কুল রাখ না–রাখ সে তুমি জান।
গোকুলে তোমার কাজ কুল ভোলানো।।
মহতের পিরিতি বালির বাঁধ সম।
কভু হাতে দাও দড়ি কভু চাঁদ আন।।
কভু তুমি রাধার, চন্দ্রাবলীর কভু
তুমি যখন যা’র তখন তা’র দিকে টান।
রাজার অপরাধের নালিশ কোথায় করি।
তুমি জান শুধু বাঁশিতে মন–ভেজানো।।
ক
কুঁচবরণ কন্যা রে তার মেঘ-বরণ কেশ
কুঁচবরণ কন্যা রে তার মেঘ-বরণ কেশ।
ওরে আমায় নিয়ে যাও রে নদী সেই সে কন্যার দেশ রে।।
পরনে তার মেঘ-ডম্বুর উদয়-তারার শাড়ি
ওরে রূপ নিয়ে তার চাঁদ-সুরুজে করে কাড়াকাড়ি রে
আমি তারি লাগি রে
আমি তারি লাগি বিবাগী ভাই আমার চির-পথিক বেশ।।
পিছ্লে পড়ে চাঁদের কিরণ নিটোল তারি গায়ে
ওরে সন্ধ্যা-সকাল আসে তারি’ আল্তা হতে পায়ে রে।
ও সে রয় না ঘরে রে
ও সে রয় না ঘরে ঘুরে’ বেড়ায় ময়নামতীর চরে
তা’রে দেখ্লে মরা বেঁচে ওঠে জ্যান্ত মানুষ মরে রে
ও সে জল-তরঙ্গে বাজে রে তার সোনার চুড়ির রেশ।।
কিশোরী, মিলন-বাঁশরি
কিশোরী, মিলন-বাঁশরি
শোন বাজায় রহি’ রহি’ বনের বিরহী, –
লাজ বিসরি’ চল জল্কে।
তার বাঁশরি শুনি’ কথার কুহু
ডেকে ওঠে কুহুকুহু – মুহুমুহু;
রস- যমুনা-নীর হ’ল অধীর, রহে না থির;
ও তার দু-কূল ছাপায়ে তরঙ্গদল ওঠে ছল্কে॥
কেন লো চম্কে দাঁড়ালি থম্কে –
পেলি দেখতে কি তোর প্রিয়তম্কে!
পেয়ে তারি কি দেখা নাচিছে কেকা,
হ’ল উতলা মৃগ কি দেখে চপল্কে॥
কা’বার জিয়ারতে তুমি কে যাও মদিনায়
কা’বার জিয়ারতে তুমি কে যাও মদিনায়।
আমার সালাম পৌঁছে দিও নবীজীর রওজায়।।
হাজীদের ঐ যাত্রা–পথে
দাঁড়িয়ে আছি সকাল হ’তে,
কেঁদে’ বলি, কেউ যদি মোর সালাম নিয়ে যায়।।
পঙ্গু আমি, আরব সাগর লঙ্ঘি কেমন ক’রে,
তাই নিশিদিন কাবা যাওয়ার পথে থাকি প’ড়ে।
বলি, ওরে দরিয়ার ঢেউ
মোর সালাম নিয়ে গেল না কেউ,
তুই দিস্ মোর সালামখানি মরুর ‘লু’–হাওয়ায়।।
কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন
কালো মেয়ের পায়ের তলায় দেখে যা আলোর নাচন।
(তার) রূপ দেখে দেয় বুক পেতে শিব যার হাতে মরণ বাঁচন।।
কালো মায়ের আঁধার কোলে
শিশু রবি শশী দোলে
(মায়ের) একটুখানি রূপের ঝলক স্নিগ্ধ বিরাট নীল–গগন।।
পাগলী মেয়ে এলোকেশী নিশীথিনীর দুলিয়ে কেশ
নেচে বেড়ায় দিনের চিতায় লীলার রে তার নাই কো শেষ।
সিন্ধুতে মা’র বিন্দুখানিক
ঠিকরে পড়ে রূপের মানিক
বিশ্বে মায়ের রূপ ধরে না মা আমার তাই দিগ্–বসন।।
কালো জল ঢালিতে সই চিকন কালারে পড়ে মনে
কালো জল ঢালিতে সই চিকন কালারে পড়ে মনে।
কালো মেঘ দেখে শাওনে সই পড়্ল মনে কালো বরণে।।
কালো জলে দীঘির বুকে
কালায় দেখি নীল-শালুকে
(আমি) চম্কে উঠি, ডাকে যখন কালো কোকিল বনে।।
কল্মিলতার চিকন পাতায় দেখি আমার শ্যামে লো
পিয়া ভেবে দাঁড়াই গিয়ে পিয়াল গাছের বামে লো।
উড়ে গেলে দোয়েল পাখি
ভাবি কালার কালো আঁখি
আমি নীল শাড়ি পরিতে নারি কালারি কারণে লো কালারি কারণে।।
কালো জাম রে ভাই!
