যাবার বেলায় সালাম লহ হে পাক রমজান
তব বিদায় ব্যথায় কাঁদিছে নিখিল মুসলিম জাহান।।
পাপীর তরে তুমি পারের তরী ছিলে দুনিয়ায়,
তোমারি গুণে দোজখের আগুন নিভে যায়,
তোমারি ভয়ে লুকায়ে ছিল দূরে শয়তান।।
ওগো রমজান, তোমারি তরে মুসলিম যত
রাখিয়া রোজা ছিল জাগিয়া চাহি’ তব পথ,
আনিয়াছিলে দুনিয়াতে তুমি পবিত্র কোর্আন।।
পরহেজগারের তুমি যে প্রিয় প্রাণের সাথী ,
মসজিদে প্রাণের তুমি যে জ্বালাও দীনের বাতি,
উড়িয়ে গেলে যাবার বেলায় নতুন ঈদের চাঁদের নিশান।।
য
যেতে নারি মদিনায় আমি হে প্রিয় নবী
যেতে নারি মদিনায় আমি হে প্রিয় নবী
আমারই ধ্যানে এসো প্রাণে এসো আল-আরবি।।
তপ্ত যে নিদারুণ আরবের সাহারা গো
শীতল হৃদে মম রাখিব তোমারই ছবি।।
ভালবাস যদি না মরুভূ ধূসর গো
জ্বালায়ে, হৃদি মম করিব সাহারা গোবি।।
হে প্রিয়তম, গোপনে তব তরে আমি কাঁদি
তোমারে দিয়াছি মোর, দুনিয়া আখের সবই।।
যে দুর্দিনের নেমেছে বাদল তাহারি বজ্র শিরে ধরি
যে দুর্দিনের নেমেছে বাদল তাহারি বজ্র শিরে ধরি
ঝড়ের বন্ধু, আঁধার নিশীথে ভাসায়েছি মোরা ভাঙ্গা তরী।।
মোদের পথের উঙ্গিত ঝলে বাঁকা বিদ্যুতে কালো মেঘে,
মরু পথে জাগে নব অঙ্কুর মোদের চলার ছোঁওয়া লেগে,
মোদের মন্ত্রে গোরস্থানে আঁধারে ওঠে গো প্রান জেগে,
দীপ-শলাকার মত মোরা ফিরি ঘরে ঘরে আলো সঞ্চরি।।
নব জীবনের ‘ফোরাত’-কুলে গো কাঁদে ‘কারবালা’ তৃষ্ণাতুর,
উর্ধ্বে শোষন- সূর্য, নিম্নে তপ্ত বালুকা ব্যথা-মরুর।
ঘিরিয়া ইউরোপ- এজিদের সেনা এপার ওপার নিকট, দূর,
এরি মাঝে মোরা ‘আব্বাস’ সম পানি আনি প্রানপন করি।।
যখন জালিম ‘ফেরাউন’ চাহে ‘মুসা’ ও সত্যে মারিতে ভাই,
নীল দরিয়ার মোরা তরঙ্গ বন্যা আনিয়া তারে ডুবাই।
আজো নমরুদ ইসবরাহীমেরে মারিতে চাহিছে সর্বদাই,
আনন্দ- দূত মোরা সে আগুনে ফোটাই পুশপ- মঞ্জরী।।
ভরসার গান শুনাই আমরা ভয়ের ভুতের এই দেশে,
জরা- জীর্ণের যৌবনে দিয়া সাজাই নবীন বর- বেশে।
মোদের আশার ঊষার রঙ্গে গো রাতের অশ্রু যায় ভেসে,
মশাল জ্বালিয়া আলোকিত করি ঝড়ের নিশীথ- শর্বরী।।
নতুন দিনের নব জাত্রিরা চলিবে বলিয়া এই পথে
বিছাইয়া যাই আমাদের প্রান, সুখ, দুখ, সব আজি হতে।
ভবিশ্যতের স্বাধীন- পতাকা উড়ীবে যেদিন জয় রথে
আমরা হাসিব দূর তারা- লোকে অগো তোমাদের সুখ স্মরি।।
যাবি কে মদিনায়, আয় ত্বরা করি
যাবি কে মদিনায়, আয় ত্বরা করি।
তোর খেয়া- ঘাটে এল পুন্য- তরী।।
আবু বকর উমর খাত্তাব
আর উসমান, আলী হায়দা্
দাঁড়ি এ সোনার তরণীর,
পাপী সব নাই নাই আর ডর।
এ তরীর কান্দারী আহমদ,
পাকা সব মাঝি ও মাল্লা,
মাঝিদের মুখে সারি-গান
শোন ঐ “লা শরীক আল্লাহ!’’
