তৌহিদেরি বান ডেকেছে সাহারা মরুর দেশে

তৌহিদেরি বান ডেকেছে সাহারা মরুর দেশে
দুনিয়া জাহান ডুবু-ডুবু সেই স্রোতে যায় ভেসে।।
সেই জোয়ারে আমার নবী পারের তরী নিয়ে
‘আয় কে যাবি পারে’-ডাকে দ্বারে দ্বারে গিয়ে
যে চায় না তারেও নেয় সে নায়ে আপনি ভালবেসে।।
পথ দেখায় সে ঈদের চাঁদের পিদিম নিয়ে হাতে
হেসে,হেসে,দাঁড় টানে চা’র আসহাব তাঁরি সাথে।
নামাজ-রোজার,ফুল-ফসলে শ্যামল হ’ল মরু
প্রেমের রসে উঠল পুরে নীরস মনের তরু
খোদার রহম এলো রে আখেরি নবীর বেশে।।

তোরা সব জয়ধ্বনি কর!

তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
আস্‌ল এবার অনাগত প্রলয়–নেশায় নৃত্য–পাগল,
সিন্ধু–পারের সিংহ–দ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল!
মৃত্যু–গহন অন্ধকুপে, মহাকালের চন্ড–রূপে ধূম্র–ধূপে
বজ্র–শিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর!
ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
দ্বাদশ রবির বহ্নি–জ্বালা ভয়াল তাহার নয়ন–কটায়,
দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়!
বিন্দু তাহার নয়ন –জলে
সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে
কপোল–তলে!
বিশ্ব –মায়ের আসন তারই বিপুল বাহুর ‘পর –
হাঁকে ঐ “জয় প্রলয়ংকর!”
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
মাভৈঃ, ওরে মাভৈঃ, মাভৈঃ, মাভৈঃ জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে
জরায়–মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ–লুকানো ঐ বিনাশে।
এবার মহা–নিশার শেষে
আসবে ঊষা অরুণ হেসে
করুণ্ বেশে!
দিগম্বরের জটায় লুটায় শিশু–চাঁদের কর!
আলো তার ভরবে এবার ঘর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!

Categories

তোরা যারে এখনি হালিমার কাছে লয়ে ক্ষীর সর ননী

তোরা যারে এখনি হালিমার কাছে লয়ে ক্ষীর সর ননী
আমি খোয়াবে দেখেছি কাঁদিছে মা বলে আমার নয়ন-মণি॥
মোর শিশু আহমদে যেদিন কাঁদিয়া
হালিমার হাতে দিয়াছি সঁপিয়া
সেই দিন হ’তে কেঁদে কেঁদে মোর কাটিছে দিন রজনী॥
পিতৃহীন সে সন্তান হায় বঞ্চিত মা’র স্নেহে
তারে ফেলে দূরে কোল খালি করে (আমি) থাকিতে পারি না গেহে।
অভাগিনী তার মা আমিনায়
মনে করে সে কি আজো কাঁদে হায়
বলিস তাহারি আসার আশায় দিবানিশি দিন গণি॥