কালো জাম রে ভাই! আম কি তোমার ভায়রা ভাই?
লাউ বুঝি তোর দিদি মা, আর কুমড়ো তোর দাদা মশাই।।
তরমুজ তোমার ঠাকুমা বুঝি কাঁঠাল তোমার ঠাকুরদা
গোলাপজাম তোর মাসতুতো ভাই জামরুল কি ভাই তোর বোনাই।।
পেয়ারা কি তোর লাটিম রে ভাই চিচিঙ্গে তোর লাঠি
জাম্বুরা তোর ফুটবল আর লংকা চুষি কাঠি।
টোপা কুল তোর বৌ বুঝি আর বৈচি লেবু তোর বেহাই।
নোনা আতা সোনা ভাই তোর রাঙা দি তোর লাল মাকাল,
ডাব বুঝি তোর পানি-পাঁড়ে ঢিল বুঝি ভাদুরে তাল।
গেছো দাদা আয় না নেমে গালে রেখে চুমু খাই।।
কালা এত ভাল কি হে কদম্ব গাছের তলা
কালা এত ভাল কি হে কদম্ব গাছের তলা।
আমি দেখ্ছি কত দেখ্ব কত তোমার ছলাকলা;
আমি নিতুই নিতুই সবই কত, (কালা) তিন সতিনের জ্বালা॥
আমি জল নিতে যাই যমুনাতে তুমি বাজাও বাঁশি হে,
মনের ভুলে কলস ফেলে তোমার কাছে আসি হে,
শ্যাম দিন-দুপুরে গোকুলপুরে (আমার) দায় হল পথ চলা॥
আমার চারদিকেতে ননদ-সতীন দু’কূল রাখা ভার,
আমি সইব কত আর বাঁকা শ্যাম।
ওরা বুঝছে সবই নিত্যি-নতুন, (নিতি) মিথ্যে কথা বলা॥
কথার কুসুমে গাঁথা গানের মালিকা কার
কথার কুসুমে গাঁথা গানের মালিকা কার।
ভেসে এসে হতে চায় গো আমার গলার হার।।
আমি তারে নাহি জানি
তার সুরের সূত্রখানি,
তবু বিজড়িত হয় কেন গো, আমার কঙ্কনে বারবার।।
তার সুরের তুলির পরশে, ওঠে আমার ভুবন রাঙ্গি’,
কোন বিস্মৃত জনমের যেন কত স্মৃতি ওঠে জাগি’।
আমার রাতের নিদে
তার সুর এসে প্রাণে বিঁধে,
যার সুর এত চেনা, কবে দেখা পাবো সেই অচেনার।।
কথা কও, কও কথা, থাকিও না চুপ ক’রে
কথা কও, কও কথা, থাকিও না চুপ ক’রে।
মৌন গগনে হের কথার বৃষ্টি ঝরে।।
ধীর সমীরণ নাহি যদি কহে কথা
ফোটে না কুসুম, নাহি দোলে বনলতা।
কমল মেলে না দল, যদি ভ্রমর না গুঞ্জরে।।
শোন কপোতীর কাছে কপোত কি কথা কহে,
পাহাড়ের ধ্যান ভাঙি মুখর ঝর্ণা বহে।
আমার কথার লঘু মেঘগুলি হায়!
জ’মে হিম হয়ে যায় তোমার নীরবতায়;
এসো আরো কাছে এসো কথার নূপুর প’রে।।
গীতিচিত্রঃ অতনুর দেশ