আমার যাবার সময় হলো, দাও বিদায়।
মোছ আঁখি, দুয়ার খোলো, দাও বিদায়।।
ফোটে যে ফুল আঁধার রাতে
ঝরে ধূলায় ভোর বেলাতে
আমায় তারা ডাকে সাথে – আয় রে আয়।
সজল করুণ নয়ন তোলো, দাও বিদায়।।
অন্ধকারে এসেছিলাম থাকতে আঁধার যাই চ’লে;
ক্ষণিক ভালোবেসেছিলেম চিরকালে না-ই হ’লে।
হ’লো চেনা হ’লো দেখা নয়ন-জলে রইলো লেখা
দূর বিরহের ডাকে কেকা
বরষায় ফাগুন স্বপন ভোলো ভোলো,
দাও বিদায়।।
আ
আমার মোহাম্মদের নামের ধেয়ান হৃদয়ে যার রয়
আমার মোহাম্মদের নামের ধেয়ান হৃদয়ে যার রয়
ওগো হৃদয়ে যার রয়।
খোদার সাথে হয়েছে তার গোপন পরিচয়।।
ঐ নামে যে ডুবে আছে
নাই দুখ-শোক তাহার কাছে
ঐ নামের প্রেমে দুনিয়াকে সে দেখে প্রেমময়।।
যে খোশ-নসীব গিয়াছে ঐ নামের স্রোতে ভেসে’
জেনেছে সে কোরআন-হাদিস-ফেকা এক নিমেষে।
মোর নবীজীর বর-মালা,
করেছে যার হৃদয় আলা
বেহেশতের সে আশ রাখে না, তার নাই দোজখে ভয়।।
আমার মুক্তি নিয়ে কি হবে মা
আমার মুক্তি নিয়ে কি হবে মা, (মাগো) আমি তোরেই চাই
স্বর্গ আমি চাইনে মাগো, কোল্ যদি তোর পাই॥
(মাগো) কি হবে সে মুক্তি নিয়ে,
কি হবে সে স্বর্গে গিয়ে;
যেথায় গিয়ে তোকে ডাকার আর প্রয়োজন নাই॥
যুগে যুগে যে লোকে মা প্রকাশ হবে তোর
(আমি) পুত্র হয়ে দেখব লীলা এই বাসনা মোর।
তুই, মাখাস্ যদি মাখ্ব ধূলি,
শুধু তোকে যেন নাহি ভুলি;
তুই, মুছিয়ে ধূলি নিবি তুলি বক্ষে দিবি ঠাঁই॥
আমার মালায় লাগুক তোমার মধুর হাতের ছোঁওয়া
আমার মালায় লাগুক তোমার মধুর হাতের ছোঁওয়া
ঘিরুক তোমায় মোর আরতি পূজা-ধূপের ধোঁওয়া।।
পূজায় ব’সে দেব-দেউলে
তোমায় দেখি মনের ভুলে
প্রিয় তুমি নিলে আমার পূজা হবে তারই লওয়া
হবে দেবতারই লওয়া।।
তুমি যেদিন প্রসন্ন হও ঠাকুর চাহেন হেসে
কাঁদলে তুমি, বুকে আমার দেবতা কাদেঁন এসে।
আমি অন্ধকারে ঠাকুর পুজে
ঘরের মাঝে পেলাম খুজেঁ
সে যে তুমি, আমার চির অবহেলা-সওয়া।।
আমার মা ত্বং হি তারা
আমার মা ত্বং হি তারা তুমি ত্রিগুণধরা পরাৎপরা মা ত্বং হি তারা।
আমি জানি মা ও দীনদয়াময়ী তুমি দুর্গমেতে দুঃখহরা, মা ত্বং হি তারা।
তুমি জলে তুমি স্থলে তুমি আদ্যমূলে গো মা,
আছ সর্বঘটে অর্ঘ্যপুটে সাকার আকার নিরাকারা মা ত্বং হি তারা।
তুমি সন্ধ্যা তুমি গায়ত্রী তুমি জগদ্ধাত্রী গো
মা অকুলের প্রাণকর্ত্রী সদা শিবের মনোহরা। মা ত্বং হি তারা।।
আমার মনের বেদনা
আমার মনের বেদনা
বুঝিলে না, আমার মনের বেদনা ॥
চাহিনি মালার ফুল
বুঝিলে না আপনার ভূল
মালা দিলে মন দিলে না ॥
আমার ভুবন কান পেতে রয় প্রিয়তম তব লাগিয়া
আমার ভুবন কান পেতে রয় প্রিয়তম তব লাগিয়া
দীপ নিভে যায়, সকলে ঘুমায় মোর আঁখি রহে জাগিয়া।।
তারারে শুধাই, ‘কত দেরি আর
কখন আসিবে বিরহী আমার?’
