যা সখি যা তোরা গোকুলে ফিরে।
যে পথে শ্যামরায় চ’লে গেছে মথুরায়
কাঁদিতে দে ল’য়ে সেই পথ ধূলিরে॥
এ তো ধূলি নয়, ধূলি নয়
হরি-চরণ-চিহ্ন-আঁকা এ যে হরি-চন্দন ধূলি নয়, ধূলি নয়
এই ধূলি মাখিয়া,
হ’য়ে পাগলিনী ফিরিব ‘শ্যাম শ্যাম’ ডাকিয়া।
হব যোগিনী এই ধূলি-তিলক-আঁকিয়া॥ (সখি গো)
শুনিয়াছি দূতি মুখে, প্রিয়তম আছে সুখে সেই মম পরম প্রসাদ।
ভুলিয়া এ রাধিকায়, সে যদি সুখ পায় তার সে সুখে সাধিব না বাদ॥
আমার দীরঘ শ্বাসে উৎসব-বাতি তার যদি নিভে যায়।
তাই ওলো ললিতা আমি হব ধূলি-দলিতা যাব না লো তার মথুরায়॥
আমি মথুরায় যাব, না গেলে মথুরাতে মোর শ্যামে আর ফিরে পাব না। (সখি গো)
হারানো মানিক কভু ফিরে লোকে পায়
হারানো হৃদয় ফিরে নাহি পাওয়া যায়॥
য
যবে ভোরের কুন্দ-কলি মেলিবে আঁখি
যবে ভোরের কুন্দ-কলি মেলিবে আঁখি
ঘুম ভাঙায়ে হাতে বাঁধিও রাখি।।
রাতের বিরহ যবে
প্রভাতে নিবিড় হবে
অকরুণ কলরবে গাহিবে পাখি।।
যেন অরুণ দেখিতে গিয়া তরুণ কিশোর
তোমারে প্রথম হেরি’ ঘুম ভাঙে মোর।
কবরীর মঞ্জরি
আঙিনায় রবে ঝরি’
সেই ফুল পায়ে দলি এসো একাকী।।
যবে তুলসীতলায় প্রিয় সন্ধ্যাবেলায় তুমি করিবে প্রণাম
যবে তুলসীতলায় প্রিয় সন্ধ্যাবেলায় তুমি করিবে প্রণাম,
তব দেবতার নাম নিতে ভুলিয়া বারেক প্রিয় নিও মোর নাম।।
একদা এমনি এক গোধূলি বেলা
যেতেছিলে মন্দির-পথে একেলা,
জানি না কাহার ভুল তোমার পূজার ফুল
আমি লইলাম –
সেই দেউলের পথ সেই ফুলেরই শপথ
প্রিয়, তুমি ভুলিলে হায় আমি ভুলিলাম।।
পথের দুঁধারে সেই কুসুম ফোটে – হায় এরা ভোলেনি,
বেঁধেছিলে তরু শাখে লতার যে ডোর হের আজো খোলেনি।
একদা যে নীল নভে উঠেছিল চাঁদ
ছিল অসীম আকাশ ভরা অনন্ত সাধ,
আজি অশ্রু-বাদল সেথা ঝরে অবিরাম।।
যদি শালের বন হ’ত শালার বোন
যদি শালের বন হ’ত শালার বোন,
ক’নে বউ হ’ত ঐ গৃহেরই কোণ,
ছেড়ে যেতাম না গো শালার বোন,
আমি থাকতাম পড়ে সদা, খেতাম না গো, শালার বোনথ –
বনে হারিয়ে যেতাম,
শালার বোন ঐ বৃন্দাবনে না হয় চারিয়ে যেতাম –
দাদা গো, ওগো দাদা –
আর মাকুন্দ হত যদি কুন্দবালা,
হ’ত দাড়িম্ব সুন্দরী দাড়িওয়ালা,
আমি ঝুলে যে পড়তাম দাড়ি ধ’রে তার –
জয়নাথ তরকনাথ বলে আমি ঝুলে যে পড়তাম দাড়ি ধ’রে,
বাবা দুগ্গা ব’লে আমি ঝুলে যে পড়তাম দাড়ি ধ’রে তার –
দাদা গো, ওগো দাদা –
আহা বাচ্চা হইত যদি চৌবাচ্চায়
নিতি পানকৌড়ি হ’য়ে ডুবে থাকিতাম তায়,
যদি দামড়ার ল্যাজ হ’ত কুন্তল দাম
বেণী রূপে ল্যাজ ধ’রে মাঠে দাঁড়াতাম – ঘুরে যে বেড়াতাম, তার
আমি ল্যাজ ধ’রে ঘুরে যে বেড়াতাম, দাদা গো –
যদি ভাগ্যগুণে এক মিলিল শালী –
বাবা বিশাল বপু তার সে যে বিশালী,
ওযে শালী নয় শালী নয়, শাল্মলী তরু সম
