আমার মালায় লাগুক তোমার মধুর হাতের ছোঁওয়া
ঘিরুক তোমায় মোর আরতি পূজা-ধূপের ধোঁওয়া।।
পূজায় ব’সে দেব-দেউলে
তোমায় দেখি মনের ভুলে
প্রিয় তুমি নিলে আমার পূজা হবে তারই লওয়া
হবে দেবতারই লওয়া।।
তুমি যেদিন প্রসন্ন হও ঠাকুর চাহেন হেসে
কাঁদলে তুমি, বুকে আমার দেবতা কাদেঁন এসে।
আমি অন্ধকারে ঠাকুর পুজে
ঘরের মাঝে পেলাম খুজেঁ
সে যে তুমি, আমার চির অবহেলা-সওয়া।।
kazinazrulislam
আমার মা ত্বং হি তারা
আমার মা ত্বং হি তারা তুমি ত্রিগুণধরা পরাৎপরা মা ত্বং হি তারা।
আমি জানি মা ও দীনদয়াময়ী তুমি দুর্গমেতে দুঃখহরা, মা ত্বং হি তারা।
তুমি জলে তুমি স্থলে তুমি আদ্যমূলে গো মা,
আছ সর্বঘটে অর্ঘ্যপুটে সাকার আকার নিরাকারা মা ত্বং হি তারা।
তুমি সন্ধ্যা তুমি গায়ত্রী তুমি জগদ্ধাত্রী গো
মা অকুলের প্রাণকর্ত্রী সদা শিবের মনোহরা। মা ত্বং হি তারা।।
আমার মনের বেদনা
আমার মনের বেদনা
বুঝিলে না, আমার মনের বেদনা ॥
চাহিনি মালার ফুল
বুঝিলে না আপনার ভূল
মালা দিলে মন দিলে না ॥
আমার ভুবন কান পেতে রয় প্রিয়তম তব লাগিয়া
আমার ভুবন কান পেতে রয় প্রিয়তম তব লাগিয়া
দীপ নিভে যায়, সকলে ঘুমায় মোর আঁখি রহে জাগিয়া।।
তারারে শুধাই, ‘কত দেরি আর
কখন আসিবে বিরহী আমার?’
ওরা বলে, ‘হের পথ চেয়ে তার নয়ন উঠেছে রাঙিয়া’।।
আসিতেছে সে কি মোর অভিসারে কাঁদিয়া শুধাই চাঁদে
মোর মুখপানে চেয়ে চেয়ে চাঁদ নীরবে শুধু কাঁদে।
ফাগুন বাতাস করে হায় হায়
বলে, বিরহিণী তোর নিশি যে পোহায়
ফুল বলে, ‘আর জাগিতে নারি গো ঘুমে আঁখি আসে ভাঙিয়া’।।
আনমনে জল নিতে ভাসিল গাগরী
আনমনে জল নিতে ভাসিল গাগরী
সাঁতার জানি না, আনি কলস কেমন করি।।
জানি না বলিব কি শুধাবে যবে ননদী
কাহার কথা ভাবে পোড়া মন নিরবধি
কলসি না ভাসিয়া ভাসিতাম আমি যদি
কি বলিব কেন মোর ভিজিল ঘাগরী।।
একেলা কুলবধূ, পথ বিজন, নদীর বাঁকে
ডাকিল বৌ–কথা–কও কেন হলুদ চাঁপার শাখে
বিদেশে শ্যাম আমার পড়ল মনে সেই সে ডাকে
ঠাঁই দে যমুনে, বুকে, আমিও ডুবিয়া মরি।।
আনো সাকি শিরাজি আনো আঁখি-পিয়ালায়
আনো সাকি শিরাজি আনো আঁখি-পিয়ালায়
অধীর করো মোরে নয়ন-মদিরায়।।
পানসে জোছনাতে ঝিমু হয়ে আসে মন
শরাব বিনে, হের গুলবন উচাটন,