ওরা বলে, ‘হের পথ চেয়ে তার নয়ন উঠেছে রাঙিয়া’।।
আসিতেছে সে কি মোর অভিসারে কাঁদিয়া শুধাই চাঁদে
মোর মুখপানে চেয়ে চেয়ে চাঁদ নীরবে শুধু কাঁদে।
ফাগুন বাতাস করে হায় হায়
বলে, বিরহিণী তোর নিশি যে পোহায়
ফুল বলে, ‘আর জাগিতে নারি গো ঘুমে আঁখি আসে ভাঙিয়া’।।
আনমনে জল নিতে ভাসিল গাগরী
আনমনে জল নিতে ভাসিল গাগরী
সাঁতার জানি না, আনি কলস কেমন করি।।
জানি না বলিব কি শুধাবে যবে ননদী
কাহার কথা ভাবে পোড়া মন নিরবধি
কলসি না ভাসিয়া ভাসিতাম আমি যদি
কি বলিব কেন মোর ভিজিল ঘাগরী।।
একেলা কুলবধূ, পথ বিজন, নদীর বাঁকে
ডাকিল বৌ–কথা–কও কেন হলুদ চাঁপার শাখে
বিদেশে শ্যাম আমার পড়ল মনে সেই সে ডাকে
ঠাঁই দে যমুনে, বুকে, আমিও ডুবিয়া মরি।।
আনো সাকি শিরাজি আনো আঁখি-পিয়ালায়
আনো সাকি শিরাজি আনো আঁখি-পিয়ালায়
অধীর করো মোরে নয়ন-মদিরায়।।
পানসে জোছনাতে ঝিমু হয়ে আসে মন
শরাব বিনে, হের গুলবন উচাটন,
মদালসা আঁখি কেন ঘোমটা ঢাকা এমন
বিষাদিত নিরালায়।।
তরুণ চোখে আনো অরুণ রাগ-ছোঁওয়া
আঁখির করুণা তব যাচে ভোরের হাওয়া।
জীবন ভরা কাঁটা-রি জ্বালা
ভুলিতে চাহি শরাব পিয়ালা
তোমার হাতে ঢালা-
দুলাইয়া দাও মোরে আনন্দের হিন্দোলায়
ভুলাইয়া বেদনায়।।
আনন্দ রে আনন্দ, আনন্দ আনন্দ
আনন্দ রে আনন্দ, আনন্দ আনন্দ,
দশ হাতে ঐ দশ দিকে মা ছড়িয়ে এলো আনন্দ।
ঘরে ফেরার বাজল বাঁশি, বইছে বাতাস সুমন্দ॥
আমার মায়ের মুখে হাসি, শরত-আলোর কিরণরাশি,
কমল বনে উঠছে ভাসি, মায়ের গায়ের সুগন্ধ॥
উঠলো বেজে দিগ্বিদিকে ছুটির মাদল মৃদঙ্গ,
মনের আজি নাই ঠিকানা, যেন বনের কুরঙ্গ।
দেশান্তরী ছেলেমেয়ে, মায়ের কোলে এলো ধেয়ে,
শিশির নীরে এলো নেয়ে স্নিগ্ধ অকাল বসন্ত॥