সে যে বিশালী গো, শাল্মলী তরু সম সে যে বিশালী গো, –
আহা চিম্টি শালীর হ’ত বাবলা কাঁটা,
হ’ত শর-বন তার খ্যাংড়া ঝ্যাঁটা
খ্যাংড়া মেরে বিষ ঝেড়ে যে দিত গো –
যত ফুল তত ভুল কণ্টক জাগে
যত ফুল তত ভুল কণ্টক জাগে
মাটির পৃথিবী তাই এত ভালো লাগে।।
হেথাচাঁদে আছে কলঙ্ক, সাধে অবসাদ
হেথাপ্রেমে আছে গুরুগঞ্জনা অপবাদ;
আছেমান-অভিমান পিরিতি-সোহাগে।।
হেথাহারাই হারাই ভয়, প্রিয়তমে তাই
ব’ক্ষে জড়ায়ে কাঁদি ছাড়িতে না চাই।
স্বর্গের প্রেমে নাই বিরহ-অনল
সুন্দর আঁখি আছে, নাই আখি-জল;
রাধার অশ্রু নাই কুমকুম-ফাগে।।
নাটকঃ অন্নপূর্ণা (নাট্যকারঃ মণিলাল বন্দোপাধ্যায়)
যত নাহি পাই দেবতা তোমায় , তত কাঁদি আর পূঁজি
যত নাহি পাই দেবতা তোমায় , তত কাঁদি আর পূঁজি।
ত্ই লুকাও ধরা নাহি দাও, ততই তোমারে খুঁজি
কত সে রূপের রঙের মায়ায়, আড়াল করিয়া রাখ আপনায়
তবু তব পানে অশান্ত মন কেন ধায় নাহি বুঝি।।
কাঁদালে যদি গো এমন করিয়া কেন প্রেম দিলে তবে
অন্তবিহীন এ লুকোচুরির শেষ হবে নাথ কবে?
সহে না হে নাথ বৃথা আসা যাওয়া-
জনমে জনমে এই পথ চাওয়া
কাঁদিয়া কাঁদিয়া ফুরায়ে গেল চোখের জলের পুঁজি।।
যখন প্রেমের জ্বালায় অঙ্গ জ্বলে, জুড়াই জ্বালা গজলে
(যখন) প্রেমের জ্বালায় অঙ্গ জ্বলে, জুড়াই জ্বালা গজলে।
ছাতা দিয়ে মারি খোঁচা যেন সুরের বগলে॥
সিঁড়ির ধারে পিঁড়ি পেতে বিড়ি বাঁধি হায় কলকাতায়,
মিলন আশার তামাক ঠাসি হায় বিরহের শাল পাতায়,
[‘‘আরে লুল্লু আট পয়সার বিড়ি কিনে লিস্রে হাঁ হাঁ”]
জালিম বিবির দিলের ছিপি (দাদা) খুলি সুরের ফজলে॥
কার্ফা তালে চার পা তুলে (হায়) ছুটাই তালের লাল ঘোড়া,
ভজুয়া নাত্নি ছুটে আসে হায় ফেলে দিয়ে হায় ঝালবড়া;
সুরে-তালে লাগে লড়াই যেন পাঠান মোগলে॥
যখন আমার গান ফুরাবে তখন এসো ফিরে
যখন আমার গান ফুরাবে তখন এসো ফিরে
ভাঙবে সভা বসবো একা রেবা নদীর তীরে।।
গীত শেষে গগন তলে, শ্রান্ত-তনু পড়বে ঢলে
ভালো যখন লাগবে না আর সুরের সারঙ্গীরে।।
মোর কণ্ঠের জয়ের মালা তোমার গলায় নিও
ক্লান্তি আমার ভুলিয়ে দিও প্রিয় হে মোর প্রিয়।
ঘুমাই যদি কাছে ডেকো, হাতখানি মোর হাতে রেখো
জেগে যখন খুঁজবো তোমায় আকুল অশ্রু-নীরে
তখন এসো ফিরে।।
যখন আমার কুসুম ঝরার বেলা তখন তুমি এলে
যখন আমার কুসুম ঝরার বেলা তখন তুমি এলে
ভাটির স্রোতে ভাসলো যখন ভেলা পারের পথিক এলে।।
আঁধার যখন ছাইল বনতল
পথ হারিয়ে এলে হে চঞ্চল
দীপ নিভাতে এলে হে বাদল ঝড়ের পাখা মেলে।।
শূন্য যখন নিবেদনের থালা তখন তুমি এলে
শুকিয়ে যখন ঝরল বরণ-মালা তখন তুমি এলে।
নিরশ্রু এই নয়ন পাতে
শেষ পূজা মোর আজকে রাতে
নিবু নিবু প্রাণ শিখাতে আরতি দীপ জ্বেলে।।