মোরা পাপ দরিয়ার তুফানে আর নাহি ডরি।।
শাফায়ত- পাল ওড়ে তরীর
অনুকূল হাওয়ার ভরে,
ফেরেশতা টানিছে তার গুন,
ভিড়িবে বেহেশতী-চরে।।
ঈমানের পারানী কড়ি আছে যার
আয় এ সোনার নায়,
ধরিয়া দীনের রশি
কলেমার জাহাজ- ঘাটায়।
ফেরদৌস হ’তে ডাকে হুর পরী।।
যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই
যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই
কেনো মনে রাখ তারে ।
ভুলে যাও তারে ভুলে যাও একেবারে ॥
আমি গান গাহি আপনার দুখে,
তুমি কেনো আসি দাঁড়াও সমুখে,
আলেয়ার মতো ডাকিও না আর
নিশীথ-অন্ধকারে ॥
দয়া করে, মোরে দয়া কর, আর
আমারে লইয়া খেলো না নিঠুর খেলা;
শত কাঁদিলেও ফিরিবে না সেই
শুভলগনের বেলা ।
আমি ফিরি পথে, তাহে কার ক্ষতি,
তব চোখে কেনো সজল মিনতি,
আমি কি ভুলেও কোনোদিন এসে
দাঁড়ায়েছি তব দ্বারে ॥
ভুলে যাও মোরে ভুলে যাও একেবারে ॥
যোগী শিব শঙ্কর ভোলা দিগম্বর
যোগী শিব শঙ্কর ভোলা দিগম্বর
ত্রিলোচন দেবাদিদেব ধ্যানে সদা মগন॥
চির শ্মশানচারী অনাদি সমাধিধারী
স্তব্ধ ভয়ে চরণে তাঁরি প্রণতি করে গগন॥
ত্রিশূল-বিষাণ রহে পড়িয়া পাশে
ললাটে শশী নাহি হাসে
গঙ্গা তরঙ্গ-হারা ভীত ভুবন।
ত্রাহি হে শম্ভু শিব, ত্রাসে কাঁপে জড় ও জীব
ভোলো এ ভীষণ তপ গাহিতেছে সঘন॥
যাও হেলে দুলে এলোচুলে কে গো বিদেশিনী
পুরুষ : যাও হেলে দুলে এলোচুলে কে গো বিদেশিনী
কাহার আশে কাহার অনুরাগিনী।
স্ত্রী : আমি কনক চাঁপার দেশের মেয়ে
এনু ঊষার রঙের গান গেয়ে
আমি মল্লিকা গো পল্লীবাসিনী।
পুরুষ : চিনি চিনি ওই চুড়ি কাঁকনের রিনিকি রিনি
তুমি ভোর বেলা দাও স্বপনে দেখা।
স্ত্রী : তোমার রঙে কবি আঁক আমারি ছবি
তুমি দেবতা রবি আমি তব পূজারিণী।
পুরুষ : এসো ধরণীর দুলালী আলোর দেশে
যথা তারার সাথে চাঁদ গোপনে মেশে
স্ত্রী : আনো আলোক তরী আমি যাই গো ভেসে
দ্বৈত : চলো যাই ধরণী ধূলির ঊর্ধে
পুরুষ : যথা বয় অনন্ত
স্ত্রী : প্রেম মন্দারিণী
পুরুষ : যথা বয় অনন্ত
দ্বৈত : প্রেম মন্দারিণী॥
যাও যাও তুমি ফিরে এই মুছিনু আঁখি
যাও যাও তুমি ফিরে এই মুছিনু আঁখি
কে বাঁধিবে তোমারে হায় গানের পাখি॥
মোর আজ এত প্রেম আশা এত ভালোবাসা
সকলি দুরাশা আজ কি দিয়া রাখি॥
তোমার বেঁধেছিল নয়ন শুধু এ রূপের জালে
তাই দুদিন কাঁদিয়া হায় এ বাঁধন ছাড়ালে।
আমার বাঁধিয়াছে হিয়া আমি ছাড়াব কি দিয়া
আমার হিয়া তো নয়ন নহে ও সে ছাড়ে না কাঁদিয়া,
ওগো দুদিন কাঁদিয়া।
এই অভিমান জ্বালা মোর একেলারি কালা
ম্লান মিলনেরি মালা দাও ধূলাতে ঢাকি॥
যাও মেঘদূত, দিও প্রিয়ার হাতে
যাও মেঘদূত, দিও প্রিয়ার হাতে
আমার বিরহ–লিপি লেখা কেয়া পাতে।।
আমার প্রিয়ার দিরঘ নিশাসে
থির হয়ে আছে মেঘ যে–দেশেরই আকাশে
আমার প্রিয়ার ম্লান মুখ হেরি’
ওঠে না চাঁদ আর যে–দেশে রাতে।।
পাইবে যে–দেশে কুন্তল–সুরভি বকুল ফুলে
আমার প্রিয়া কাঁদে এলায়ে কেশ সেই মেঘনা–কূলে।
স্বর্ণলতার সম যার ক্ষীণ করে
বারে বারে কঙ্কণ চুড়ি খুলে পড়ে
মুকুল’ বয়সে যথা বরষার ফুল–দল
বেদনায় মুরছিয়া আছে আঙিনাতে।।
যাই গো চ’লে যাই না-দেখা লোকে
যাই গো চ’লে যাই না-দেখা লোকে
জানিতে চির অজানায়।
নিরুদ্দেশের পথে মানস-রথে স্বপন ঘুমে
মন যথা চ’লে যায়।।
সাগর-জলে পাতাল-তলে তিমিরে
অজানা মায়া আছে চিরদিন সে-দেশ ঘিরে-
মেঘলোক পারায়ে চাঁদের বুকে গ্রহ-তারায়।।
যাই হিমগিরি-চূড়াতে, মেরুর তুষারে,
আকাশের দ্বার খুলে’ হেরিতে ঊষারে।
রামধনু ওঠে যথা পরীরা খেলে
যে-দেশ হইতে আসে এ জীবন, যেখানে হারায়।।