তোরা বলিস্ লো সখি, মাধবে মথুরায়

তোরা বলিস্ লো সখি, মাধবে মথুরায়
কেমনে রাধার কাঁদিয়া বরষ যায়॥
খর-বৈশাখে কি দাহন থাকে বিরহিণী একা জানে
ঘৃত-চন্দন পদ্ম পাতায় দারুণ দহন-জ্বালা না জুড়ায়
‘ফটিক জলে’র সাথে আমি কাঁদি চাহিয়া গগন-পানে।
জ্বালা না জুড়ায় গো –
হরি-চন্দন বিনা ঘৃত-চন্দনে জ্বালা না জুড়ায় গো
শ্যাম-শ্রীমুখ-পদ্ম বিনা পদ্ম পাতায় জ্বালা না জুড়ায়॥
বরষায় অবিরল ঝর ঝর ঝরে জল জুড়াইল জগতের নারী
রাধার গলার মালা হইল বিজলি-জ্বালা তৃষ্ণা মিটিল না তা’রি!
সখি রে, তৃষ্ণা মিটিল না তা’রি।
প্রবাসে না যায় পতি সব নারী ভাগ্যবতী বন্ধু রে বাহুডোরে বাঁধে
ললাটে কাঁকন হানি’ একা রাধা অভাগিনী প্রদীপ নিভায়ে ঘরে কাঁদে।
জ্বালা তা’র জুড়ালো না জলে গো
শাওনের জলে তা’র মনের আগুন দ্বিগুণ জ্বলে গো
কৃষ্ণ-মেঘ গেছে চ’লে, অকরুণ অশনি হানিয়া হিয়ায় (সখি)॥
আশ্বিনে পরবাসী প্রিয় এলো ঘরে গো মিটিল বধূর মন-সাধ (সখি রে)
রাধার চোখের জলে মলিন হইয়া যায় কোজাগরী চাঁদ (মলিন হইয়া যায় গো)।
আগুন জ্বালালে শীত যায় নাকি রাধার কি হ’ল হায়
বুক ভরা তার জ্বলিছে আগুন তবু শীত নাহি যায়।
যায় না, যায় না আগুন জ্বলে –
বুকের আগুন জলে, তবু শীত যায় না, যায় না,
শীত যদি বা যায় নিশীথ না, যায় গো
যায় না, যায় না, রাধার যে কি হ’ল হায়॥
কলিয়া কৃষ্ণ-ছূড়া, ছড়ায়ে ফাগের গুঁড়া আসিল বসন্ত
রাধা-অনুরাগে রেঙে কে ফাগ খেলিবে গো, নাই ব্রজ-কিশোর দুরন্ত।
মাধবী-কুঞ্জে কুহু কুহরিছে মুহুমুহু ফুল-দোলনায় সবে দোলে,
এ মধু মাধবী রাতে রাধার মাধব নাই
দুলিবে রাধা কার কোলে সখি রে – রাধা দোলে কার কোলে গো
শ্যাম-বল্লভ বিনা রাধা দোলে কার কোলে গো, বল্ সখি, দোলে কার কোলে।
ফুল-দোলে দোলে সবে পিয়াল-শাখে
রাধার প্রিয়া নাই, বাহু দু’টি দিয়া বাঁধিবে কাহাকে,
ঝরা-ফুল-সাথে রাধা ধূলাতে লুটায়॥

Categories

তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে

তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে
মধু পূর্ণিমারি সেথা চাঁদ দোলে
যেন ঊষার কোলে রাঙা-রবি দোলে।।
কূল মখ্‌লুকে আজি ধ্বনি ওঠে, কে এলো ঐ
কলেমা শাহাদাতের্‌ বাণী ঠোঁটে, কে এলা ঐ
খোদার জ্যোতি পেশানিতে ফোটে, কে এলো ঐ
আকাশ-গ্রহ-তারা পড়ে লুটে, কে এলা ঐ
পড়ে দরুদ ফেরেশ্‌তা, বেহেশ্‌তে সব দুয়ার খোলে।।
মানুষে মানুষের অধিকার দিল যে-জন
‘এক আল্লাহ্‌ ছাড়া প্রভু নাই’ কহিল যে-জন,
মানুষের লাগি’ চির-দীন্‌ বেশ ধরিল যে-জন
বাদশা ফকিরে এক শামিল করিল যে-জন
এলো ধরায় ধরা দিতে সেই সে নবী
ব্যথিত-মানবের ধ্যানের ছবি
আজি মাতিল বিশ্ব-নিখিল্‌ মুক্তি-কলোরোলে।।

