মোরা আর জনমে হংস–মিথুন ছিলাম নদীর চরে
যুগলরূপে এসেছি গো আবার মাটির ঘরে।।
তমাল তরু চাঁপা–লতার মত
জড়িয়ে কত জনম হ’ল গত,
সেই বাঁধনের চিহ্ন আজো জাগে হিয়ার থরে থরে।।
বাহুর ডোরে বেঁধে আজো ঘুমের ঘোরে যেন
ঝড়ের বন–লতার মত লুটিয়ে কাঁদ কেন।
বনের কপোত কপোতাক্ষীর তীরে
পাখায় পাখায় বাঁধা ছিলাম নীড়ে
চিরতরে হ’ল ছাড়াছাড়ি নিঠুর ব্যাধের শরে।।
ম
মোর মন ছুটে যায় দ্বাপর যুগে দূর দ্বারকায় বৃন্দাবনে
উভয়ে : মোর মন ছুটে যায় দ্বাপর যুগে দূর দ্বারকায় বৃন্দাবনে।
স্ত্রী+উভয়ে: মোর মন হ’তে চায় ব্রজের রাখাল খেলতে রাখাল-রাজার সনে॥
স্ত্রী : রূপ ধরে না বিশ্বে যাহার
দেখতে সাধ যায় কিশোর-রূপ তার
পুরুষ : কেমন মানায় নরের রূপে অনন্ত সেই নারায়ণে॥
স্ত্রী : সাজ্ত কেমন শিখী-পাখা বাজ্ত কেমন নূপুর পায়ে,
পুরুষ : থির কেমনে থাক্ত ধরা নাচ্ত যখন তমাল-ছায়ে।
উভয়ে : মা যশোদা বাঁধ্ত যখন কাঁদ্ত ভগবান কেমনে॥
স্ত্রী : সাজ্ত কেমন বন-মালায় বিশ্ব যাহার অর্ঘ্য সাজায়;
পুরুষ : যোগী-ঋষি পায় না ধ্যানে গোপ-বালা কেমনে পায়।
উভয় : তেম্নি ক’রে কালার প্রেমে সব খোয়াব এই জীবনে॥
মোর প্রিয়া হবে এসো রানী দেব খোঁপায় তারার ফুল
মোর প্রিয়া হবে এসো রানী দেব খোঁপায় তারার ফুল
কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির চৈতী চাঁদের দুল।।
কণ্ঠে তোমার পরাবো বালিকা
হংস –সারির দুলানো মালিকা
বিজলী জরীণ ফিতায় বাঁধিব মেঘ রঙ এলো চুল।।
জোছনার সাথে চন্দন দিয়ে মাখাব তোমার গায়
রামধনু হতে লাল রঙ ছানি’ আলতা পরাবো পায়।
আমার গানের সাত সুর দিয়া
তোমার বাসর রচিব প্রিয়া।
তোমারে ঘিরিয়া গাহিবে আমার কবিতার বুলবুল।।
মোর প্রথম মনের মুকুল
মোর প্রথম মনের মুকুল
ঝরে গেল হায় মনে মিলনের ক্ষণে।
কপোতীর মিনতি কপোত শুনিল না,
উড়ে গেল গহন-বনে।।
দক্ষিণ সমীরণ কুসুম ফোটায় গো
আমারি কাননে ফুল কেন ঝরে যায় গো
জ্বলিল প্রদীপ সকলেরি ঘরে হায়
নিভে গেল মোর দীপ গোধূলি লগনে।।
বিফল অভিমানে কাঁদে ফুলমালা কণ্ঠ জড়ায়ে
কাঁদি ধূলি-পথে একা ছিন্ন-লতার প্রায় লুটায়ে লুটায়ে।
দারুণ তিয়াসে এসে সাগর-মুখে
ঢলিয়া পড়িনু হায় বালুকারি বুকে
ধোঁয়ারে মেঘ ভাবি’ ভুলিনু চাতকী
জ্বলিয়া মরি গো বিরহ-দহনে।।
মোর না মিটিতে আশা ভাঙিল খেলা
মোর না মিটিতে আশা ভাঙিল খেলা,
জীবন প্রভাতে এ লো বিদায় বেলা।।
আঁচলের ফুলগুলি করুণ নয়ানে
নিরাশায় চেয়ে আছে মোর মুখপানে,
বাজিয়াছে বুকে যেন, কার অবহেলা।।
আঁধারের এলোকেশ দু’ হাতে জড়ায়ে
যেতে যেতে নিশীথিনী কাঁদে বনছায়ে।
বুঝি দুখ-নিশি মোর
হবে না হবে না ভোর,
ভিড়িবে না কূলে মোর বিরহের ভেলা।।
