কেমনে রাখি আঁখি–বারি চাপিয়া
প্রাতে কোকিল কাঁদে নিশীথে পাপিয়া।।
এ ভরা ভাদরে আমার মরা নদী
উথলি’ উথলি’ উঠিছে নিরবধি
আমার এ ভাঙা ঘটে, আমার এ হৃদিতটে
চাপিতে গেলে ওঠে দু’কূল ছাপিয়া।।
নিষেধ নাহি মানে আমার এ পোড়া আঁখি
জল লুকাবো কত কাজল মাখি’ মাখি’
ছলনা ক’রে হাসি, অমনি জলে ভাসি
ছলিতে গিয়া আসি ভয়েতে কাঁপিয়া।।
ক
কেমনে কহি প্রিয় কি ব্যথা প্রাণে বাজে
কেমনে কহি প্রিয় কি ব্যথা প্রাণে বাজে
কহিতে গিয়ে কেন ফিরিয়া আসি লাজে।।
শরমে মরমে ম’রে
গেল বনফুল ঝ’রে
ভীরু মোর ভালোবাসা শুকালো মনের মাঝে।।
আজিকে ঝরার আগে,
নিলাজ অনুরাগে
ধরিতে যে সাধ জাগে হৃদয়ে হৃদয় রাজে।।
কেন মেঘের ছায়া আজি চাঁদের চোখে
কেন মেঘের ছায়া আজি চাঁদের চোখে?
মোর বুকে মুখ রাখি ঝড়ের পাখি সম কাঁদে ওকে?
গভীর নিশীথের কন্ঠ জড়ায়ে
শ্রান্ত কেশভার গগনে ছড়ায়ে,
হারানো প্রিয়া মোর এলো কি লুকায়ে
আমার একা ঘরে ম্লান আলোকে॥
গঙ্গায় তারি চিতা নিভেছে কবে,
মোর বুকে সেই চিতা আজো জ্বলে নীরবে;
স্মৃতির চিতা তার নিভিবে না বুঝি আর
কোন সে জনমে কোন সে লোকে॥
কেন মনোরনে মালতী-বল্লরি দোলে- জানি না
কেন মনোরনে মালতী-বল্লরি দোলে- জানি না।
কেন মুকুলিকা ফুটে ওঠে পল্লব-তলে, জানি না।।
চৈতালি-চাঁপা কয়, মালতী শোন্
শুনেছিস্ বুঝি মধুকর গুঞ্জন,
তাই বুঝি এত মধু সুরভি উথলে-
মধু-মালতী বলে, জানি না, জানি না।।
কেন বাজাও বাঁশি কালোশশী মৃদু মধুর তানে
কেন বাজাও বাঁশি কালোশশী মৃদু মধুর তানে।
ঘরে রইতে নারি জ্ব’লে মরি বাজাইও না বনে
বাঁশি, আর বাজাইও না বনে
নিঝুম রাতে বাজে বাঁশি
পরায় গলে প্রেম-ফাঁসি,
কেহ নাহি জানে হে শ্যাম (আমি) মরি শুধু প্রাণে॥
রাখ রাখ ও-বাঁশরি
ওহে কিশোর-বংশীধারী,
মন নাহি মানে হে শ্যাম (বঁধু) বাঁশি কি গুণ জানে॥
কেন ফোটে কেন কুসুম ঝ’রে যায়
কেন ফোটে কেন কুসুম ঝ’রে যায়!
মুখের হাসি চোখের জলে ম’রে যায়, হায়।।
নিশীথে যে কাঁদিল প্রিয় ব’লে
হায় নিশি-ভোরে সে কেন হায় স’রে যায়।।
হায় আজ যাহার প্রেম করে গো রাজাধিরাজ
কাল কেন সে চির-কাঙাল ক’রে যায়।।
মান-অভিমান খেলার ছলে
ফেরে না আর যে যায় চ’লে
মিলন-মালা মলিন ধূলায় ভ’রে যায়।।
কেন চাঁদিনী রাতে মেঘ আসে ছায়া ক’রে
কেন চাঁদিনী রাতে মেঘ আসে ছায়া ক’রে।
সুখের বাসরে কেন, প্রাণ ওঠে বিষাদে ভ’রে।।
কেন মিলন রাতে, সলিল আঁখি পাতে,
কেন ফাগুন প্রাতে, সহসা বারি ঝরে।।
ডাকিয়া ফুলবনে, থাকে সে আনমনে,
কাঁদায় নিরজনে, কাঁদে কে কিসের তরে।।
কেন করুণ সুরে হৃদয় পুরে বাজিছে বাঁশরি
কেন করুণ সুরে হৃদয় পুরে বাজিছে বাঁশরি
ঘনায় গহন নীরদ সঘন নয়ন মন ভরি॥
বিজলি চমকে পবন দমকে পরান কাঁপে রে
বুকের বঁধুরে বুকে বেঁধে ঝুরে বিধুরা কিশোরী॥
কেন আসিলে ভালোবাসিলে দিলে না ধরা জীবনে যদি
কেন আসিলে ভালোবাসিলে দিলে না ধরা জীবনে যদি।
বিশাল চোখে মিশায়ে মরু চাহিলে কেন গো বে–দরদী।।
ছিনু অচেতন আপনা নিয়ে
কেন জাগালে আঘাত দিয়ে
তব আঁখিজল সে কি শুধু ছল একি মরু হায় নহে জলধি।।
ওগো কত জনমের কত সে কাঁদন করে হাহাকার বুকেরি তলায়
ওগো কত নিরাশায় কত অভিমান ফেনায়ে ওঠে গভীর ব্যথায়।
মিলন হবে কোথায় সে কবে কাঁদিছে সাগর স্মরিয়া নদী।।
কেন আন ফুল-ডোর আজি বিদয়-বেলা
কেন আন ফুল-ডোর আজি বিদয়-বেলা,
মোছ মোছ আঁখি-লোর যদি ভাঙিল মেলা॥
কেন মেঘের স্বপন আন মরুর চোখে,
ভু’লে দিয়ো না কুসুম যারে দিয়েছ হেলা॥
যবে শুকাল কানন এলে বিধুর পাখি,
ল’য়ে কাঁটা-ভরা প্রাণ এ কি নিঠুর খেলা।
যদি আকাশ-কুসুম পেলি চকিতে কবি,
চল চল মুসাফির, ডাকে পারের ভেলা॥