মদালসা আঁখি কেন ঘোমটা ঢাকা এমন
বিষাদিত নিরালায়।।
তরুণ চোখে আনো অরুণ রাগ-ছোঁওয়া
আঁখির করুণা তব যাচে ভোরের হাওয়া।
জীবন ভরা কাঁটা-রি জ্বালা
ভুলিতে চাহি শরাব পিয়ালা
তোমার হাতে ঢালা-
দুলাইয়া দাও মোরে আনন্দের হিন্দোলায়
ভুলাইয়া বেদনায়।।
আনন্দ রে আনন্দ, আনন্দ আনন্দ
আনন্দ রে আনন্দ, আনন্দ আনন্দ,
দশ হাতে ঐ দশ দিকে মা ছড়িয়ে এলো আনন্দ।
ঘরে ফেরার বাজল বাঁশি, বইছে বাতাস সুমন্দ॥
আমার মায়ের মুখে হাসি, শরত-আলোর কিরণরাশি,
কমল বনে উঠছে ভাসি, মায়ের গায়ের সুগন্ধ॥
উঠলো বেজে দিগ্বিদিকে ছুটির মাদল মৃদঙ্গ,
মনের আজি নাই ঠিকানা, যেন বনের কুরঙ্গ।
দেশান্তরী ছেলেমেয়ে, মায়ের কোলে এলো ধেয়ে,
শিশির নীরে এলো নেয়ে স্নিগ্ধ অকাল বসন্ত॥
আধো আধো বোল্ লাজে-বাধো-বাধো বোল
আধো আধো বোল্ লাজে-বাধো-বাধো বোল
ব’লো কানে কানে।
যে কথাটি আধো রাতে মনে লাগায় দোল
ব’লো কানে কানে।।
যে কথার কলি সখি আজও ফুটিল না, হায়
শরমে মরম-পাতে দোলে আন্মনা, হায়
যে কথাটি ঢেকে রাখে বুকের আঁচল
ব’লো কানে কানে।।
যে কথা লুকায়ে থাকে লাজ-নত চোখে
না বলিতে যে কথাটি জানাজানি লোকে
যে কথাটি ধ’রে রাখে অধরের কোল
লুকিয়ে ব’লো নিরালায় থামিলে কলরোল।
যে কথাটি বলিতে চাও বেশভূষার ছলে
যে কথা দেয় ব’লে তব তনু পলে পলে
যে কথাটি বলিতে সই গালে পড়ে টোল্ –
ব’লো কানে কানে।।
আধখানা চাঁদ হাসিছে আকাশে
আধখানা চাঁদ হাসিছে আকাশে
আধখানা চাঁদ নিচে
প্রিয়া তব মুখে ঝলকিছে
গগনে জ্বলিছে অগণন তারা
দু’টি তারা ধরণীতে
প্রিয়া তব চোখে চমকিছে।।
তড়িৎ-লতার ছিঁড়িয়া আধেকখানি
জড়িত তোমার জরীণ ফিতায় রানী!
অঝোরে ঝরিছে নীল নভে বারি
দুইটি বিন্দু তারি
প্রিয়া তব আঁখি বরষিছে।।
মধুর কণ্ঠে বিহগ বিলাপ গাহে,
গান ভুলি’ তা’রা তব অঙ্গনে চাহে,
তাহারও অধিক সুমধুর সুর তব
চুড়ি কঙ্কনে ঝনকিছে।।
আজো মধুর বাঁশরি বাজে
আজো মধুর বাঁশরি বাজে
গোধূলি লগনে বুকের মাঝে।।
আজো মনে হয় সহসা কখন
জলে ভরা দু’টি ডাগর নয়ন
ক্ষণিকের ভুলে সেই চাঁপা ফুলে
ফেলে ছুটে যাওয়া লাজে।।
হারানো দিন বুঝি আসিবে না ফিরে,
মন কাঁদে তাই স্মৃতির তীরে।
তবু মাঝে মাঝে আশা জাগে কেন
আমি ভুলিয়াছি ভোলেনি সে যেন,
গোমতীর তীরে পাতার কুটিরে
সে আজো পথ চাহে সাঁঝে।।