মোর দুখ নিশি কবে হবে ভোর
মোর দুখ নিশি কবে হবে ভোর
ভুবনে ছাড়ালো প্রভাতের আলো –
আমারি ভবনে কেন আঁধার ঘোর ॥
সূর্য-কিরণে সাগর শুকায় –
সে রবি-কিরণে শুকালো না হায়
আমার বিরহী আঁখির লোর ॥
আশোক বনে সীতার সঙ্গিনী প্রমীলার সম
নিশীথের আঁধার মুখ লুকায়ে কাঁদে অন্তরে মম।
মালা চন্দন লয়ে মন্দির মাঝে
ফেলে নববধূ সাজ পূজারিণী-সাজে
শূন্য মন্দিরে আমি একা কাঁদি জড়ায়ে ছিন্ন মালার ডোর ॥
মোর ঘুমঘোরে এলে মনোহর নমো নম, নমো নম, নমো নম
মোর ঘুমঘোরে এলে মনোহর নমো নম, নমো নম, নমো নম।
শ্রাবণ–মেঘে নাচে নটবর রমঝম, রমঝম, ঝমরম।
(ঝমঝম, রমঝম, রমঝম)।।
শিয়রে বসি চুপিচুপি চুমিলে নয়ন
মোর বিকশিল আবেশে তনু নীপ–সম, নিরুপম, মনোরম।।
মোর ফুলবনে ছিল যত ফুল
ভরি ডালি দিনু ঢালি’ দেবতা মোর
হায় নিলে না সে ফুল, ছি ছি বেভুল,
নিলে তুলি’ খোঁপা খুলি’ কুসুম–ডোর।
স্বপনে কী যে কয়েছি তাই গিয়াছ চলি’,
জাগিয়া কেঁদে ডাকি দেবতায় প্রিয়তম, প্রিয়তম, প্রিয়তম।।
মোর কুসুম হয়ে কাঁদি কুঞ্জবনে
মোর কুসুম হয়ে কাঁদি কুঞ্জবনে
সুন্দর শ্যাম হে
আমি মরিতে চাহি ঝরি’ তব চরণে
সুন্দর শ্যাম হে।
ওগো সুন্দর শ্যাম হে।।
মোর ক্ষণিক এ জীবন নিশি শেষে
প্রিয় ঝ’রে যাব গো স্রোতে ভেসে
বঁধু কাছে এসে ছুয়ো ভালবেসে
জাগায়ো প্রেম-মধু গোপন মনে
সুন্দর শ্যাম হে।।
তব সরস পরশ দিয়ে মনোহর
মোর এ তনু রঙে রসে পূর্ণ করো
আমি তোমার বুকে রবো পরম সুখে
ঝরিব প্রিয়, চাহি’ তব নয়নে
সুন্দর শ্যাম হে।।
মোর বিদায় বেলা ঘনায়ে আসে
মোর প্রাণ কাদেঁ মিলন-পিয়াসে
এই বিরহ মম ওগো প্রিয়তম,
মিটিবে সে কোন শুভ লগনে,
সুন্দর শ্যাম হে।।
মোর বেদনার কারাগারে জাগো
মোর বেদনার কারাগারে জাগো, জাগো- বেদনাহারী হে মুরারি।
অসীম দুঃখ ঘেরা কৃষ্ণা তিথিতে এসো এসো হে কৃষ্ণ গিরিধারী।।
ব্যথিত এ চিত দেবকীর সম মূর্ছিত পাষাণেরি ভারে
ডাকে প্রাণ-যাদব, এসো এসো মাধব উথলিছে প্রেম আঁখিবারি
মুরারি উথলিছে প্রেম আঁখিবারি।।
হৃদয়-ব্রজে মম ভক্তি প্রীতি জাগিয়া আছে আশায়,
কদম্ব ফুল সম উঠিছে শিহরি’ মম শ্যাম-বরষায়।
ওগো বনশীওয়ালা, তব না শোনা বাঁশি
শোনে অনুরাগ রাধা প্রণয় পিয়াসি,
গোপন ধ্যানের মধুবনে তব নুপুর শুনি, হে কিশোর বনচারী।।
মোমের পুতুল মমীর দেশের মেয়ে নেচে যায়
মোমের পুতুল মমীর দেশের মেয়ে নেচে যায়।
বিহবল–চঞ্চল–পায়।।
খর্জুর–বীথির ধারে
সাহারা মরুর পারে
বাজায় ঘুমুর ঝুমুর ঝুমুর মধুর ঝঙ্কারে।
উড়িয়ে ওড়না ‘লু’ হাওয়ায়
পরী–নটিনী নেচে যায়
দুলে দুলে দূরে সুদূর।।
সুর্মা–পরা আঁখি হানে আস্মানে,
জ্যোৎস্না আসে নীল আকাশে তার টানে।
ঢেউ তুলে নীল দরিয়ায়
দিল–দরদী নেচে যায়
দুলে দুলে দূরে সুদূর।।