তেপান্তরের মাঠে বঁধু হে একা বসে থাকি

তেপান্তরের মাঠে বঁধু হে একা বসে থাকি।
তুমি যে পথ দিয়ে গেছ চলে তারি ধূলা মাখি’ হে।।
যেমন পা ফেলেছ গিরিমাটির রাঙা পথের ধূলাতে,
অমনি করে আমার বুকে চরণ যদি বুলাতে,
আমি খানিক জ্বালা ভুলতাম ঐ মানিক বুকে রাখি’ হে।।
আমার খাওয়া পরার নাই রুচি, আর ঘুম আসে না চোখে হে,
আমি আউরী হয়ে বেড়াই পথে, হাসে পাড়ার লোকে
দেখে হাসে পাড়ার লোকে।
আমি তাল পুকুরে যেতে নারি – একি তোমার মায়া হে,
আমি কালো জলে দেখি তোমার কালো রূপের ছায়া হে;
আমার কলঙ্কিনী নাম রটিয়ে তুমি দিলে ফাঁকি হে।।

Categories

তৃষিত আকাশ কাঁপে রে

তৃষিত আকাশ কাঁপে রে।
প্রখর রবির তাপে রে।।
চাহিয়া তৃষ্ণার বারি
চাতক ওঠে ফুকারি’
করুণ-শান্ত বিলাপে রে।।
রুদ্রযোগী ও-কে দূর বিমানে,
নিমগ্ন রহিয়াছে যেন ধ্যানে।
শকুন্তলা সম ভয়ে
কাঁপে ধরা র’য়ে র’য়ে,
অগ্নি-ঋষির অভিশাপ রে।।

Categories

তুমি হাতখানি যবে রাখ মোর হাতের পরে

তুমি হাতখানি যবে রাখ মোর হাতের পরে
মোর কণ্ঠ হ’তে সুরের গঙ্গা ঝরে।।
তব কাজল-আঁখির ঘন পল্লব তলে
বিরহ মলিন ছায়া মোর যবে দোলে
তব নীলাম্বরীর ছোঁয়া লাগে যেন সেদিন নীলাম্বরে।।
যেদিন তোমারে পাই না কাছে গো পরশন নাহি পাই,
মনে হয় যেন বিশ্ব ভুবনে কেহ নাই, কিছু নাই।
অভিমানে কাঁদে বক্ষে সেদিন বীণ
আকাশ সেদিন হয়ে যায় বাণী হীন
যেন রাধা নাই, আর বৃন্দাবনে গো সব সাধ গেছে ম’রে।।

Categories

তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সে কি মোর অপরাধ?

তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সে কি মোর অপরাধ?
চাঁদেরে হেরিয়া কাঁদে চকোরিণী বলে না তো কিছু চাঁদ।।

চেয়ে’ চেয়ে’ দেখি ফোটে যবে ফুল

ফুল বলে না তো সে আমার ভুল

মেঘ হেরি’ ঝুরে’ চাতকিনী, মেঘ করে না তো প্রতিবাদ।।
জানে সূর্যেরে পাবে না তবু অবুঝ সূর্যমুখী
চেয়ে’ চেয়ে’ দেখে তার দেবতারে দেখিয়াই সে যে সুখী।

হেরিতে তোমার রূপ–মনোহর

পেয়েছি এ আঁখি, ওগো সুন্দর।
মিটিতে দাও হে প্রিয়তম মোর নয়নের সেই সাধ।।

Categories

তুমি সুন্দর কপট হে নাথ

তুমি সুন্দর কপট হে নাথ!মায়াতে রাখ বিভোর।
তোমার ছলনা যে বোঝে না নাথ সেই সে দুঃখী ঘোর।।
কত শত রূপে নিঠুর আঘাতে
তুমি চাও নাথ তোমারে ভোলাতে
তবু যে তোমারে ভুলিতে পারে না ধরা দাও তারে চোর।।
কাঁদাও তাহারে নিশিদিন তুমি যপে যে তোমার নাম
তোমারে যে চাহে শত বন্ধনে বাঁধ তারে অবিরাম।
সাগরে মিশাতে চায় বলে নদী
জনম গোঁয়ায় কেঁদে নিরবধি
ভক্তে তেমনি দিয়াছ যে নাথ অসীম আঁখি – লোর।।

Categories