি
চাহে আষাঢ়ের আশিস বাণী
যাপিয়া নির্জলা একদশীর তিথি
পিপাসিত আকাশ যাচে কাহাকে।।
মুছাফির! মোছ্ রে আঁখি জল
মুছাফির! মোছ্ রে আঁখি –জল
ফিরে চল আপনারে নিয়া
আপনি ফুটেছিল ফুল
গিয়াছে আপ্নি ঝরিয়া ।।
রে পাগল! একি দুরাশা,
জলে তুই বাঁধ্বি রে বাসা!
মেটে না হেথায় পিয়াসা
হেথা নাই তৃষা –দরিয়া।।
বরষায় ফুটল না বকুল
পউষে ফুট্বে কি সে ফুল (রে)
এ পথে ঝরে সদা ভুল
নিরাশার কানন ভরিয়া।।
রে কবি! কতই দেয়ালি
জ্বালিলি তোর আলো জ্বালি’
এলো না তোর বনমালী
আধাঁর আজ তোরই দুনিয়া।।
মম মধুর মিনতি শোন ঘনশ্যাম গিরিধারী
মম মধুর মিনতি শোন ঘনশ্যাম গিরিধারী
কৃষ্ণমুরারী, আনন্দ ব্রজে তব সাথে মুরারি।।
যেন নিশিদিন মুরলী-ধ্বনি শুনি
উজান বহে প্রেম-যমুনারি বারি
নূপুর হয়ে যেন হে বনচারী
চরণ জড়ায়ে ধরে কাঁদিতে পারি।।
মাগো চিন্ময়ী রূপ ধ’রে আয়
মাগো চিন্ময়ী রূপ ধ’রে আয়।
মৃন্ময়ী রূপ তোর পূজি শ্রী দুর্গা তাই গুর্গতি কাটিল না হায়॥
যে মহা-শক্তির হয় না বিসর্জন
অন্তরে বাহিরে প্রকাশ যার অনুখন
মন্দিরে দুর্গে রহে না যে বন্দী সেই দুর্গারে দেশ চায়॥
আমাদের দ্বিভুজে দশভুজা-শক্তি দে পরম ব্রহ্মময়ী।
শক্তিপূজার ফল ভক্তি কি পাব শুধু হব না কি বিশ্বজয়ী ?
এই পূজা-বিলাস সংহার র্ক যদি, পুত্র শক্তি নাহি পায়॥
মোরা বিহান-বেলা উঠে রে ভাই চাষ করি এই মাটি
মোরা বিহান-বেলা উঠে রে ভাই চাষ করি এই মাটি।
যে মাটির বুকে আছে পাকা ধানের সোনার কাঠি॥
ফসল বুনে রোদের তাতে উঠি যখন ঘেমে
সদয় হয়ে আকাশ বেয়ে বৃষ্টি আসে নেমে
(ওরে) মুচকি হেসে বৌ এনে দেয় পান্তা ভাতের বাটি॥
আশ মেটে না চারা ধানের পানে চেয়ে চেয়ে
মরাই ভ’রে থাকবে ওরাই আমার ছেলে মেয়ে।
(আমি) চাই না স্বর্গ, পাই যদি এই পাকা ধানের আটি (রে ভাই)॥
জল নিতে যায় আড়চোখে চায় বৌ-ঝি নদীর কূলে
খুশিতে বুক ভ’রে ওঠে, খাটুনি যাই ভুলে।
এ মাঠ নয় ভাই বৌ পেতেছে ঠান্ডা শীতল পাটি॥
মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দাম, মোরা ঝর্ণার মত চঞ্চল
মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দাম, মোরা ঝর্ণার মত চঞ্চল।
মোরা বিধাতার মত নির্ভয়, মোরা প্রকৃতির মত সচ্ছল।।
আকাশের মত বাঁধাহীন,
মোরা মরু সঞ্চার বেদুঈন,
(মোরা) বন্ধনহীন জন্ম–স্বাধীন, চিত্ত মুক্ত শতদল।।
মোরা সিন্ধু–জোয়ার কল–কল
মোরা পাগলা–ঝোরার ঝরা জল
কল–কল–কল্ ছল–ছল–ছল্ কল–কল–কল্ ছল–ছল–ছল্
মোরা দিল–খোলা খোলা প্রান্তর,
মোরা শক্তি অটল মহীধর
হাসি গান শ্যাম উচ্ছল
মোরা বৃষ্টির জল বনফল খাই, শয্যা শ্যামল বন–তল।।